হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর তিরোভাব
হজ্জ শেষে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মদীনা শরীফে ফিরে আসলেন। এর মাস দেড়েক পর, হিজরী একাদশ বর্ষের সফর মাসের মাঝামাঝি তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর প্রবল জ্বর ও তৎসঙ্গে অসহ্য পেটের বেদনা দেখা দিল। বিদায়ী হজ্জের আরাফাতের ময়দানে যখন তিনি খুৎবাহ শেষ করেন তখন তাঁর নিকট নাযিল হয় নিম্নোক্ত সুপবিত্র আয়াত-অদ্য আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ এবং তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ পরিসমাপ্ত করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্মরূপে মনোনীত করেছি।
তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়েছেন এবং তাঁর পবিত্র ব্রত শেষ হয়েছে। শীঘ্রই তাঁকে ইহলোক ত্যাগ করতে হবে।
তখন হতেই তাঁর চিন্তা ও কার্যধারায় এক অভিনব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। তাঁর সকল ধ্যান ধারণা পরলোকের সম্বদ্ধে কেন্দ্রভূত হয়।
এতদিন পর্যন্ত মহানবী (সাঃ) নিজেই নামাজে ইমামতি করছিলেন। শেষ সোমবার প্রত্যুষে ফজরের আযানের শব্দে তিনি নামাযে যোগ দিবার জন্য উঠতে চেষ্টা করলেন কিন্তু দুর্বলতাবশত সমর্থ হলেন না। মসজিদ সংলগ্ন খোলা দরজা দিয়ে তিনি নামাজরত মুসল্লীদের প্রতি লক্ষ্য করে এক গভীর আনন্দ অনুভব করলেন। অনাগত ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল চিত্র তাঁর চক্ষুর সম্মুখে ভেসে উঠল, তাঁর ম্লানমুখে হাসির রেখা দেখা দিল। সকাল বেলাটা বেশ ভালভাবে কেটে গেল। মনে হল, রাসূলে পাক (সাঃ) আরোগ্য লাভ করবেন। সকলেই শোকর গোজারী করতে লাগলেন। কিন্তু অপরাহ্নে তাঁর অবস্থা আকস্মাৎ সঙ্কটাপন্ন হল এবং তিনি সম্পুর্ণরূপে নিস্তেজ ও অবসন্ন হয়ে পড়লেন। তিনি পুনঃ পুনঃ অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবার জ্ঞান লাভের পর বলছেন ইয়া আমার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু! পরম সুহৃদ!
অতঃপর হিজরী একাদশ বর্ষে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ই তারিখ সোমবার অপরাহ্নে তাঁর প্রিয়তমা পত্নী হযরত আয়েশার বক্ষে মস্তক রেখে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) চির নিদ্রায় নিদ্রিত হলেন (ইন্নালিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন)।