আসহাবে সুফফা (রাঃ)
মসজিদে নবনীর একটি বারান্দা করা হল। তাতে প্রায় দেড়শত গরীব নিরাশ্রয় ও স্ত্রী-পুত্রহীন সাহাবী অবস্থান করতেন। তাঁরা সর্বক্ষণ ওহী শ্রবণের জন্য আল্লাহর রাসূলের সম্মুখে উপস্থিত থাকতেন। যখন যে ওহী এবং নির্দেশ হযরত রাসূলে পাক (সাঃ)-এর উপর নাযিল হত তখন তাঁরা তা কন্ঠস্থ করে নিতেন। এভাবে ওহী তথা দ্বীন ইসলামের পূর্ণ হেফাজত তাঁদের দ্বারা হত। কারোও নিকট সওয়াল করারও নিষেধ ছিল। কেবল আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজেকে চব্বিশ ঘণ্টা ওয়াকফ করে থাকাই ছিল তাঁদের দায়িত্ব। এজন্য তাঁদেরকে অনেক সময় একাধারে এক সপ্তাহও অনাহারে কাটাতে হত। ক্ষুধার জ্বালায় সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতে পড়ে যেত। অপরাপর মানুষ মনে করত তাঁদের মৃগী রোগ হয়েছে। তাই তাঁদের গর্দানে পা দ্বারা চাপ দিয়ে ধরত। কেউ বা অন্যভাবে মৃগী রোগের তদবীর করত। কিন্তু তাঁদের প্রকৃত রোগ সম্বন্ধে কেউ অবগত ছিল না। তাঁদের পরিধেয় বস্ত্রের যথেষ্ট অভাব ছিল। একটি চাদর অধিক কারোও ছিল না। আনসারগণ খেজুরের কাঁদি এনে মসজিদে লটকিয়ে রেখেছিল। তা হতে মাটিতে খেজুর ঝরে পড়ত। সে দরিদ্র সাহাবীগণ তা ভক্ষণ করতেন। এ সাহাবীগণকে আসহাবে সুফফা বলা হত। তাদেরকে জরুরি অবস্থায় দ্বীনের কাজে ব্যবহার করা হত। বিভিন্ন সারিয়াতে প্রেরণ করা হত। তিন হিজরীতে ওহুদের যুদ্ধের পর বীরে মাউনের যুদ্ধে আসহাবে সুফফার সত্তর জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন।
হযরত ছায়াদ বিন ওবায়দা (রাঃ) একজন ধনী, হৃদয়বান এবং দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। সাদকার মাল আসলে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাদেরকে তা হতে দান করতেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) আসহাবে একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। তিনি সপ্তম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
আসহাবে সুফফা আল্লাহর রাসূলের জন্য কুরবান হতে সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। রাসূল (সাঃ) স্বীয় জান মাল হতে অধিক মুহাব্বত করতেন। অপর পক্ষে রাসূল আকরাম (সাঃ) তাদেরকে স্বীয় আওলাদ- ফরজন্দ হতে অধিক ভালবাসতেন। একবার হযরত ফাতিমা (রাঃ) এসে বললেন, হে প্রাণের আব্বাজান! সর্বদা যাতা পিষতে পিষতে আপনার দুলালী ফাতেমার হাতে কড় পড়ে গেছে। আমাকে একজন দাসী দিন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমার আসহাবে সুফফা ক্ষুধায় মরবে আর আমি তোমাকে দাসী দিব তা কখনও হতে পারে না।