রাজবধূ ৭৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সবাই বিদ্যুৎ শকের মতো স্তম্ভিত হয়ে গেলো। আদুরী,সুফিয়া,ডলি,ফুল,মতির মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। শিখার দু-চোখ অশ্রুতে সিক্ত হলো। বরকত গিয়ে রানির বাবার বাড়ি খবর দিলো। তারা রানির লাশ নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু তালুকদার তা হতে দিলনা। রাতেই রানির দাফন সম্পন্ন হলো।
তালুকদার পরিবারে আবারো নেমে এলো ভয়াবহ বিপর্যয়। একদিকে দুই ছেলে জেলে। মারা গেলো পরিবারের বড় বউ। তার মন্দ কাজগুলো বাদ দিলে তালুকদার পরিবারে তার শ্রম,ত্যাগ,ধৈর্য মনে রাখার মতো। আদুরী একটি ক্ষণের জন্যও ভুলতে পারছে না তার প্রিয় বড় ভাবিকে। সুফিয়া বিবিও থেমে থেমে স্মরণ করছে বড় ছেলের বউকে।
রাজ,শিখাকে নিয়ে স্বশুর বাড়িতে গেলো। একদিন বেড়ালো সেখানে। আসার সময় নূরিকে অনুরোধ করে বললো,
“আম্মা, আপনি নাকি বাড়িতে আসার জন্য খুব অস্থির হয়ে গিয়েছেন? আপনার আদরের ছোট মেয়ে ঢাকায় থাকে। তার নিজের ফ্ল্যাট। পাঁচ, ছয় বছর পরে সে এডভোকেট হয়ে যাবে। সবইতো আপনার আনন্দ, গর্ব আম্মা। তাই বলি কী, আপনি শহরে থাকার ও ভালোলাগার অভ্যাসটা গড়ে তুলুন। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন আম্মা।”
নূরী কৌতুক করে জামাইকে বললো,
“তুমি এমনভাবে কইতাছো,যেন বহু বছরের লাইগা তুমি উধাও হইয়া যাইবা? যাও যামুনি আমার মাইয়ার কাছে।”
রাজ হেসে ফেললো। বললো,
“আম্মা আসি। আমার জন্য দোয়া করবেন।”
রাজ ঝুঁকে বসে নূরীর দুপা ছুঁয়ে সালাম দিলো। নূরী মাতৃস্নেহে রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে দিলো।
বাড়িতে চলে গেলো রাজ ও শিখা। তার দুদিন পর রাজ শিখাকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলো। আসার সময় সুফিয়া বিবি রাজকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলো। তালুকদার, আদুরীসহ ঘরের অনেকেই কাঁদলো রাজের জন্য। সবার কান্নার হেতু হলো,একে একে এই ঘরের সবাই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। রাজের এক ভাই মরে গেলো। হয়তো বাকি দুই ভাইয়েরও ফাঁসী হবে। বাকি আছে একমাত্র রাজ। সে সবার আদরের ও প্রিয়।।আল্লাহ যেন তাকে শহরে সহী সালামতে রাখে।
রাজ ও শিখা তাদের বাসায় পৌঁছে গেলো। কাজের খালাও রোজ এসে তার কাজ করে দিয়ে যাচ্ছে। শিখা তার পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিছুদিন পর শিখার আবার পরিক্ষা শুরু হলো। রেজাল্ট প্রকাশ হলো। তার রেজাল্ট দেখে রাজের খুশীর সীমা নেই।
শিখা ও রাজের যুগল জীবনের চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকী এলো। তা উদযাপন করার জন্য রাজ শিখাকে নিয়ে কক্সবাজারে গেলো। বিচের পাশাপাশি একটি মনোরম হোটেলে উঠলো তারা। দিনে দুজনে চলে যায় সমুদ্রে সৈকতে। সমুদ্রের নোনা জলে নেচে কুদে আনন্দ করলো। এ যেন এক মহোৎসব। ফেনিল উচ্ছ্বাসে প্রায় ডুবে যাওয়া শিখার অনেকগুলো ছবি তুললো রাজ। পরে অপরিচিত একজনকে দিয়ে নিজের ও শিখার বিভিন্ন রকম রোমান্টিক পোজের ছবি ক্যামেরাবন্দী করলো। দুজন দুজনের ভালোবাসায় ব্যাকুল। এক সপ্তাহ ভ্রমন শেষে পরে রাজ শিখাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরলো। এভাবে উপভোগের মধ্য দিয়ে বিদায় নিলো সাল ১৯৯৪।
শীতকে সঙ্গী করে শুরু হলো নতুন বছর। সাল ১৯৯৫। শীতে শিখার ঘুরতে ভালোলাগে। তাই রাজ তাকে নিয়ে ঢাকার অদূরে কিছু জেলায় ঘুরতে গেলো। টাঙ্গাইল, গাজিপুর,মানিকগঞ্জ, নরসিংদীর ভ্রমনের স্পটগুলোতে সে শিখাকে নিয়ে গেলো।
সব মিলিয়ে রাজ ব্যক্তিগত জীবনে সুখী শিখাকে নিয়ে। শিখাও তার ব্যতিক্রম নয়। শিখা এলএলবির দ্বিতীয় বর্ষে উঠে গেলো। যত সময় গড়ায় ততই শিখার চোখে রঙিন স্বপ্ন গভীর থেকে গভীর হতে থাকে । একদিন সে নামকরা আইনজীবী হবে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়বে সে। চোখের সামনে কোন অন্যায়,অপরাধ হতে দিবেনা। আপোষ করবে না দেহে প্রাণ থাকতে।
সেই শীতের প্রকোপ না শেষ হতেই সুফিয়ার ইহলীলা সাঙ্গ হলো। ঢাকায় টেলিফোন এলে রাজ উম্মাদের মতো শিখাকে নিয়ে গ্রামে চলে গেলো। রাজ মায়ের শবদেহের পাশে আছড়ে পড়লো। ছোট বাচ্চার মতো হাউমাউ করে অশ্রুপাত করতে লাগলো। আদুরী ভাইয়ের গলা পেঁচিয়ে বিলাপ জুড়ে দিলো। থানায় গিয়ে জানানো হলো রানি ও সুফিয়ার মৃত্যু সংবাদ। কর্তব্যরত প্রহরী খালেদ ও আসলামকে সংবাদ দিলো। শিখার উপর তাদের ঘৃণা পাহাড়সম হয়ে গেলো। তবে তারা মাকে দেখতে ইচ্ছাপোষণ করল না। ভাবলো মায়ের মৃতমুখ দেখে কী আর হবে। বরং সবাই লা* শ ফেলে তাদেরকে দেখবে সার্কাসের মতো।
গোটা তালুকদার বাড়ি শোকে শোকাচ্ছন্ন। পরিবেশ মেঘাচ্ছন্ন। থমথমে। সুফিয়ার জন্য প্রতিটি মানুষ চোখের জল ফেললো। রাজ ও আদুরী মাকে নিয়ে নিজেদের ছোটবেলার নানা স্মৃতি মনে করেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তালুকদার ঘোলাটে চোখে আকাশপানে চেয়ে থাকে সারাক্ষণ। দুটো গরু জবাই করে মহা আয়োজনে সুফিয়া বিবির কূলখানি সমাপ্ত করলো রাজ। উজানপুর গ্রামের সব দরিদ্র মানুষ, মাদ্রাসার এতিম ছাত্র সবাইকে ভরপুর খাওয়ালো। মসজিদের কয়েকজন হাফেজ দিয়ে কোরান খতম, মিলাদ পড়ানো,দরুদপাঠ কিছুই বাকি রাখল না রাজ। রাজ ও আদুরী রোজ কয়েকবার মায়ের কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকে। দুই ভাইবোন বলে উঠে,
“বাঁচার সাধ মরে গেলো। মা কেন আমাকে তার সাথে নিয়ে গেলো না। আহারে মা। যত কিছুই হোক মায়ের মতো কেউ নাই। মা মেরেও চায়। বুকে নিয়েও চায়। মায়ের তুলনা কেবলই মা।”
জীবনকে আর থামিয়ে রাখা যায় না। তাকে তার গতিতে চলতে দিতে হয়। তাই সুফিয়া বিবির মৃত্যুর পনেরো দিন পর রাজ শিখাকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেলো। আসার সময় শিখা শাশুড়ীর কবরে গিয়ে খুব কাঁদলো। ভুলে গেলো তার উপর শাশুড়ীর করা অমানবিক অত্যাচারগুলো।
মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে হয়। তার উপর ক্ষোভ ধরে রাখা কোন মুমিন মুসলমানের কাজ নয়।
রাজ তার বাবাকে নিয়ে যেতে চাইলো। তিনি কিছুতেই রাজী হলেন না। বললেন বাড়িতেই ভালো আছেন তিনি। শহরে গেলে মন টিকবেনা।
রাজের মন খারাপ থাকে। শিখা রাজকে আলিঙ্গন ও ভালোবাসা দিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তুললো।
“আল্লাহ তার বান্দাকে ততটুকু দুঃখ বেদনা দেন। যতটুকু বান্দা সহ্য করতে পারবে।”
তাই মাস দুয়েকের ভিতরে রাজ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলো। নিয়মিত অফিসে যাচ্ছে। কাজকর্ম করছে মন দিয়ে। পার্টিদের সাথে মিটিংয়ে বসছে।
একদিন শিখা বারান্দায় বসে বসে পত্রিকা পড়ছে। দৈনিক ইনকিলাব। পত্রিকার ভিতরের একটি শিরোনামে তার চোখ আটকে গেলো।
‘ অবশেষে শহরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সন্ধান মিললো।’
শিখা ডিটেল পড়লো। বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে। পূনরায় লেখাটি আবার পড়লো শিখা। তারপর হতে শিখা রাজের সঙ্গে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলে। যা কিনা দুদিন বাদেই রাজের চোখে পড়লো। রাজ শিখাকে বললো,
“কী ব্যাপার শিখা? এনি প্রবলেম? কোন কারণে তুমি আপসেট?
ক্লাসে,ক্যাম্পাসে কোন ঝামেলা? শেয়ার করো প্লিজ।”
শিখা এড়িয়ে যায়। কারণ প্রত্যক্ষ প্রমাণ না পেয়ে সে রাজকে কিছু বলতে চায়না। সে গোপনে সত্যতা জানার চেষ্টা করছে। তারপর রাজের মুখোমুখি হবে। সে কথা ঘুরিয়ে বলে,
“নাহ। আপনাদের বাড়ির কথা মনে হলেই মন খারাপ হয়ে যায়। এই। আর পড়াশোনার চাপতো আছে।”
এভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। রাজের সাথে শিখার অভিব্যক্তির পরিবর্তন হলো না। রাজ আর তাকে আগের মতো ছুঁতে পারছে না। ভালোবাসতে পারছে না। শিখার মাঝে কেমন দূর দূর ভাব রাজকে নিয়ে। রাজ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। রাজ আর পারছে না। এক রাতে সে শিখাকে হাত টেনে ধরলো জোর করে। জিজ্ঞেস করলো,
“বলবা তো কি হয়েছে? তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো। কিন্তু দেখো,বলার সময় সুযোগই হচ্ছে না।”
“আপনি আমাকে ছোঁবেন না বলছি।”
শিখার কন্ঠে বিতৃষ্ণা! অসহিষ্ণুতা!
রাজ শিখার চিবুক উঁচিয়ে ঠান্ডা সুরে বললো,
“সূর্যের চেয়েও প্রখর তুমি/তোমার তেজে পুড়ে যাই আমি।
একটু হও শীতল জোছনা/ দূর করে দাও অসীম যন্ত্রণা।”
“সরে যান বলছি।”
“তুমি আসমান,তুমি জমিন/ তোমাতে হই আমি বিলীন।”
“আমাতে বিলীন হতে হবে না আর। অনেক হয়েছে।”
শিখা রাজের হাত থেকে ছুটে গিয়ে অন্যরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তার পরেরদিন রাতে রাজ শিখার কোমর চেপে ধরলো। শিখা না চাইলেও রাজ নিজ থেকে শিখার সারা শরীরে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো। শিখা গভীর স্বাস ছাড়লো। রাজ নেশাতুর চোখে বললো,
” দেখো,জোছনার আলো নিভে যায় তোমার দীর্ঘস্বাসে।”
“ছিহ! আপনি নেশা করে এসেছেন? গায়ের থেকে কেমন বাজে স্মেল আসছে।”
“ইয়েস। নেশা করেছি। একশোবার করবো। যার ঘরে শান্তি নেই। তার মনে শান্তি নেই। আর যার মনে শান্তি নেই,সেতো শান্তি খুঁজবে শরাবের পেয়ালায়।”
কিঞ্চিৎ ঢুলু ঢুলু গলায় বলল রাজ।
শিখা সরে যেতে চেয়েও হেরে গেলো রাজের বাহুশক্তির কাছে। রাজ জোর করে সেই রাতে অভিসারে মেতে উঠলো। শিখা ভোরেই গোসল সেরে নেয়। নামাজ পড়ে মোনাজাতে আকূল কান্নায় লুটে পড়ে।
ঘটনা তার তিনদিন পরের।
চৈত্রের এক তপ্ত মধ্যদুপুর। মাথার উপরে ঘুরের সিলিং ফ্যান। রাজ ও শিখা দুপুরের ভাত খেয়ে উঠলো। শিখা রাজকে বললো,
“আপনি অফিসে যান না কেন আজকাল?”
রাজ শিখার পায়ের কাছে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। দুহাত জোড় করে মিনতি করে বললো,
“তুমি নেই তো আমার কিছুই নেই। তোমার কী হয়েছে? কেন আমাকে ভালোবাসো না? অপরাধ কী আমার? প্লিজ বলো। নয়তো খোদার কসম আমি নিজেকে নিঃশেষ করে দিবো।”
“আপনি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছেন?”
“বলবো। এক্ষুনি বলবো মাই লাভ। মাই লাইফ। আগে তুমি আমার সম্পর্কে কী শুনেছো কোথায়? বলো?”
“বলছি। তার আগে যেটা বলতে চাই তা হলো,
শিখা একটি স্ফুলিঙ্গের নাম। যেখানে অনিয়ম, অবিচার দেখবে। সেই ময়দানে শিখা খোলা বারুদ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিবে মুখোশদারীদের কালো মুখোশ।
এবার বলুন,আপনি কী কোন অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত? কোন নিষিদ্ধ কাজ করেন আপনি?”
রাজ লম্বা স্বাস ফেললো। বললো,
“যা ধারণা করেছিলাম। শিখা তোমার মনে আছে? যেদিন দিনের আলোয় তোমার আমার প্রথম দর্শন হয় আমাদের বাড়িতে। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে কী বলেছিলাম?”
“কী।”
“তুমি আমার জীবনে অজস্র কাঁচের গুঁড়ির মাঝে জ্বলজ্বলে এক টুকরো হীরকখণ্ড!”
“হুম মনে আছে।”
“কেন বলেছি প্রজাপতি? এর ভাবার্থ কী বুঝেছো তুমি? বা কখনো একটিবারের জন্যও জানতে চেয়েছো কেন বললাম অমন কথা? চাওনি। তাই নিজ থেকেই বলার জন্য ইচ্ছুক হলাম।”
“বলেন শুনি।”
শিখার কণ্ঠে কোমলতা। চাহনিতে আকুলতা।
“শোন, সত্যের মাঝেও কিছু সত্য লুকিয়ে থাকে। আমরা সেই সত্যের তল খোঁজার চেষ্টা করি না। বাইরের দৃষ্টি দিয়ে যা দেখি,যা শুনি, তার উপর বিচার করেই কাছের মানুষটাকে সন্দেহ করি। ভুল বুঝি। দূরত্ব বাড়াই। উৎসটা কোথা হতে,কীভাবে, কার জন্য তা বুঝতে চাই না।”
শিখা রাজের বুকে মাথা রাখলো নরম করে। মায়া মায়া সুরে বলল,
“আমি আপনাকে ভুল বুঝিনি। বা বুঝবোও না। আমার যত কষ্ট,যত দহন, তা হলো আপনি লুকালেন কেন আমার কাছে?”
“আমি কিছুই লুকাতে চাইনি। এই তোমায় ছুঁয়ে বলছি। বলতে গিয়েও বলতে পারিনি আমার একটা গল্প। যেই গল্প আঁধারের। মরিচীকার।”
“বলেন। আমার হৃদয় শোনার অপেক্ষায়।”
রাজ বলতে গিয়েও থামতে হলো কলিংবেলের কর্কশ আওয়াজে। রাজ উঠে গিয়ে বাসার দরজা খুলে দিলো। শিখাও রাজের সাথে দরজায় এসে দাঁড়ালো। চারজন পুলিশ দেখে রাজ খানিক ভড়কে গেলো।
“আপনি নওশাদ তালুকদার?”
“ইয়েস।”
“থানায় চলুন। আপনার নামে মামলা হয়েছে অবৈধ ব্যবসার।”
আপনারা ভিতরে এসে বসুন। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি। রাজ শিখাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। শিখা রাজকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ শুরু করলো। তাদের কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“দয়া করুন। উনাকে এরেস্ট করবেন না। উনি যদি কোন খারাপ কাজ করে থাকে,তবে সেই পথ ছেড়ে দিবে। আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের।”
“ম্যাডাম আইন ত আপনার মুখের কথায় চলে না। উনি নির্দোষ প্রমাণ হলে এমনিতেই ছাড়া পেয়ে যাবে।”
শিখার পাগল পাগল দশা। রুমের ভিতরে গিয়ে রাজের পায়ে লুটিয়ে পড়লো।
“আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো কীভাবে? আমিও আপনার সাথে যাবো।”
রাজ শিখাকে ধরে দাঁড় করালো। নির্লিপ্ত গলায় বললো,
” পাগলামি করো না। তুমি বাসায় থাকো। কোরান তেলওয়াত করো। আচ্ছা রাজবধূ, তুমি কী এই ভিতরে অন্য কারো হয়ে যাবে?”
“কোনদিনও না। ভুলেওনা। মরনেও না। জীবনেও না। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি রাজবধূ হয়েই বেঁচে রবো। আমি আপনাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করবোই। ইনশাআল্লাহ। যেকোন উপায়ে হোক। আপনাকে ভালোবাসি এক পৃথিবী। ভালোবাসিইই।”
রাজ শিখার কপালে নরম চুমু খেলো। বললো,
“কারাগারে বেঁচে রবো কেবল তোমার এই কথাগুলো স্মরণ করে করেই। আমাদের দেখা হবে ঠিক পাঁচ বছর পরে। নিজের যত্ন নিও।”
পুলিশ রাজকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেলো। শিখা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টির আড়াল হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইলো গাড়িটার দিকে।
৭৩ + ৭৪ ও ফেসবুকের জন্য সমাপ্তি। ৭৫ থেকে বাকিগুলো খাতায় লিখব। ২৬ শে বইমেলায় প্রকাশ হবে মলাটবন্দী হয়ে।
তুমুল পাঠকপ্রিয় রহস্যোপন্যাস #রাজবধূ‘র রাজের ও জুবায়েরের,জীবনের শেষ পরিণতি কী হতে পারে?
কেন সেই গভীর রাতে কবর খুদেছিলো খালেদ ও আসলাম?
রাজের জীবনের সেই আঁধারের গল্পটা কেমন হতে পারে?
রাজ কি সত্যিই মাদক ব্যবসায়ী? জেলখানা থেকে সে কীভাবে জামিন পাবে?
শত শকুনের আগ্রাসী থাবা থেকে একাকী শিখা কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবে?
জুবায়ের কী শেষ অবধি বিয়ে করবে অন্য কাউকে?
পুলিশকে রাজের বাসার ঠিকানা দেওয়া ব্যক্তির পরিণতি কী হবে? কার হাতে হবে?
আর কী কোন খু * ন হতে পারে?
এমন বহু রহস্যময় জিজ্ঞাসা যেমন আপনাদের। তেমনি আমারও। _______________________
আমার প্রাণের পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ, অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি যে,আমার দু’চোখেই সার্জারী হয়েছে ২ বছর আগে। স্ক্রিনের আলোর জন্য এখন সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। কম দেখি। বর অনেক রা * গা * রা* গি* করে লিখি বলে। তাই নিরুপায় হয়ে #রাজবধূ থ্রিলার উপন্যাসটি ৭৩ পর্বেই ফেসবুকের জন্য ইতি টানতে বাধ্য হলাম।
আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে তারজন্য। বাকি ঘটনা বিস্তৃত আকারে লিখতে গেলে আরো বেশ কয়েক পর্ব হয়ে যাবে। কারণ এটা একটি ঘটনাবহুল সামাজিক রহস্যোপন্যাস। পাঠকের চাহিনানুযায়ী বড় বড় করে ৭৩ পর্ব লিখতেই প্রায় ছয়মাস সময় গিয়েছে। যদি বেঁচে ও সুস্থ থাকি, কাহিনীর বাকি বিষয়গুলো ডিসেম্বরে খাতায় লিখবো। পরে সেটা পরিপূর্ণভাবে মলাটবন্দী হয়ে ২৬ সালের বইমেলার আসবে।
বাকি রহস্যগুলো ক্লিয়ার হবেন আপনারা তখন। তবে পেইজে মাঝে মাঝে রাজবধূ’র আপডেট ও খন্ডিত অংশ আসবে বিভিন্নভাবে,বিভিন্নরূপে।
দেখুন, এই ভিতরে আমি অন্য কোন গল্প লিখছি না পেইজে। যা দিয়েছি, তা আগের লিখা ও রিপোস্ট ছিলো। যতটুকু দিই বা দিবো তা কেবল পেইজ টিকিয়ে রাখার জন্য।
ভুল বুঝলে আমাকে ইচ্ছেমতো বকা দিয়ে নিজেদের মনকে হালকা করুন। আমার কোন অবজেকশন নেই। কারণ আপনারা আমার প্রাণ। আমার আনন্দে থাকার উৎস।
ভালো কিছুর জন্য না হয় কয়েকটা মাস অপেক্ষা করলেন। আর যদি তখন এত আকর্ষণীয় ঘটনাবহুল বইটি নাই সংগ্রহ করতে ইচ্ছে করে,
তাতেও আমার বিন্দুমাত্র দুঃখবোধ নেই।
পাঠকের ইচ্ছা ও ভালোলাগার গুরুত্ব আমার কাছে অপরিসীম!
“অসুস্থ হলে বোঝা যায় সুস্থ থাকা আল্লাহর কত বড় নেয়ামত।”
আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।