অনেকক্ষণ ধরে রাস্তার পাশের টং এর দোকানের চারপাশে অপেক্ষা করছে
তিনটে ক্ষুধার্ত কাক। দোকানের ভেতর থেকে কেউ যদি দয়াপরবশ হয়ে রুটি
কিংবা বিস্কুটের টুকরো ছুঁড়ে দেয়!
কাকাগুলো এই আশায় অপেক্ষা করছে ভোর সকাল থেকে। কিন্তু ,আজ ওদের
প্রতি মনে হয়, ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন নয়। প্রায় সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো কিন্তু ভাগ্যে এখনো জোটেনি কিছুই। তারপরও তাদের মনে ধৈর্যের কোন
কমতি নেই, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ নীতিতে বিশ্বাসী সবাই। কিছুক্ষণ গাছের এক ডালে, কিছুক্ষণ চালের উপর
কিংবা কিছুক্ষণ রাস্তার উপরে বসে অপেক্ষা করছে। খাবার কিছুতেই
আসছেনা, আজ দিনটা কি এতটাই খারাপ !
অন্যত্র উড়ে গেলেও পারতো কিন্তু; অত্র দুই ক্রোশের মাঝে শুধুমাত্র এই
খাবারের জন্য এই দোকনটাই আছে।
ছেঁড়া-ফাঁটা কাপড় পরহিত একজন লোক দোকানের ভেতরে গিয়ে বসলো।
লোকটার গাঁয়ের গন্ধ এতটাই খারাপ ছিলো যে, কাকগুলো কুকঁড়ে উঠে দোকানটার অন্যপাশে
গিয়ে বসে পড়লো। হঠাৎ করে দোকানের ভেতর থেকে অর্ধ-রুটি উড়ে
এলো ।হাওয়ায় ভর করে পুরো ফ্লাইং
সসারের মতো রুটিটা উড়ে এসে পড়লো গাছের নিচে। মুহূর্তের মধ্যে সবাই
গাছের ডাল, টিনের চাল থেকে উড়ে এসে রুটিটাকে ঘিরে গোল হয়ে যার
যার মত অবস্থান নিল। একে অপরকে মাপছে শঙ্কিত দৃষ্টিতে। সকলেরই লক্ষ্য একমাত্র রুটিটার উপর। প্রয়োজন একটা নিরবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত!
হঠাৎ, একটা ছোট্ট সাইজের কাক সাহসের পরিচয় দিলো। বাকি
সহজাতদের অস্তিত্ত্ব পুরোপুরি উপেক্ষা করে ঠোঁকড় দিলো রুটি লক্ষ্য করে।
কিন্তু ততোক্ষণে তার অন্য সহজাতদের মধ্যে একতা চলে এসেছে। অন্য
কাকগুলো একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো
ছোট্ট সাইজের কাকটার উপর। এই যৌথ আক্রমণ সহ্য করতে পরলো না ছোট্ট
কাকটা। “কা কা” শব্দ করে নিজেকে সে প্রতিযোগিতা থেকে প্রত্যাহার
করে নিলো। এখন প্রতিযোগী মাত্র
দুজন। এই দু’জনের যে-কোনো একজনের ভাগ্যে জুটবে রুটিটা । তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে
তাঁকিয়ে আছে দু’জন দু’জনের দিকে। কর্কশ শব্দে আওয়াজ করছে দুটোই। রুটিতে ঠোঁকড় দেওয়ার আগে একে অপরের শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছে ।
এবার, দাঁড়কাকের মতন বড় সাইজের কাকটা লাফ দিয়ে সাহসিকতার
পরিচয় দিলো। লড়াই চললো বেশ কিছুক্ষণ। কাড়াকাড়িতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হলো ছোট্ট সাইজের রংচটা
কাকটা।খুশিতে আকাশের দিকে মুখ
তুলে বিকট এক কর্কশ শব্দে চিৎকার দিলো বড় কাক। তারপর রাজকীয় ভঙ্গিতে
হেলেদুলে এগিয়ে গেলো রুটির দিকে। ঠোঁট নামিয়ে রুটিটা তুলে
নিতে যাবে,এমন সময় কোথা থেকে
দৌড়ে এলো ভয়ংকর একটা লাল কুকুর। বড় কাকটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুটিটা মুখে নিয়ে কেঁটে পড়লো লাল রংয়ের কুকুরটা।
বড় আকৃতির কাকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো
রুটিমুখে দৌড়তে থাকা কুকুরটির গমনপথের দিকে।
অদ্ভুত এক পৃথিবী ; বিচিত্র তার প্রতিযোগিতার আসর !
(সমাপ্ত)
—
ধন্যবাদ
গল্পটি পাঠিয়েছেন-খুলসী, চট্টগ্রাম থেকে
—-মোঃ জাহিদুল ইসলাম—-
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।