রাজবধূ পর্ব ২৯ (রেহানা পুতুল)

রাজবধূ ২৮ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

নূরীর চোখ ভর্তি একশো চুল্লী দাউদাউ করে জ্বলছে। বাদশা নূরীর সেই জ্বলন্ত চোখের দিকে চেয়ে মনে মনে বলল,

“হ* ত্যা আমি নয়। আপনারে দিয়েই করামু।”

পরক্ষণেই বাদশা বলল,

“ঠিক আছে খালাম্মা। আর এসবের জন্য খরচপাতি আছে কিছু। টাকার যোগাড় রাইখেন। আমি আমার হাতের ঘড়ি বেচে দিছি টাকার জন্য।”

“কি কও? আমার কামে তুমি হাতের ঘড়ি বেইচা দিলা?”

সন্দেহাতীত চোখে জিজ্ঞেস করলো নূরী।

“আমারও কিছু হিসাব আছে তালুকদারের লগে খালাম্মা।”

“আল্লাহ! কও কি? যাইহোক, খরচের বিষয় আমার মাথায় আছে বাদশা। আমি কোন বেক্কল বেডি নই। আমার একটা কড়ই গাছ বেইচা দিছি পাঁচশো টাকায়।”

“ভালো করছেন। আমি যাই। কামের চাপ অনেক।”

বাদশা চলে যায়। নূরী উঠে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ বাগানের ভিতর হাঁটাহাঁটি করে বাড়িতে প্রবেশ করে। শিখা নিজের রুমে গিয়ে রাজের চিরকুটটি পড়লো।

” প্রজাপতি তোমার আমার দূরত্ব শেষ করতে চাই। দুই বছর অপেক্ষা করা অসম্ভব! দম আটকে আসে। তোমার মত পেলে তোমার আম্মাকে বুঝিয়ে বলবে বাবা৷”

শিখা চিন্তা করলো, এইটা খুব দরকার। এদের যে কূটচাল মার্কা সংসার। নানা কেচ্ছা কাহিনী ঘটতেই থাকে। তখন সব উনাকে জানাতে পারব। এইভাবে দূরে দূরে থাকলে চলবে না। শিখা জবাব দিল না। মাকে জিজ্ঞেস করে জানাবে। শিখা বের হয়ে হয়ে মাকে খুঁজে বের করলো। অদূরে জলপাই গাছের ছায়ার গিয়ে দাঁড়ালো। মাকে রাজের ইচ্ছার কথাটা বলল।

শুনে নূরী বলল,

“তুই কি কস? পড়ালেখার ক্ষতি হইব না? চালায়া নিতে পারবি?”

“পারুম আম্মা। সমস্যা হইব না। উনিতো দূরেই থাকবো। মাঝে মাঝে আসবো বাড়িতে। আর সবকিছু তখন উনারে জানাইতে পারুম।”

লাজুক কন্ঠে মায়ের জবাব দিলো শিখা।

“এইটা ঠিক কইছস। জামাইয়ের লগে চইলতে ফিরতে সহজ হইয়া গ্যালে তোর লাইগাই ভালো। তবে এখন না। ফল প্রকাশ হউক। কলেজে ভর্তি হইয়া নে। একটু শক্তপোক্ত হ। তারবাদে।”

” আইচ্ছা। আম্মা যেদিন আইলাম,সেদিনও এরা সবাই আমার লগে রুক্ষ আচরণ করছে। আমি রসুই ঘরের পিছনে গিয়া কাঁনছি। মতির মা খালাও দেখছে। আইচ্ছা আম্মা আংটির কথা উনারে জানামু?এখন না। আদুরী আপার বিয়ার প্রোগ্রাম শ্যাষ হইলে? মনে হয় জানান দরকার। পরে উনি ভুল বুঝব না আমারে?”

নূরী চিন্তায় পড়ে গেলো এবার। রাজ শুনে গেলে কি থেকে হয়। সব ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে যাবে। তার আর বাদশার প্ল্যান পরে ভেস্তে যাবে। সে গোঁফ দাঁড়ি ছাড়া তালুকদারের মুখ দেখতে চায়। বিজ্ঞের সুরে বলল,

“অহন কইস না মা। আগে বিয়া চুকায়া যাক। আমি কমু। তহন জানাইস।”

“আম্মা আসো। তোমারে কিছু খাইতে দিই। ঘর ভর্তি খাওন আছে। এখন উনি বাড়িতে। হেরা কিছুই কইতে পারব না।”

” না থাউক। একবারে দুপুরেই খামু।”

শিখার মন মানে না। মাকে নিয়ে ঘরে এলো। নিজের রুমে নিয়ে বসালো। রসমলাই, ফুলঝুরিপিঠা,আঙ্গুর,আপেল,সফেদা ফল নিয়ে দিলো একগ্লাস পানি সহ। মা মেয়ে দুজনে বসে বসে সব খেলো। নূরী বের হয়ে সবার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলল। আজ সবাই তার সঙ্গে তুলনামূলক ভালো ব্যবহার দিয়ে কথা বলেছে। হয়তো বিয়ে বাড়ি ও রাজ বাড়িতে উপস্থিত আছে বলে। তারপর রাজের সঙ্গে দেখা হলো নূরীর। রাজ পা ছুঁয়ে সালাম দিলো শাশুড়ীকে।

আন্তরিক সুরে জিজ্ঞেস করলো,

“আম্মা কখন এলেন? আমি খুব খুশী হয়েছি এসেছেন বলে। আলো আপা, দুলাভাই কখন আসবে?”

” হইলতো ঘন্টার মতন। ওরা কাল বিয়ার দিনই আইবো বাবা। এদিকে আসো রাজ।”

রাজ নূরীর সঙ্গে শিখার রুমে গেলো। নূরী ব্যাগের ভিতর থেকে একটা সোনার আংটির বক্স বের করে বলল,

“বাবা এই আংটিটা আদুরীর জামাইয়ের জন্য বানাইছি। দেখো পছন্দ হইছে তোমার?”

রাজ আংটিটা বক্সসহ হাতে নিলো। একসঙ্গে অবাক ও মুগ্ধ হলো নূরীর উপর। কারণ এটা তার কল্পনার বাইরে ছিলো। কেননা নূরীর সেই সামর্থ্য নেই। ভাবলো,

এমন বিবেকবোধ ও বড় মন বহু বড়লোকেরও নেই। আসল ছোটলোক তারাই। এরা নয়।

রাজ আপ্লুত স্বরে বলল,

“আম্মা এটার দরকার ছিল না। একটা শাড়ি দিলেই হতো।”

“কি যে কও বাবা। এতে ঘরে তোমার ও ভাইসাহেবের মুখ উজ্জ্বল হবে। যেহেতু শিখারে শুধু তোমরা পিতা পুত্রই পছন্দ করছো। আর কেউই নয়। এইটা আগে জানতে পারলে ভাইবা দেখতাম শিখারে নিয়া।”

“এভাবে বলে আমাকে লজ্জায় দিবেন না। শিখা কই আম্মা? ”

বিনীত গলায় বলল রাজ।

“তোমার খালাতো বোন লিমার লগে ওইদিকে গেলো দেখলাম।”

রাজ বের হয়ে যায় রুম থেকে। শিখার উপর অনুভূতি আরো বেগবান হলো তার। শিখাকে খুঁজে বের করলো। দেখলো গোলাঘরের পিছনে শিখা,লিমা আরো দু তিনজন মিলে হেসে হেসে কথা বলছে।

শিখা চুড়িভাঙ্গা হাসিতে হেলেদুলে পড়ছে। হাসিতো নয়। যেন রবিশংকরের সেতার বেজে চলছে। রাজের মনে হলো বহুদূর হতে চপল ঝর্ণা ছন্দের সুরে সুরে তার হৃদয়কে আন্দোলিত করে যাচ্ছে।

রাজ সাহেবী ঢংয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নতুন একটি লুঙ্গি ও হাফ হাতার পাতলা কালো রঙের শার্ট পরা তার। হাতে সোনালী রঙের চেইনের ঘড়ি। শিখা রাজকে দেখেই দৃষ্টির চঞ্চলতা কমিয়ে দিলো। মুখ দিয়েও কথা ফুটছে না। লিমা বলল,

“এতজন অঙ্গনার মাঝে একজন পুরুষের কি কাম শুনি?”

“এতজনের কাছে আমার কাজ নেই। একজন অঙ্গনাকেই আমার চাই। যাকে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। তোরা সবাই কি ফুসুরফাসুর করছিস?”

সপ্রতিভ কন্ঠে বলল রাজ।

“আমরা কাইল দুলহা মিয়ার গেট ধরা ও শরবত খাওয়ার বিষয়ে প্ল্যান করতাছি।”

“এই খবরদার! শরবতে মরিচের গুঁড়ো দিবি না বলছি।”

“তাইলে হলুদের গুঁড়া দিমু। রাজ ভাই, যান তো। আমাদের মাঝখানে সাইকেল চালাইবেন না।”

পাশ থেকে রাজের এক আত্মীয় ভাবি বলল,

“শিখা জামাইয়ের কাছে গিয়া বিদায় করো।”

রাজ একপাশে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। শিখাও মৃদু পায়ে তার পাশে গিয়ে থামলো।

“জবাব পাইনি অঙ্গনা। কিছু একটা বলো। একই ছাদের নিচে বাস করেও দুজন দুই মেরুতে থাকছি। আর নেওয়া যাচ্ছে না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে।”

“আপনার যেইভাবে ভালো হয় সেইভাবে করেন।”

কন্ঠকে খাদে নামিয়ে অপ্রতিভ স্বরে বলল শিখা।

রাজ বুক ভর্তি আনন্দ নিয়ে গুন-গুন করতে করতে চলে গেলো। শিখা আবার ওদের কাছে চলে গেলো। তারা সবাই রাজের সিক্রেট কথা জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলো। শিখা বলে দিলো।

ও ইয়ে কাহানী? বলেই ওরা একসঙ্গে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লো এ ওর গায়ে।

জয়নুল তালুকদার উঠানে প্যান্ডেলের ভিতর বসে আছে। রাজ পিতার পাশে এসে বসলো। নূরীর আংটির উপহারের বিষয়ে জানালো। তালুকদার বলল,

“দেখলি কত ভালো পরিবার তাদের। সমাজ ক্যান যে মানুষের সামাজিক অবস্থান বিচার করে পয়সাকড়ি আর ধন দৌলত দিয়া?”

” রাস্ট্র যদি শুধু মানুষের শিক্ষা, নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব দিয়ে শ্রেণী নির্ধারণ করতো। তাহলে সমাজের প্রথম শ্রেণীর লোক হতো হাজারো নিম্নশ্রেণীর মানুষ। মূর্খ বিত্তশালীরা নয়।”

জ্ঞানী সুরে বলল রাজ।

তারপর সে তার বাবাকে শিখার বিষয়টা জানাল। এবং অনুরোধ করল শিখার মায়ের সঙ্গে যেন আলাপ করে নেয়। নয়তো ওয়াদা ভঙ্গ হয় তাদের। শুনে তালুকদার বলল,

“তুই আমার কাছে হ্যারে পাঠা এখুনি। পরে আর সুযোগ হইব না।”

রাজ এক সেকেন্ডও আর অপেক্ষা করল না। গিয়ে নূরীকে বলল। নূরী তালুকদারের পাশে এসে দাঁড়ালো মার্জিত ভঙ্গিতে। তালুকদার নূরীকে বিষয়টা বলে আরো বলল,

“আসলে যুবক ছেলেত বেয়াইন। এভাবে থাকা যায় না। বউরের পড়ার লোকসান হবে না। আমিই কথা দিতাছি। কি কন? ”

শুনে নূরী বলল,

“ঠিক আছে ভাই সাহেব। শিখার ফল বাইর হোক। কলেজে ভর্তি হোক। দু ‘চার মাস যাক না। তারপর থেইকা দুইজন একত্রে থাকতে পারবো।”

নূরী চলে গেলো। রাজ আবার পিতার কাছে এলো। তিনি ছেলেকে জানালেন, সমস্যা নেই। নূরী অনুমতি দিয়েছে। রাজ দৃষ্টি নামিয়ে পিতার সম্মুখ হতে প্রস্থান নিলো। দোতলায় নিজের রুমে গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। ক্যাসেট প্লেয়ারে একটা গান ছেড়ে দিলো।

বেজে চলছে সেই সুখ জাগানিয়া রবীন্দ্রসংগীত।

“বঁধু,কোন আলো লাগল চোখে!

বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে!

ছিলো মন তোমারি প্রতীক্ষা করি,

যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি,

ছিল মর্মবেদনাঘন অন্ধকারে,জন্ম-জনম গেল বিরহশোকে। লজ্জিত স্মিতমুখ শুভ আলোকে॥

বধূ কোন আলো লাগলো চোখে।”

রাজের চোখ বুঁজে এলো সুরের মূর্ছনায়।

আজ আদুরীর বিয়ে। উল্লাসে, উৎসবে, হৈ-হুল্লোড়ে, আমোদে, ফূর্তিতে, মহাভোজের আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন হলো। নূরীর উপহার পেয়ে সবাই মনঃপুত হলেও ভিতরে ভিতরে বুঝে নিলো রাজ টাকা দিলো নূরীকে। বরের গেইট ধরার টাকা নিয়ে দু’পক্ষের দুইদল ছেলেমেয়ের মাঝে খুনসুটি ও পালটা তর্ক বেঁধে গেলো। শিখা ও লিমার সঙ্গে বর পক্ষের দুটো ছেলে গায়ে পড়ে ফাজলামো করতে চাচ্ছে। সীমান্ত ও জুবায়ের তা দেখে সেই উত্তপ্ত হওয়া পরিস্থিতি ম্যানেজ করলো।

বর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে নিয়ে রাতে কাচারি ঘরে থাকবে। পরেরদিন সকালে নাস্তা ও ভাত খেয়ে বউ নিয়ে যাবে গাড়িতে করে। বউরের সঙ্গে দু’চারজন কাজিন গ্রুপ যাবে। তার পরেরদিন বৌভাতে যাবে কনের পক্ষের লোকজন।

জোছনা ও ফুলবানুও আজ শাড়ি পরেছে। বাদশাও নতুন প্যান্ট শার্ট পরেছে। সে লুকিয়ে ফুলকে ডাকলো। চোরের মতো ফিসফিসানো গলায় বলল,

“ফুল তোমাকে এই প্রথম শাড়ি পরা দেখছি। অনেক সুন্দর লাগছে। তুমি আমার হুরপরী ফুল। এইতো, সময় কইরাই তোমারে বউ সাজাইয়া আমার ছোট্র কুঁড়েঘরে নিয়া যামু। মনতো চায় এখুনি গিয়া আদুরীর বিয়া পড়ানো কাজিরে কই,আরো একজোড়া বিয়া পড়ান। নাম বাদশা ও ফুল।”

ফুল লাজুক হাসে। বলে,

“আমি অপেক্ষায় আছি বাদশা ভাই। আপনারেও ম্যালা সুন্দর লাগছে। খাইছেন?”

“হ খাইছি। ভরপুর খাওন। তুমি খাইছো?”

“আমরা সবাই এখানে পাটিতে বইসা খাইছি।”

পরেরদিন সকালে আদুরীকে কাঁচাফুল দিয়ে সাজানো কারে করে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। পালকির প্রচলন প্রায় শেষ তখন। সেজন্য পালকি যোগাড় সম্ভব হয়নি। নয়তো সুফিয়া বিবির বড় সাধ ছিলো তার মতো করে চার বেহারার কাঁধে পালকিতে চড়ে তার মেয়েকে স্বশুর বাড়ি পাঠাবে। সুফিয়া বিবি মেয়ের জন্য অনেক অশ্রুপাত করলেন। তারসঙ্গে চোখ ভিজে উঠলো জয়নুল তালুকদার,আমেনাসহ আরো কয়েকজন নারীর।

বৌভাত খেয়ে সবাই সন্ধ্যার ভিতরে বাড়ি চলে এলো। সব অতিথিরাও চলে গেলো। নূরীও চলে গেলো সেদিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে। বাদশা নূরীকে রিকশা এনে তুলে দিলো রাজের নির্দেশে। নূরী আসার সময় মেয়েকে বলল,

“ঘর এখন খালি। বাইরের কেউ নাই। তুই জামাইরে কইস সুযোগ কইরা। নয়তো এইটা জামাই পরে শুনলে খারাপি হইবো।”

“আইচ্ছা আম্মা। একটু বাদেই কইতাছি।”

নূরী চলে গেলো। সবাই সবার মতো করে আছে। মতির মা, তারমেয়ে জোছনা,ফুলবানু,বরকত,বাদশা গৃহকার্যে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে আছে। শিখা ভাবছে কিভাবে রাজকে এতবড় কথাটা জানাবে। তবুও বলতেই হবে এখন নিরিবিলিতে ডেকে এনে। রাজ বেশিরভাগ সময় দোতলায় তার ঘরে থাকে। প্রয়োজন হলেই কেবল নিচে নেমে আসে। ফুলবানুকে দিয়ে ডাকতে হবে তাকে। সে অতিরিক্ত কথা বলে না। শুনে আর দায়িত্ব পালন করে। জোছনা তার পুরো বিপরীত।

ফুলবানু গিয়ে রাজকে বলল,

“ভাইজান, ভাবি একটু দেখা কইরতে চায় আপনের লগে।”

“গিয়ে বল,আমি হাতের কাজ সেরেই আসতেছি।”

শিখা নিজের রুমে বসে রাজের অপেক্ষায়।

এদিকে খায়রুল তালুকদার আজকের এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিল। সে লম্বা দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে নিজের রুম হতে বের হলো। মাটির দিকে এদিক সেদিক চাচ্ছে আর হাঁটছে। সুমনা তাকে দেখেই বলল,

“কাকার কিছু হারাইছে মনে হয়?”

তালুকদার নিরুত্তর। নিজের মতো খুঁজছে কিছু। জোছনা বলল,

“কাকা কি বিছরান?”

তালুকদার বোবামুখে ঘরের এদিক সেদিক কিছু খুঁজে ফিরছে।

সে সুফিয়ার কক্ষে উঁকি মারলো।

“কি খোঁজেন আপনে?”

তালুকদার কিছু বলে না। তার ম্লান মুখ। চাহনি সন্দেহজনক! তখন আসলাম এলো বাইরে থেকো।

“কাকা কি হইছে? কি খোঁজেন মাটিতে? ওদেরকে বলেন। খুঁইজা দিবো। ”

“আরেহ কইস না। আমার হাতের একটা দামী পাথরের আংটি পাইতেছি না।”

“হায়! কখন থেইকা? কিভাবে হারাইলো আঙ্গুলের আংটি।”

এভাবে এক দুই কথায় তালুকদার ঘরের সমস্ত লোক জড়ো হলো। রাজ নিচে নেমে এলো শিখার সঙ্গে দেখা করতে। তক্ষুনি দেখলো ঘরের মাঝখানে পরিবারের সবাই একত্রিত।

রাজ জানতে চাইলো,

” কি সমস্যা?”

ডলি বলল,

“কাকার দামি আংটি হারাইছে। কে জানি চুরি করলো।”

“আশ্চর্য! চোর আসবে কোথা থেকে? বাড়ির চতুর্দিকে কাঁটাতার ও দেয়াল দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া।”

মৃদু মেজাজে বলল রাজ।

জয়নুল তালুকদার বলল,

“বিয়াতে কত গরিব মানুষ, পোলাপান আইলো। চুরি করতেও পারে!”

খালেদ বলল,

“বাদ দেন। কই পাইবেন এখন আংটি? কতজন এলো গেলো। আমাদের আত্মীয়ের ভিতরেও কেউ হতে পারে। কিছু জিনিস চুরি করতে চোর লাগে না। ভদ্রজনেরাই চুরি করে।”

আমেনা ভাতিজার কথায় সায় দিয়ে বলল,

“আমিও তোমার চাচারে এইটা কইলাম। বাদ দেন। গ্যাছে গ্যাছেই। একটা আংটিই তো।”

শিখা সব শুনছে রুমের ভিতর থেকে। তার আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে পালানোর দশা। অনবরত শুকনো ঢোক গিলছে।

খায়রুল তালুকদার বলল,

“খালেদের কথাই আমার কথা। তবে বলতে শুনতে খারাপ লাগবে৷ তাই বলিনাই। ঘরভরা অতিথি ছিলো। ক্যামনে নিজের মানুষরে চোর সাব্যস্ত করি।”

“কাকা বলেন? যদি আমাদের নিজেদের কেউও হয়,আমি নিজ হাতে তাকে শাস্তি দিবো। রক্ষা পাবে না। চুরি করবে কেন? দরকার পড়লে আমাদের কাছে চাইবে। আমরা না দিবো তাকে? বলেন?”

ক্ষিপ্ত স্বরে বলল রাজ।

“আমার আংটি তোর বউয়ের কাছে মনে হয়।”

ক্ষীণ গলায় বলল ছোট তালুকদার।

নিমিষেই রাজের মুখ অপমানে থমথমে হয়ে উঠলো। ভয়াল রূপ ধারণ করলো সে। যেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। এক গর্জনেই সব তছনছ করে দিবে।

সে হেঁড়ে গলায় ডেকে উঠলো,

“শিখা… বেরিয়ে এসো বলছি।”

শিখা নিঃশব্দ পায়ে রুম থেকে বের হলো। মুখশ্রী ফ্যাকাসে মৃত মৎসের ন্যায়। দৃষ্টি করুণ! অসহায়! উদভ্রান্ত!

রাজবধূ ৩০ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!