আল্লাহর পথে এক যুবক

বর্ণিত আছে যে, জনৈকা মহিলা বুজুর্গ তার একমাত্র ছেলেকে   শৈশব হতেই ভালভাবে তালিম নিয়ে গড়ে তুলেছেন। ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর একদিন সে তার মাতাকে বলল, আম্মা আপনি! আমাকে দায়মুক্ত করে আল্লাহর পথে ছেড়ে দেন। মাতা উত্তর দিলেন- বেটা! নিয়ম হল, বাদশাহর দরবারে এমন ব্যক্তিদের পেশ করা হয় যারা তাকওয়া- পরহেজগারী ও আদব কায়দায় পরিপক্ক। অথচ তুমি একেবারেই ছেলে মানুষ এখনো ভাল ভাবে এটাই জান না যে, কার সাথে কেমন করে কথা বলা উচিৎ। সুতরাং আল্লাহর পথে বের হওয়া তোমার কাজ নয়। জননীর কথার উপর ছেলে আর কোন উত্তর দিল না।

কিছুদিন পর একদিন সে কাঠ কাটতে পাহাড়ে গেল। কাঠের বোঝা আনার জন্য সাথে একটি খচ্চর নিয়েছিল । পাহাড়ে উঠে কাঠ কাটার পর তা একত্রে করে যথাস্থানে এসে দেখল, তার খচ্চর নেই। অতঃপর সে তা খুজতে বের হল। কিছু দূর এগুনোর পর দেখল, এক নেকড়ে বাঘ ঐ খচ্চরটিকে  খাচ্ছে। যুবক নেকড়ে বাঘটির নিকট  এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলল, হে খোদায়ী হিংস্র প্রাণী! আল্লাহর শপথ, আমি তোমার পিঠেই আমার কাঠের বোঝা চেপে নিয়ে যাব। তুমি যেহেতু আমার প্রাণীটি মেরে খেয়ে ফেলেছ এখন তোমাকে এই কষ্ট করতে হবে। একথা বলেই যুবক কাঠের বোঝাটি  বাঘের পিঠে উঠিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ির দিকে চলল।

মানুষের প্রাণ হরণকারী বনের হিংস্র প্রাণী নেকড়ে বাঘ সাথে নিয়ে সে যখন বাড়িতে উপস্থিত হল তখন তার মাতা এই অভাবিত দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে স্তব্দ হয়ে গেলেন। অতঃপর ছেলের মুখে বিস্তারিত ঘটনা শুনে খুশী হলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, আল্লাহ পাক নিশ্চয়ই তার ছেলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং দ্বীনের খেতমতের জন্য তাকে কবুল করেছেন। এবার তিনি ছেলেকে বললেন, বেটা! এখন তুমি বাদশার খেদমতে উপযুক্ত হয়েছ। সুতরাং আমি তোমাকে তার পথে ওয়াকফ করে দিলাম এবং তার কুদরতী হাতেই তোমাকে আমানত রাখলাম। অতঃপর ছেলের জন্য দোয়া করে নিম্নের বয়াতগুলি পাঠ করলেন। 

অর্থাৎ, সে নিজের সময় ও জীবনের জন্য আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টটির ময়দানকেই বেঁচে নিয়েছে। সুতরাং আপনজন, লোকালয় ও দুনিয়ার যাবতীয় বন্ধের লাগাম ছিন্ন করে রাতের অন্ধকারে বিস্তীর্ণ মরুভূমি অতিক্রম করে মাহবুবের শহরে সন্ধান করে ফিরছে। আর সকাল সন্ধ্যার পিপাসা নিবারনের  শরাব পান করে পরিতৃপ্ত হচ্ছে।

Written By

More From Author

You May Also Like

অপু ও ফলচুরি রহস্য

মহানগরের কোলাহলের মাঝে, ব্যস্ত জনপথের কিছুটা দূরে একফালি সবুজ ল্যান্ডস্কেপ । সদ্য গড়ে ওঠা আবাসন…

ভালুক ও কাঠবিড়ালী

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতাটি কম-বেশি সবাই পড়েছে। এ কবিতাটির কারণেই ছোট্ট…

গাজা দিবস

শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভাল ও সুস্থ আছো। তোমরা…

আল্লাহর পথে এক যুবক

বর্ণিত আছে যে, জনৈকা মহিলা বুজুর্গ তার একমাত্র ছেলেকে   শৈশব হতেই ভালভাবে তালিম নিয়ে গড়ে তুলেছেন। ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর একদিন সে তার মাতাকে বলল, আম্মা আপনি! আমাকে দায়মুক্ত করে আল্লাহর পথে ছেড়ে দেন। মাতা উত্তর দিলেন- বেটা! নিয়ম হল, বাদশাহর দরবারে এমন ব্যক্তিদের পেশ করা হয় যারা তাকওয়া- পরহেজগারী ও আদব কায়দায় পরিপক্ক। অথচ তুমি একেবারেই ছেলে মানুষ এখনো ভাল ভাবে এটাই জান না যে, কার সাথে কেমন করে কথা বলা উচিৎ। সুতরাং আল্লাহর পথে বের হওয়া তোমার কাজ নয়। জননীর কথার উপর ছেলে আর কোন উত্তর দিল না।

কিছুদিন পর একদিন সে কাঠ কাটতে পাহাড়ে গেল। কাঠের বোঝা আনার জন্য সাথে একটি খচ্চর নিয়েছিল । পাহাড়ে উঠে কাঠ কাটার পর তা একত্রে করে যথাস্থানে এসে দেখল, তার খচ্চর নেই। অতঃপর সে তা খুজতে বের হল। কিছু দূর এগুনোর পর দেখল, এক নেকড়ে বাঘ ঐ খচ্চরটিকে  খাচ্ছে। যুবক নেকড়ে বাঘটির নিকট  এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলল, হে খোদায়ী হিংস্র প্রাণী! আল্লাহর শপথ, আমি তোমার পিঠেই আমার কাঠের বোঝা চেপে নিয়ে যাব। তুমি যেহেতু আমার প্রাণীটি মেরে খেয়ে ফেলেছ এখন তোমাকে এই কষ্ট করতে হবে। একথা বলেই যুবক কাঠের বোঝাটি  বাঘের পিঠে উঠিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ির দিকে চলল।

মানুষের প্রাণ হরণকারী বনের হিংস্র প্রাণী নেকড়ে বাঘ সাথে নিয়ে সে যখন বাড়িতে উপস্থিত হল তখন তার মাতা এই অভাবিত দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে স্তব্দ হয়ে গেলেন। অতঃপর ছেলের মুখে বিস্তারিত ঘটনা শুনে খুশী হলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, আল্লাহ পাক নিশ্চয়ই তার ছেলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং দ্বীনের খেতমতের জন্য তাকে কবুল করেছেন। এবার তিনি ছেলেকে বললেন, বেটা! এখন তুমি বাদশার খেদমতে উপযুক্ত হয়েছ। সুতরাং আমি তোমাকে তার পথে ওয়াকফ করে দিলাম এবং তার কুদরতী হাতেই তোমাকে আমানত রাখলাম। অতঃপর ছেলের জন্য দোয়া করে নিম্নের বয়াতগুলি পাঠ করলেন। 

অর্থাৎ, সে নিজের সময় ও জীবনের জন্য আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টটির ময়দানকেই বেঁচে নিয়েছে। সুতরাং আপনজন, লোকালয় ও দুনিয়ার যাবতীয় বন্ধের লাগাম ছিন্ন করে রাতের অন্ধকারে বিস্তীর্ণ মরুভূমি অতিক্রম করে মাহবুবের শহরে সন্ধান করে ফিরছে। আর সকাল সন্ধ্যার পিপাসা নিবারনের  শরাব পান করে পরিতৃপ্ত হচ্ছে।

Written By

More From Author

You May Also Like

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, লেখক, গবেষক ও সমাজ সংস্কারক।…

অপু ও ফলচুরি রহস্য

মহানগরের কোলাহলের মাঝে, ব্যস্ত জনপথের কিছুটা দূরে একফালি সবুজ ল্যান্ডস্কেপ । সদ্য গড়ে ওঠা আবাসন…

মাতৃভক্তি

রংধনু আসরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই কবি কালিদাস রায় তার ‘মাতৃভক্তি’ কবিতাটি পড়েছো। এ কবিতায়…