ইনকাভূমির রাজপুত্র

এবার চল দক্ষিন আমেরিকায়।এ মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতি ছিল পেরুর অধিবাসীরা।এক সময়ে তাদের লোককথার প্রার্চুয ও জনপ্রিয়তা ছিল।এক রাজ পুত্র তার নিজের বধূ হওয়ার মতো এক কন্যাকে খুঁজতে গিয়ে যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে গল্পটি সে বিষয় নিয়েই।এক বৃদ্ধের ছদ্মবেশ ধারন করে রাজপুত্র সারা রাজ্যে ঘুরে বেড়ালেন কিন্তু সর্বত্রই তিনি সাক্ষাত পেলেন লোভী ও শ্বার্থপর মানুষের।তার ছিন্নবস্ত্র ও দিন হিন অবস্তা কারো মনে করুণার উদ্রেক করল না।অবশেষে তিনি একটা পাহাড়ের পাশ্বাদেশে একটা খাড়া ঢালের কাছে এসে পৌছালেন।নিচে একটা হ্রদ।
প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে তার জলধারা বয়েগেছে।রাজপুত্র নিচে নেমে গিয়ে গ্রামের এক বাজারের কোনায় বসে বিশ্রাম নিতে লাগলেন।চারপাশের গ্রামের লোকরা তখন হাসি গল্পতে মগ্ন।ক্লান্ত ধুলিধুসরিত বৃদ্ধ মলিন মুখে তার নিজের যায়গায় বসে রইলেন,কেউ তার দিকে বিন্দুমাত্র দৃষ্টি দিল না।একটু পড়ে ওই গ্রামের সবচাইতে সুন্দরী ময়ে তখন ওখান যেতে যেতে বিষণ্ণ মনে চুপচাপ থাকা বসে থাকা বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,কি বাবা, আপনি এখানে চুপচাপ বসে আছেন,ওরা কি উৎসবে যোগ দেবার জন্য আমাকে একবারও আমন্ত্রন করেনি?
ছদ্মবেশী যুবরাজ না-সুচক মাথা নাড়তেই মেয়েটি এগিয়ে গেল শীতল ও বিশাল একটি পাত্র বৃদ্ধকে নিয়ে বলল,বাবা,এটা পান করেন।এটা আমাদের দেশের সকলের সবচাইতে প্রিয় পানীয়।আজ আমি হয়তো মারা যেতেম এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই তুমিও মারা পড়তে।এখন মন দিয়ে আমার কথা শোনো।এই গ্রামের উপর একটা ভয়ানক দুর্যোগ নেমে আসছে।তুমি দ্রুত বাড়ি গিয়ে তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আজ রাতেই এই গ্রাম ছেড়ে পাহাড় পেরিয়ে ও পাশের উপত্যকায় চলে যাও।দেরি করো না।
ওইখানে আবার আমাদের দেখাহবে।একথা বলেই ছদ্মবেশি রাজপুত্র চোখের নিমেষে কোন দিক যে চলে গেলন কুমারীকন্যা টা বুঝতে পারলেন না।
কিন্তু কন্যা বৃদ্ধের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করল।পরিবারের সবাই কে নিয়ে সে ওই রাতেই গ্রাম ছেড়ে গেল।তারা গ্রামের সীমানা পেরিয়ে হ্রদের তিরে এসে পৌছল,আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হৃদের একপাশে জমিতে প্রচণ্ড ধস দেখা দিল।প্রবল পানির তোড় বন্যার রুপনিয়ে গ্রামের দিকে অগ্রসর হলো।সঙ্গে চলল অসংখ্য হলুদ ও সাদা বিরাট বিরাট শিলা ও নানা আকারের পাথর।দেখতে দেখতে গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন গেল।কুমারীকন্যা ও তার পরিবার পাহাড়ে পেরিয়ে নতুন অঞ্চলে গিয়ে হাজির হলে সে খানকার মানুষেরা তাদের বিনা বিধায় আশ্রয় দিল।তার পর মাঠে চাষাবাদ করার খামারে কাজ করার সুযোগ দিল।কিন্তু দিনদিন ওই কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উটতে থাকে।কারণ হ্রদের জল খুব কমে গিয়েছিল।সে ক্ষিন জলধারা পাহাড়ের গা বেয়ে আসছে সাহায্য এই শুল্ক আবহাওয়ায় ওদের চাষ করা ভুট্টার ক্ষেত ওরা আর বাঁচিয়ে রাখতে পারছিল না।
এই সময়ে একদিন রাজপুত্র পারিয়াকাকা ওখানে এসে হাজির হলেন।এখানে তিনি বৃদ্ধের
ছদ্মবেশ ধারণ করে আছেন।তরুণীকে ভুট্টার ক্ষেতের এক পাশে অশ্রু বিসর্জন করতে দেখে তিনি বলেন,কী হয়েছে।কাঁদছ কেন?আমাকে বল,আমি তোমাকে সাহায্য করবো।তোমার হাস্য মুখের চাইতে বেশী আনন্দ আমাকে আর কিছুই দেবে না,
ময়েটি বলল,বাবা, আমি কাঁদছি কারণ আমাদের জমির ভুট্টা মারা যাচ্ছে।
তখন রাজ পুত্র পরিয়াকাকা বলেন,আমি যখন জলের ওহাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে মরতে বসেছিলাম তখন তুমি আমার হাতে পানি তুলে দিয়ে আনার জীবন বাছিয়ে ছিলে।এখন যা তোমার প্রয়োজন তা আমি তমাখে দেব।তবে তোমাকে একটা কথাদিতে হবে।তুমি আমাকে বিয়ে করবে।রাজপুত্র পারিয়াকাকা আপন মনে হাসলেন।কিন্তু কোন কথা না বলে পাহাড়ের যে যায়গায় থেকে হ্রদ শুরু হয়েছিল সেখানে গিয়ে চুপ করে দাঁড়ালেন।তার পর তিনি আকাশের সব পাখি আর মাঠ বন প্রান্তরে ভাবৎ পশুকে ডাক দিলেন।ওরা সবাই ছিল তার বন্ধু।তিনি তাদের উদ্দেশ্য বললেন,প্রিয় বন্ধুরা,আমাকে সাহায্য কর।এমন ব্যাবস্থা করো যেন এখান থেকে সর্বদা পানি প্রবাহিত হয়।জমি যেন সর্বদা উর্বর থাকে।এখানে যেন প্রচুর খাদ্য শশ্য,ফলমুল শাক-সবজি উৎপন্ন হয়।সঙ্গে সঙ্গে দেখাগেল নানা জাতের আকারের হরেক রঙের পাখি।তারা তাদের ঠোটে করে তাদের নখে করে তাদের ডানার
নিচে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে বহু পাথর,শিলাখণ্ড,বালিকণা ইত্যাদি নিয়ে এসে
যেখানে ভুমিধস নেমেছিল সেখানে একটা বিরাট বাঁধ তৈরি করে দিল।আর পশুদের ক্ষেত্রে নেতার ভুমিকায় দেখাগেল শিয়াল মহাশয় কে,তিনি ছিলেন সবচাইতে বুদ্ধিমান ও কুশলী।তিনি রার অনুচরদের নিয়ে হ্রদের অপর প্রান্ত থেকে পাহাড়ের মধ্যেদিয়ে একটা খাল খনন করতে শুরু করলেন যেখান থেকে দিয়ে রাজপুত্র পরিয়াকাকার সঠিক যায়গায় এসে পর্যাপ্ত পানির ধারা পড়বে।প্রকৌশলী শিয়ালের কাজ যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে ঠিক তখনি কোথা থেকে আকাশে উড়ন্ত এক তিতির পাখি শিয়ালের নাকের কাছে নেমে এসে পিঁ!পিঁ! করে ডাক দিল,আর শেয়াল ততক্ষণ তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের কোথা ভুলে গিয়ে ওই তিতিরের পেছন পেছন ছুটলো।শিয়ালের বর্তমানে সাপকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং খাল খননের কাজ এবার চলতে থাকে।তবে এই নতুন নেতা শেয়ালের মতো অতটা চালাক ও দক্ষ ছিল না।কিছু কিছু অনাকাঙ্খিত পথে জল প্রবাহিত হয়ে বেশ খানিক টা জলের অপচয় ঘটে।তবুও কুমারীকন্যার ক্ষেতের জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যাবস্থা করা হয় এবং তার জমি ও খামার সবচাইতে উর্বর,সবচাইতে সম্পদশালী এবং সবার চাইতে ফলপ্রসূ হয়ে উঠে।তখন একদিন রাজপুত্র পারিয়াকাকা কুমারিকন্যার সামনে এসে হাজির হলেন।তখনও তিনি বৃদ্ধের ছদ্মবেশ ধারন করে আছেন।কিন্তু কুমারীকন্যা তার প্রতিশ্রুতি অনুজায়ী ওই বৃদ্ধকে বিয়ে করতে রাজি হলো।রাজ পুত্রা আনন্দোউজ্জ্বল গলায় বলে উঠলেন,এত দিনে আমি আমার উপযুক্ত সাথি পেলাম যিনি আমাদের রাজবংশের প্রকৃত রক্ষাকত্রী হবেন।এই বলে তিনি এক তানে ছদ্মবেশ খুলে ফেললেন।অবাক নয়নে কুমারীকন্যা দেখলেন কোন বৃদ্ধা নয়,তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক সমগ্র ইনকারাভুমির রাজপুত্র।আরও রাজপুত্রের মুখেও তখন হাসির রেখা ফুটে উঠল।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!