চাঁদরের ভিতর আজব মহল

হযরত সাহাল বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি একদিন অযু করে জামে মসজিদে গেলাম। মসজিদে গিয়ে দেখলাম মসজিদে লোকজনে ভরে গেছে। ইমাম সাহেবও খুৎবার জন্য মিম্বরে উঠে গেছেন। এ অবস্থায় আমি বেআদবী করে লোকজনের উপর দিয়ে তাদেরকে অতিক্রম করে একেবারে প্রথম কাতারে গিয়ে বসলাম।

আমার সোজা পিছনে উলের চাদর পরিহিত এক যুবককে দেখতে পেলাম। তার গা থেকে তখন আতরের সুঘ্রান আসছিল। সে আমাকে দেখে বলে উঠল, কেমন আছেন হে সাহাল! আমি বললাম, ভাল।আল্লাহ তোমাকে সুখী করুন।;

কিন্তু আমার কেবল পেরেশানী হচ্ছিল এই কারণে যে, লোকটি আমাকে চিনে অথচ আমি তাকে চিনি না, জানি না। আমি কেবল এ কথাই চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ আমার প্রচন্ড পেশাবের বেগ হলো। এখন আমার কেবল এই চিন্তা, আমি যদি এখন পোশাকের জন্য যাই তাহলে আবার লোকজন-কে অতিক্রম করতে হবে। আর যদি না যাই তাহলে নামায পড়া সম্ভব হবে না। আমার এই বিষন্নতা দেখে, সে আমাকে বলে উঠল, জনাব পেশাবের কষ্ট হচ্ছে? আমি বললাম, জি-হ্যাঁ, জনাব। তখন সে তার কাধেঁর চাদরখানা নামিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল, জলদি করে হাজত শেষ করে এস নামাযে শরীক হোন।

আমার চক্ষুগুলো তখন বন্ধ হয়ে গেল। আমি যখন চোখ খুললাম তখন আমি বিস্ময়ে হতবাক। এ আমি কি দেখলাম? ইয়া বিশাল দরজা, দরজায় একজন লোক দাড়িয়ে আছে। সে আমাকে বলছে, ভিতরে আসুন।

আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম তখন একটা সুন্দর জাক-জমকপূর্ন মহল আমার চোখে পড়ল। তার এক পাশে একটি বৃক্ষ, তার পাশে একটা পানি ভর্তি বদনা রয়েছে। বদনার পানিটা মধুর চেয়েও মিষ্ট মনে হলো। সঙ্গে একটা পেশাবখানাও রয়েছে। বদনার পানিটা মধুর চেয়েও মিষ্ট মনে হলো। সঙ্গে একটা পেশাবখানাও রয়েছে। সেখানে মেসওয়াক ও রুমাল ছিল। আমি জামা খুলে প্রথমে পেশাব করলাম।
অতঃপর যখন অযু শেষ করলাম তখন ঐ যুবকের আওয়াজ শুনতে পেলাম, যদি তুমি তোমার কাজ সেরে ফেলে থাক তাহলে বল, আমি বললাম, হ্যাঁ কাজ শেষ হয়েছে। সে তখন আমার গা থেকে তার চাদরটা খোলে ফেলল। আশ্চর্য! তখন আমি দেখতে পেলাম যে, আমি মসজিদের যেখানে বসাছিলাম সেখানেই বসে আছি। এ ঘটনা আর কেউ জানতে পারলো না।
তখন আমি কেবল এই চিন্তায়-ই মগ্ন ছিলাম যে, ব্যাপারটা কি হলো? আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একবার সব সত্য মনে হচ্ছিল। আরেকবার সব মিথ্যা মনে হচ্ছিল। ততক্ষনে জামাত দাড়িয়ে গেল। লোকজনের সঙ্গে আমিও জামাতে নামায আদায় করলাম। নামাযে কেবল সেই যুবকের কথাই মনে হলো, কিন্তু তখনও আমি তাকে চিনতে পারছিলাম না। নামায শেষে আমি তার পিছু নিলাম। যেতে যেতে সে একটা ঘরে প্রবেশ করল এবং আমার দিকে চেয়ে বলতে লাগল, হে সাহাল! এতক্ষন যা কিছু দেখলে, মনে হয় তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? আমি বললাম, হ্যাঁ ভাই! একেবারেই বিশ্বাস হচ্ছেনা। সে বলল, ঠিক আছে ঘরে প্রবেশ কর।
আমি তখন দেখলাম, ঠিক সে দরজাটিই। যখন ভেতরে প্রবেশ করলাম, তখন দেখতে পেলাম, ঠিক সেই স্থানটিই, বৃক্ষ-বদনা-মেসওয়াক-রুমাল সবই ঠিক আছে। আমি বললাম, হ্যাঁ সবই বিশ্বাস হচ্ছে। অতঃপর সে বলল, হে সাহাল! শুন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে, সব বস্তুই তার অনুসারী হয়ে যায়। হে সাহাল! যদি তুমি তাকে তালাশ করো তাহলে মনে রাখবে, তুমি তাকে পেয়ে যাবেই।
এ কথা শুনামাত্র আমার চক্ষু অশ্র“তে ভরে গেল। আর সে আমার চক্ষুগুলো তার নিজের হাত দিয়ে মুছে দিল। যখন আমি চোখ খুললাম তখন আর তাকে দেখতে পেলাম না এবং সেই সঙ্গে মহল, বৃক্ষ, বদনা, মেসওয়াক সব আবার হারিয়ে গেল। তার এমনিভাবে চলে যাওয়ায় আমি অনেকক্ষণ যাবৎ হয়রান অবস্থায় পড়ে রইলাম। এরপর আমি আমার বাড়ী চলে এলাম।

দুঃখিত!