ছোটো নদীটি বহিয়া যাইতেছিল, এবং প্রথম গ্রীষ্মের শীতল প্রভাতবায়ুতে কৈলু গাছের রক্তবর্ণ পুষ্পমঞ্জরী হইতে ফুল ঝরিয়া পরিতেছিল ।
গাছের তলায় বসিয়া জুলিখা আমিনাকে কহিল , “ ঈশ্বর যে আমাদের দুই ভগ্নীকে মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা করিয়াছেন, সে কেবল পিতার হত্যার প্রতিশোধ লইবার জন্য । নহিলে আর তো কোনো কারণ খুঁজিয়া পাই না । ”
আমিনা নদীর পরপারে সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী , সর্বাপেক্ষা ছায়াময় বনশ্রেণীর দিকে দৃষ্টি মেলিয়া ধীরে ধীরে কহিল , “ দিদি , আর ও-সব কথা বলিস নে, ভাই । আমার এই পৃথিবীটা একরকম বেশ লাগিতেছে । মরিতে চায় তো পুরুষগুলো কাটাকাটি করিয়া মরুক গে , আমার এখানে কোনো দুঃখ নাই । ”
জুলিখা বলিল , “ ছি ছি আমিনা , তুই কি শাহজাদার ঘরের মেয়ে । কোথায় দিল্লির সিংহাসন আর কোথায় আরাকানের ধীবরের কুটির। ”
আমিনা হাসিয়া কহিল , “ দিদি , দিল্লির সিংহাসনের চেয়ে আমার বুঢ়ার এই কুটির এবং এই কৈলু গাছের ছায়া যদি কোনো বালিকার বেশি ভালো লাগে, তাহাতে দিল্লির সিংহাসন এক বিন্দু অশ্রুপাত করিবে না । ”
জুলিখা কতকটা আনমনে কতকটা আমিনাকে কহিল , “ তা, তোকে দোষ দেওয়া যায় না , তুই তখন নিতান্ত ছোটো ছিলি – কিন্তু একবার ভাবিয়া দেখ্, পিতা তোকে সব চেয়ে বেশি ভালোবাসিতেন বলিয়া তোকেই স্বহস্তে জলে ফেলিয়া দিয়াছিলেন । সেই পিতৃদত্ত মৃত্যুর চেয়ে এই জীবনকে বেশি প্রিয় জ্ঞান করিস না । তবে যদি প্রতিশোধ তুলিতে পারিস তবেই জীবনের অর্থ থাকে । ”
আমিনা চুপ করিয়া দূরে চাহিয়া রহিল। কিন্তু বেশ বুঝা গেল , সকল কথা সত্ত্বেও বাহিরের এই বাতাস এবং গাছের ছায়া এবং আপনার নবযৌবন এবং কী একটা সুখস্মৃতি তাহাকে নিমগ্ন করিয়া রাখিয়াছিল ।
কিছুক্ষণ পরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কহিল , “ দিদি , তুমি একটু অপেক্ষা করো ভাই। আমার ঘরের কাজ বাকি আছে । আমি না রাঁধিয়া দিলে বুঢ়া খাইতে পাইবে না । ”
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।