পিপীলিকার রাজার সাথে আলোচনা- ২য় পর্ব
পিপীলিকার রাজার সাথে আলোচনা- ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় আপনাকে জালেম বলার ধৃষ্টতা আমার মাঝে আদৌ নেই। শুধু আপনার সৈন্যদের বেপরোয়া অশ্বচালনার বিষয় আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম যে, ক্ষুদ্র প্রাণী বিনাশ হলে বড় প্রাণীরা কোন পরোয়া করে না। তাই তাদের অশ্বপদতলে পিপীলিকার পিষ্ট হওয়ার অতি সম্ভবনা দেখে আমি তাদেরকে হুশিয়ার করে দিয়েছি। আপনাকে দোষারোফ করা আমার উদ্দেশ্য নয়।
হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন, তোমার কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি। এখন বল তোমাদের পিপীলিকার সৈন্য সংখ্যা কত? পিপীলিকার রাজা উত্তর দিল ধরুন পিপীলিকার প্রধান সেনাপ্রতির সংখ্যা চল্লিশ হাজার। প্রত্যেক সেনাপ্রতির অধিনে রয়েছে চল্লিশ হাজার সুবাদার। প্রত্যেক সুবাদারের অধিনে রয়েছে চল্লিশ হাজার হাকিম। পত্যেক হাকিমের পিছনে রয়েছে চল্লিশ হাজার ফউজদার। হযরত ছোলায়মান (আঃ) এ পর্যন্ত শুনে বললেন, আচ্ছা বুঝতে পরেছি সৈন্য সংখ্যা বিরাট। আচ্চা বল এখন তোমার রাজ্য ভাল না আমার রাজ্য ভাল? পিপীলিকার রাজা বলল, আমার রাজ্য আপনার রাজ্য হইতে উত্তম। কারণ জিন দ্বারা আপনার সিংহাসন তৈরি করে উহা বাতাসের সাহায্য পরিচালনা করছেন? এতে বোঝা যাচ্ছে আপনি পর-নির্ভরশীল। আর আমার কোন সিংহাসন নেই। কারো উপর ক্ষনিকের জন্য নির্ভর করতে হয় না। হযরত ছোলায়মান (আঃ) পিপীলিকার কথা শুনে বললেন, তোমার মাথায় এত বুদ্ধি এবং তোমার কথায় এত যুক্তি এ সমস্ত তুমি কোথায় শিখলে? পিঁপড়ে রাজ বললেন, হে আল্লাহর নবী! যে মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে বিশাল রাজ্য ও অশেষ বিদ্যা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সে মহান আল্লাহ তায়ালা আমার প্রাপ্য জ্ঞান ও বিদ্যা আমাকেও দান করেছেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন, তুমি অনেক জ্ঞানের অধিকারি। অতএব তুমি আমার রাজ্য পরিচালনা ক্ষেত্রে ভুল-ক্রুটি সম্বন্ধে কিছু আলোচনা কর।
পিপীলিকা রাজ তখন বললেন, হে আল্লাহর খলিফা! আপনার রাজ্য পরিচলানার ক্ষেত্রে ভুল ক্রুটির আলোচোনা করার জন্য বে-আদবি তবে আপনি যখন আমাকে অত্যন্ত আদরের চোখে দেখেন সে হিসাবে আলোচনার উদ্দেশ্য নয় এবং আপনাকে স্মরণ করিয়ে কিছু কথা বলতে পারি। আপনি আল্লাহ তায়ালার দরবারে রাজ্য সভার জন্য দোয়া করেছিলেন, হে প্রভু! আমাকে এমন এক সুন্দর বৃহৎ রাজ্য দান কর যার উপযোগী একমাত্র আমি থাকব। আমার পরে আর কেউ যেন এই রাজ্যর অধিপতি না হতে পারে। তুমি মহান দাতা। হে আল্লাহ খলিফা ! এ ধরনের ঈর্ষামূলক দোয়া করা আপনার ন্যায় একজন নবীর পক্ষে কতদূর সমীচীন হয়েছে তা জানি না। তবে কথাটি যে ইষামূলক তাতে সন্দেহ নেই। আপনাকে আল্লাহ তায়ালা এই বিশাল রাজ্যর অধিপতি করেছেন। জীন, পরি, আগুন, বাতাসকে আপনার বাধ্য করেছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। আপনার পরে আল্লাহ যদি আরো কয়েকজনকে এরুপ বিশাল রাজ্যের অধিপতি করেন তাতে আপনার আপত্তি কেন? এ আপত্তি দ্বারা কি প্রমাণিত হয়? আপনি একবার ভেবে দেখুন একজন নবীর পক্ষে এ ধরনের ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্বলিত দোয়া খুবই বেমানান।
পিপীলিকার রাজার সাথে আলোচনা- ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন