এক গুহাবাসী আবেদ

হযরত জুন্নুন মিশরী (রহঃ) বলেন, একদা আমি লাকাম  পাহাড়ে বিচরন করছিলাম, হঠাৎ পাহাড়ের পাদদেশে হতে একটি করুন শব্দ আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। আমি ঐ শব্দকে অনুসরণ করে এগুতে লাগলাম। অতঃপর  দেখতে পেলাম একটি গুহা হতে সে শব্দ আসছে। গুহার ভেতর তাকিয়ে আমি বিস্ময়ে স্তব্দ হয়ে গালাম।

সেই জনমানবহীন পাহাড়ের নিভৃত গুহায় এক আবেদ আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে  মুনাজাত করছেন। তিনি বলছেন, হায় পাক জাত! তোমার আনুগত্য ও ইবাদতের মধ্যেই প্রেমিকদের আত্মপ্রশান্তি নিহিত। পবিত্র সেই সত্ত্বা যিনি বুদ্ধিমানদেরকে এ কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র রব্বুল আলামিন ব্যতীত অন্য কারো উপর ভরসা করা যায় না। পবিত্র সেই সত্ত্বা, যিনি আশেকদের নফসে সাগর সৃষ্টি করেছেন।

এ পর্যন্ত বলে লোকটি চুপ হয়ে গেলে আমি নিকটে গিয়ে তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব সংশ্রব হতে মুক্ত হয়ে নিভৃতে বসে সর্বদা আত্মসমালোচনায় লিপ্ত, তার নিকট তুমি কেমন করে আসলে? উত্তরে আমি বললাম, হেদায়েত ও নসীহত লাভের প্রেরণাই আমাকে আপনার নিকট নিয়ে এসেছে।

তিনি বললেন, “কতিপয় বান্দার অন্তরে আল্লাহ পাক এশকে এলাহীর আগুন প্রজ্বলিত করে দিয়েছেন। প্রেমের আতিশয্যে তারা রিয়াজে’ মালাকত তথা আধ্যাত্মিক উদ্যানে ভ্রমন করে এমন সব বস্তু প্রত্যক্ষ করে  যা তাদের জন্য অদৃশ্য জগতে রক্ষিত আছে”।” আমি বললাম তাদের পরিচয় বলুন। তিনি বললেন, তারা আল্লাহর রহমতের গুহায় আশ্রয় গ্রহন করে সর্বদা প্রেমসূধা পান করে”।

অতঃপর তিনি বলতে লাগলেন, হে আমার মালিক! আমাকে তাদের সাথে মিলিয়ে দাও এবং তাদের ন্যায় আমল করার তাওফিক দান কর। এ সময় আমি কিছু নসীহত চাইলে তিনি বললেন, রব্বুল আলামীনের দীদার  লাভের আশায় তাঁর সাথে ভালোবাসা স্থাপন কর। একদিন তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সামনে তাঁর সৌন্দর্য বিচ্চুরিত করবেন।

অতঃপর তিনি কয়েকটি শের পাঠ করলেন যার  অর্থ হল ” হে রব্বুল আলামীন! একদিন আমার চোখে অশ্রু ছিল, তুমি তা নিঃশেষ করে দিয়েছ। চোখের পলক ছিল তাও তুমি অকেজো করে দিয়েছ। আজকের এই শীর্ণ দেহটিতে একদিন শক্তি ছিল, ছিল রিষ্টপুষ্ট। তুমি তা ধ্বংস করে দিয়েছ। আমার একটি সবল মন ছিল, তাও তুমি দুর্বল করে দিয়েছ।

হায় মাওলায়ে কারীম! আমার দুটি চোখ ছিল তা দ্বারা আমি তোমার সাজানো পৃথিবী অবলোকন করতাম। তাও তুমি ছিনিয়ে নিয়েছ। আজ আমি অন্ধ। এখন তোমার এই নিঃস্ব বান্দার একমাত্র ভরসা তুমি। তুমি ইচ্ছা করলে অনেক আগেই আমাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিতে পারতে। তুমি আমাদের উপর রহম করো। আমীন।”

Written By

More From Author

You May Also Like

অপু ও ফলচুরি রহস্য

মহানগরের কোলাহলের মাঝে, ব্যস্ত জনপথের কিছুটা দূরে একফালি সবুজ ল্যান্ডস্কেপ । সদ্য গড়ে ওঠা আবাসন…

ভালুক ও কাঠবিড়ালী

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতাটি কম-বেশি সবাই পড়েছে। এ কবিতাটির কারণেই ছোট্ট…

গাজা দিবস

শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভাল ও সুস্থ আছো। তোমরা…

এক গুহাবাসী আবেদ

হযরত জুন্নুন মিশরী (রহঃ) বলেন, একদা আমি লাকাম  পাহাড়ে বিচরন করছিলাম, হঠাৎ পাহাড়ের পাদদেশে হতে একটি করুন শব্দ আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। আমি ঐ শব্দকে অনুসরণ করে এগুতে লাগলাম। অতঃপর  দেখতে পেলাম একটি গুহা হতে সে শব্দ আসছে। গুহার ভেতর তাকিয়ে আমি বিস্ময়ে স্তব্দ হয়ে গালাম।

সেই জনমানবহীন পাহাড়ের নিভৃত গুহায় এক আবেদ আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে  মুনাজাত করছেন। তিনি বলছেন, হায় পাক জাত! তোমার আনুগত্য ও ইবাদতের মধ্যেই প্রেমিকদের আত্মপ্রশান্তি নিহিত। পবিত্র সেই সত্ত্বা যিনি বুদ্ধিমানদেরকে এ কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র রব্বুল আলামিন ব্যতীত অন্য কারো উপর ভরসা করা যায় না। পবিত্র সেই সত্ত্বা, যিনি আশেকদের নফসে সাগর সৃষ্টি করেছেন।

এ পর্যন্ত বলে লোকটি চুপ হয়ে গেলে আমি নিকটে গিয়ে তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব সংশ্রব হতে মুক্ত হয়ে নিভৃতে বসে সর্বদা আত্মসমালোচনায় লিপ্ত, তার নিকট তুমি কেমন করে আসলে? উত্তরে আমি বললাম, হেদায়েত ও নসীহত লাভের প্রেরণাই আমাকে আপনার নিকট নিয়ে এসেছে।

তিনি বললেন, “কতিপয় বান্দার অন্তরে আল্লাহ পাক এশকে এলাহীর আগুন প্রজ্বলিত করে দিয়েছেন। প্রেমের আতিশয্যে তারা রিয়াজে’ মালাকত তথা আধ্যাত্মিক উদ্যানে ভ্রমন করে এমন সব বস্তু প্রত্যক্ষ করে  যা তাদের জন্য অদৃশ্য জগতে রক্ষিত আছে”।” আমি বললাম তাদের পরিচয় বলুন। তিনি বললেন, তারা আল্লাহর রহমতের গুহায় আশ্রয় গ্রহন করে সর্বদা প্রেমসূধা পান করে”।

অতঃপর তিনি বলতে লাগলেন, হে আমার মালিক! আমাকে তাদের সাথে মিলিয়ে দাও এবং তাদের ন্যায় আমল করার তাওফিক দান কর। এ সময় আমি কিছু নসীহত চাইলে তিনি বললেন, রব্বুল আলামীনের দীদার  লাভের আশায় তাঁর সাথে ভালোবাসা স্থাপন কর। একদিন তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সামনে তাঁর সৌন্দর্য বিচ্চুরিত করবেন।

অতঃপর তিনি কয়েকটি শের পাঠ করলেন যার  অর্থ হল ” হে রব্বুল আলামীন! একদিন আমার চোখে অশ্রু ছিল, তুমি তা নিঃশেষ করে দিয়েছ। চোখের পলক ছিল তাও তুমি অকেজো করে দিয়েছ। আজকের এই শীর্ণ দেহটিতে একদিন শক্তি ছিল, ছিল রিষ্টপুষ্ট। তুমি তা ধ্বংস করে দিয়েছ। আমার একটি সবল মন ছিল, তাও তুমি দুর্বল করে দিয়েছ।

হায় মাওলায়ে কারীম! আমার দুটি চোখ ছিল তা দ্বারা আমি তোমার সাজানো পৃথিবী অবলোকন করতাম। তাও তুমি ছিনিয়ে নিয়েছ। আজ আমি অন্ধ। এখন তোমার এই নিঃস্ব বান্দার একমাত্র ভরসা তুমি। তুমি ইচ্ছা করলে অনেক আগেই আমাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিতে পারতে। তুমি আমাদের উপর রহম করো। আমীন।”

Written By

More From Author

You May Also Like

খৃষ্টান মহিলার প্রেমে পাগল হওয়ার ঘটনা

বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, একদা আমি হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এর দরবারে বসেছিলাম। এমন সময় আমাদের…

এক বুজুর্গের কসমের উছিলায়

হযরত আবূ আব্দুল্লাহ কাররাশী (রাঃ) বলেন, একবার মুশরিক সৈন্যরা স্পেন শহরে প্রবেশ করে বিনা যুদ্ধে…

স্বপ্ন যোগে রাসূলের দিদার।

ইমাম কাফেলায় হাবীবের ঈমানী চেতনার প্রকাশ্য শক্তি যেন কয়েকগুণ বাড়াল। ইমাম হোসাইন (রাঃ) গভীর রাতে…