পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান মাহমুদ। সে আবার একটি ফুলের বাগান করল। তাতে গোলাপ, পলাশ, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, জুঁই, চামেলী, গাঁদা, রক্তজবাসহ আরো অনেক ফুলগাছ লাগিয়েছে। সে প্রতিদিন বাগানে গিয়ে ফুলের গন্ধ শুঁকে এবং বাগানে আসা পাখিদের গান শোনে তাদের সাথে কথা বলে। আর পাখিরাও তাকে ভালবেসেই গান শুনায়। মাঝে মাঝে লুকিয়ে থেকে ফুল, পাখি আর প্রজাপতির মিতালী দেখে। প্রজাপতি বিচিত্র পাখায় একটু উড়ে একটু থামে ফুলের কাছে যায় কথা বলে গন্ধ শুঁকে, মধু খায়, নানা ভঙ্গিমায় ফুলের সাথে মিতালী করে। এসব দেখে তার মন আনন্দে ভরে যায়। কিন্তু তাদের বাগানে কোন পরী আসে না তাই খুব খারাপ লাগে। তার আম্মু বলছে পরীরা নাকি ফুলের বাগানে থাকে। তাহলে তাদের বাগানে নাই কেন? একদিন বিকাল বেলা সে ফুল পাখিদের গান শুনছে, হঠাৎ একটি পরী আসল। মাহমুদ দেখে ভয় পেল। পরী বলল মাহমুদ তুমি ভয় পেয় না। তোমার আম্মু যে বলছে আমি সেই পরী। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। তুমি আজ আমার সাথে আমাদের দেশে চল তোমাকে মজার সব ফল খাওয়াব। আর নতুন নতুর পাখিদের গান শুনাব। মাহমুদ ফুল পরীর কথা শুনে রাজি হয়ে গেল তার সাথে যেতে। পরী মাহমুদকে তার পিঠে নিয়ে রওয়ানা হল নদ-নদী আর পাহাড়ঘেরা বন-বনানীর উপর দিয়ে। যেতে যেতে মাহমুদ দেখল আর কোন নদী সাগর দেখা যায় না, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। একটু পরেই তারা পৌঁছে গেল পরীর দেশে। হাজার হাজার পাখির আনাগোনা কূজন যেন এক অনাবিল পরিবেশ এবং সুরেলা কণ্ঠের মায়া জগতের সন্ধান পেল মাহমুদ। পরী মাহমুদকে ফুল এবং পাখিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল এবং বলল মাহমুদ এসব পাখ-পাখালি তোমার বন্ধু, তুমি এদের সাথে কথা বল, গান কর, আর ইচ্ছেমত এই বাগান থেকে ফল খাও। মাহমুদের আনন্দের সীমা নেই। এত হাজার রকমের পাখি সে আর কখনও দেখেনি। কতই না চমৎকার এখানকার ফুলগুলো মাহমুদ পাখিদের বলল, তোমরা আমাদের দেশে যাওনা কেন? তোমরা যদি যেতে আমাদের পৃথিবী কত সুন্দর হত। পাখিরা বলল, এক সময় আমরা সবাই তোমাদের পৃথিবীতে ছিলাম। তাহলে এইখানে আসলে কেন? পৃথিবীর মানুষগুলো এখন আর পূর্বের মত নেই। পূর্বের মানুষগুলো ছিল খুব নম্র-ভদ্র, কোন হানাহানি, মারামারি করত না। আর এখনকার মানুষগুলো সবসময় হানাহানি-মারামারিতে লিপ্ত। এসব আমাদের একদম পছন্দ না। আর একটা কথা হলো পূর্বে আমরা বাসা তৈরির জন্য অনেক জায়গা পেতাম খাবার ও পেতাম প্রচুর। আর এখন বাসা বানানোতো দূরের কথা- খাবার পেতেও অনেক কষ্ট হয় তোমাদের পৃথিবীতে। মানুষ যে হারে গাছপালা উজাড় শুরু করেছে কিছুদিন পর একটা পাখিও তোমাদের পৃথিবীতে দেখতে পাবে না। এসব শুনে মাহমুদের মন একদম খারাপ হয়ে গেল। সে বলল আর যদি আমরা গাছ উজাড় না করে আরো নতুন নতুন গাছপালা লাগাই? তাহলে দেখবে আমরা সবাই আবার তোমাদের পৃথিবীতে যাব তোমাদেরকে মিষ্টি সুরে গান শুনাবো। মাহমুদ বড় এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এবং বলল আমি আমাদের পৃথিবীতে গিয়ে সবাই কে গাছ লগাতে বলবো । তোমরা সবাই আমাদের পৃথিবীতে আসিও এই বলে মাহমুদ তাদের থেকে বিদায় নিল ।
===========