হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে গমন- শেষ পর্ব
হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে গমন-পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ যদি বাস্তবিক ঈসা হত তাহলে প্রহরীরা এবং তার মতাবলম্বীরা অবশ্যই তার সঙ্গে থাকত। কিন্তু এর সাথে কাউকে দেখছি না। অতএব আমাদের মনে হয়ে আমাদের সর্দারের উপর অবশ্যই যাদু করা হয়েছে। সইউ জনতার মারমুখী অবস্থা দেখে দেঁদে দিল এবং চিৎকার দিয়ে বার বার বলতে লাগল, ভাইসব! আমি খোদার কছম খেয়ে বলছি, আমি তোমাদের সর্দার সইউ। আমার চেহারার কি পরিবর্তন ঘটেছে তা আমার জানা নেই। আমি তা দেখি না। যদি তোমরা আমাকে অন্য রকম দেখে থাক, তবে এটা হযরত ঈসার খোদার কীর্তি। আমার বিশ্বাস ঈসা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার সঠিক নবী। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা নিরাপদ রাখার জন্য হয়ত তিনি কোন কুদরতী খেলা খেলেছেন। সইউ যখন ঈসাকে আল্লাহর নবী বলে উক্তি করল তখন কাফেররা চরম ক্ষিপ্ত হল। আর কাল বিলম্ব না করে সইউকে শূলে চড়িয়ে দিল। সইউ বাঁচাও বাঁচাও বলে কয়েকটি চিৎকার দিয়ে চিরদিনের জন্য নিরব হয়ে গেল। তার প্রাণবায়ু বিদায় হয়ে গেল।
এ দৃশ্য দেখার জন্য অসংখ্য জনতা সেখানে ভীড় করেছিল। সইউ শূলে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার পরে সকলে তার দিকে চেয়ে দেখল। তাদের সর্দার সইউকে শূলে বিদ্ধ করা হয়েছে। তখন তাদের নিজেদের মধ্যে ভীষণ বিবাদ ও তলোয়ারবাজি আরম্ভ হল। অধিকাংশ লোক বিমর্ষ হয়ে পড়ল। সইউর মৃত্যুর পূর্বে তাকে হযরত ঈসা (আঃ) এর ন্যায় দেখাচ্ছিল। কেউ তাকে সইউ বলে চিহ্নিত করতে পারে নি। আর মৃত্যুর পরে তার চেহারার পরিবর্তন হয়ে সে সইউর রূপ নিল। এটা ছিল আল্লাহর এক অদৃশ্য লীলা। এ অবস্থা দর্শন করে হযরত ঈসা (আঃ) এর অনুপস্থিতিতে বহুলোক হযরত ঈসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনল। তারা কালেমা পাঠ করল এবং হযরত ঈসার শরীয়তের উপর জীবন যাপন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হল। কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) এখন কোথায় আছে তা নিয়ে অনেকে চিহ্নিত হয়ে পড়লেন। অনেকে তার সন্ধানে ব্যস্ত হলেন।
অনেকে নবীর খলিফা ও মুসলমানদের নিকট নবীর খবর জানতে চাইলে তারা বলে দিলেন যে, নবীকে আল্লাহ তায়ালা আসমানে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। তাকে আল্লাহ তায়ালা আর একবার পৃথিবীতে প্রেরণ করবেন। তবে তার নির্দিষ্ট তারিখ কারো জানা নেই। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। শেষ জামানায় পৃথিবীতে দাজ্জাল নামক এক শতিশালী কাফের আবির্ভূত হয়ে চমক লাগানো কিছু দৃশ্য যখন মানুষকে দেখাবে, তাদের মৃত পিতা মাতাকে হাজির করে দেবে তখন মানুষ তার দাসত্ব গ্রহণ করে ঈমান হারাতে থাকবে। এ সময় হযরত ঈমাম মাহাদী নামক আল্লাহ তায়ালার এক খাস বান্দা নাজিল হয়ে দাজ্জালের কবল থেকে মানুষকে উদ্ধার করবে। দাজ্জালের সাথে তিনি জেহাদ করবেন।
তিনি বহু এলাকা জয় করে যখন বাইতুল মোকাদ্দাস গিয়ে পৌঁছাবেন, তখন হযরত ঈসা (আঃ) পুনর্বার পৃথিবীতে আগমন করবেন। তিনি মাহাদীকে সাথে নিয়ে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিভিন্ন এলাকায় অনেক বিগ্রহ করে আল্লাহর দ্বীনকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করবেন। দাজ্জালসহ বিরোধী সমস্ত শক্তিকে পরাভূত করে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর আইন কায়েম করবেন। সারা পৃথিবীতে তখন ধর্মদ্রোহীতার কোন সস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। সর্বস্তরে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে। পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে জান্নাতী সুখ। মানুষ ধর্ম কর্মের মাঝে লাভ করতে সক্ষম হবে এক পরম তৃপ্তি। যা কেউ কোন দিন কল্পনা করে নি। সে দিন শেষ নবী হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি নাজিলকৃত আহকামে কোরআন পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে সারা পৃথিবীর বুকে। মানুষের উপর আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফতের দায়িত্ব সে দিন সার্থকভাবে আদায় করবেন হযরত ইমাম মাহাদী। তিনি একাধারে চল্লিশ বছর যাবত পৃথিবীর বুকে এ শাসন জারী রাখবেন। অতঃপর তিনি ইন্তেকাল করবেন, তাকে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাজারের পাশেই দাফন করা হবে।