হজরত ঈসা (আঃ)- এর আর্বিভাব-পর্ব ৫

হজরত ঈসা (আঃ)- এর আর্বিভাব-পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

তিনি আমাকে কিতাব দান করেছে। তিনি আমাকে নামাজ ও যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে মায়ের অনুগত করেছেন, আমাকে তিনি নাফরমান ও পাপীদের অন্তভুক্ত করেন নি। যেদিন আমার জন্ম হয়েছে সেদিন আমার  মৃত্যু হবে এবং সেদিনই আমাকে পুনরুত্থান করা হবে। অতপর শেষ দিন পর্যন্ত আমার প্রতি আল্লাহ তায়ালার ছালামত বজায় থাকবে। তোমরা আমার দাওয়াত কবুল করার জন্য প্রস্তুত হও। আমি অতি শীঘ্রই দাওয়াত পৌঁছে দেব। বনি ইসরাইলেরা নবজাতকের মুখে সে সমস্ত দামি কথাবার্তা শুনল তাতে তারা অবাক হল। সকলে হতভম্ব হয়ে গেল।  

কিছুক্ষন পূর্বে যে শিশুর জন্ম হল তাঁর মুখে এ ধরনের বক্তব্য পেশ করা এক নজির বিহীন ঘটনা। সে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার নবী হবে। এ কথা ভেবে সকলে নির্বাক হয়ে গেল। কার মুখ থেকে আর টু শব্দটি বের হল না, মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। হাজার হাজার মানুষ এই দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে জমায়েত হল। লোকজন দোলনার কাছে গিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) এর কচি কণ্ঠে আল্লাহর বানি শুনে সকলেই মোহিত হল। নিন্দুকেরা এ অলৌকিক দৃশ্য দেখে মুখে কাপড় দিয়ে পালিয়ে যেতে লাগল। আর যারা ঈমানদার ও আস্থাশীল ছিল তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তৌরাত কিতাব পাঠ শুনে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তন্ময় হয়ে রইল। দীর্ঘ সময় পর হযরত মারইয়াম সকলকে বলল, আপনারা আজকে বিদায় হন। 

আপনারা  প্রতিদিন ভোর বেলা এসে আমার ছেলের মুখ থেকে তেলাওয়াত শুনে যাবেন। বাকি সময় তাঁকে নির্ভিতে ধ্যানমগ্ন থাকার সুযোগ দিন। নবজাত সাধারণ মানুষ নয় সে একজন আল্লাহর খাস নবী। একদিন সে সারা পৃথিবী ব্যাপী দ্বীনের দাওয়াত পেশ করবেন। সে দিন তাঁর প্রাচারিত দ্বীন গ্রহন করা জন্য তোমরা প্রস্তুত হও। হযরত ঈসা (আঃ) সবাই কে তৌরাত কিতাব পাঠ করে শুনালেন। তাঁর পরে তিনি দ্বীনের মছলা মাছায়েল আলোচনা আরম্ভ করলের এর পরে তিনি সাবালোক হলেন তখন তাঁর প্রতি  আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে ওহী নাজিল হল। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশক্রমে তিনি নতুন করে দ্বীনের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। ইহুদিরা তখন বলল, হে ঈসা! এতদিন আপনি আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের পরিবর্তে নিজে এক নতুন ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হলেন এটা আপনার পক্ষে উচিৎ নয়। নবী বললেন; আমি যা কিছু করছি সবই আল্লাহ তায়ালার নির্দেশক্রমে করছি। 

যুগের প্রয়োজনে আল্লাহ তায়ালা আমাকে এ নতুন ধর্মের তালীম দানের নিমিত্ত আমাকে নবী করে প্রেরণ করেনছেন। এর কোন বিল্পল নেই।  অতএব তোমাদের এই ধর্মের দাওয়াত কবুল করে মুক্তি লাভের চেষ্টা করতে হবে।  অন্যথায় তোমরা না-ফরমানের অন্তুভুক্ত হবে। 

নবীর হেদায়েতী বাণী শুনে অনেকে তাঁর প্রতি ঈমান আনল।  বাকি কতক বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করে প্রবর্তিত ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি নই।  নবী তাদের আরও অনেক বুঝালেন।  কিন্তু তারা সম্মতি দিল না।  ঘাড় বাকিয়ে চলে গেল।  নবী নিজ দায়িত্ব সম্পাদনের লক্ষ্যে দ্বারে দ্বারে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন।  কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা গ্রহন করত রাজি হল না।  এ অবস্থা দেখে তিনি খুবই নিরুৎসাহ হলেন। 

দীর্ঘ দ্বীন প্রাণপণ চেষ্টা করার পরেও যখন আশানুরুপ ফল তিনি পেলেন না তখন তিনি শহর ছেড়ে গাঁয়ের দিকে রওয়ানা  করলেন। গায়ের পথে এসে একদল ধোপা কাপড় পরিষ্কার করছে। তিনি তাদের কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কাপড় পরিষ্কার করছ  কিন্তু তোমাদের অন্তর যে অপরিষ্কার হয়ে আছে সে খবর রাখ।  তারা বলল, হুজুর! আমরা অন্তর পরিষ্কার সম্বন্ধে কোন জ্ঞান রাখি না। এ বিষয় আপনি আমাদেরকে কিছু বলুন। তখন নবী তাদেরকে অন্তরের ময়লা ও অজ্ঞতা সম্বন্ধে যখন বুঝালেন তখন তাঁর নবীর দাওয়াত কবুল করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল। অতপর তারা শরীয়তের মছলা-মছায়েল সম্বন্ধে  শিক্ষা গ্রহন করল। ধোপাদের মধ্যে অধিকাংশ যখন ঈমান আনল তখন নবী সেখান থেকে অন্যত্র রওয়ানা করলেন। 

হজরত ঈসা (আঃ)- এর আর্বিভাব-পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।