কিবলা পরিবর্তনের কাহিনী-শেষ পর্ব
এমনিভাবে ফিরবে যেন কাতার সমূহের তরতীব (সিরিয়াল) ঠিক থাকে। অর্থাৎ বয়স্ক পরুষগণ ইমামের পেছনে এবং তারপর শিশু ও তারপর মহিলার কাতার থাকে। এ আদেশের সঙ্গে সঙ্গে রাসূল (সাঃ) সমস্ত মুসল্লী উত্তর দিক হতে দক্ষিণ দিকে ছফের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে ফিরে গেলেন। অবশিষ্ট দু’রাকাত কা’বামুখী হয়ে আদায় করলেন।
উল্লেখ্য যে, তখনকার যুগে নামজের সংশোধনের জন্য নামাজ সংক্রান্ত কথা নামজের মধ্যে বলা জায়েজ ছিল।
এ মসজিদের একই নামজ দু’ কিবলার দিকে ফিরে আদায় করার কারণে তাকে মসজিদে কিবলাতাইন বলে। তারপর আছরের নামাজ মসজিদে নববীতে কা’বার দিকে মুখ করে আদায় করা হয়। যেখান হতে কা’বার অধিবাসী উব্বাদ বিন নছীক রাসূল (সাঃ)-এর সাথে আছরের নামাজ কা’বা ঘরের দিকে মুতাওয়াজ্জাহ হয়ে আদায় করার পর নিজ মহল্লাতে ছুটে গেলেন।
ফজরের জামাতে মসজিদে কুবায় আরম্ভ হয়ে এক রাকাত পড়ার পর সে ব্যক্তি মসজিদে পৌঁছে। তখন সেখানকার লোকজন বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী ছিল। ওব্বাদ বিন সাইফ নামাজের মধ্যেই তাদেরকে কিবলার সংবাদ পৌঁছিয়ে দিলেন। তারা এ সংবাদ শুনে নামাজের ভিতরই কাবার দিকে ঘুরে গেল এবং দ্বিতীয় রাকাত কাবা অভিমুখী হয়ে আদায় করল। এ কারণে কেউ কেউ মসজিদে কুবাকেও মসজিদে কিবলাতাইন অর্থাৎ কিবলার মসজিদ বলে। বস্তুতঃ দু’কিবলার মসজিদ হচ্ছে বনী ছালেমার মসজিদ।
ইহুদীগণ বলতে লাগল দেখ, মুহাম্মাদ এখন পিতৃপুরুষের কিবলা মেনে নিয়েছে। ক্রমান্বয়ে তাদের মূর্তি পূজার ধর্মও মেনে নিবে।
মনাফিগণ বলতে লাগল, মুহাম্মাদ তাঁর ধর্ম নিয়ে নিজেই সন্দেহের মধ্যে আছে। কোন দিকে মুখ ফিরাবার তাই নির্ণয় করতে পারছে না। যদি প্রথম কিবলা বরহক হয়ে থাকে তাহলে এখন ভুলের মধ্যে আছে। আর যদি বর্তমান কিবলা ঠিক হয়ে থাকে তাহলে পূর্বে মিথ্যার অনুসারী ছিল। মুনাফিকদের প্রতারণায় কিছু সংখ্যক দুর্বল ইমানদারদের অন্তরেও সংশয়ের ছায়াপাত হল। ফলে কিছু সংখ্যক মুসলমান মুরতাদ হয়ে গেল।
তারা ইসলাম ধর্ম হতে ফিরে গেল কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার মুসলমানগণের অন্তরে কোন প্রকার দ্বিধা বা সংশয় বিন্দুমাত্র স্থান পায় নি। তারা বিনা দ্বিধায় তা মেনে নিল। এভাবে কিবলা পরিবর্তনের দ্বারা ঈমানের এক কঠিন পরীক্ষা হয়ে গেল। ঈমান ও কুফরের মধ্যে সীমারেখা প্রতিষ্ঠিত হল।