গোন ও কোমার বন্ধুত্ব

জাপান আমাদের এশিয়া মহাদেশের একটি দেশ । বরং বলা চলে, জাপানকে নিয়েই এশিয়া গর্ব করতে পারে ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে । সেই জাপানের লোকগল্পের আমাদের দেশে কিন্তু খুব পরিচিতি নেই । এবার সুযোগ পেয়ে আনন্দটা গ্রহন করো ।

জাপানের এক প্রদেশে গোন নামে এক হুলো বিড়াল ছিল । বিড়ালটি দেখতে ছিল খুবই সুন্দর । সে তার চোথ দিয়ে অন্ধকারেও সবকিছু দেখতো দিনের আলোর মতো । সে এক সংগীতশিল্পীর বাসায় থকতো । গোনকে তিনি খুবই পছন্দ করতেন । কোনোকিছুর বিনিময়েই গোনকে হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না সেই শিল্পী ।

ওই বাড়ির কাছেই বাস করতেন এক সুন্দরী রমণী । তার সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল কোমা নামের ছোট্ট একটি পুষি বেড়াল । খুবই মার্জিত, রুচিশীল ও অভিজাত প্রকৃতির বেড়ালটি । অত্যন্ত ভদ্রভাবে সে মাছ, কাঁটা, দুধ ইত্যাদি খেতো । খাওয়ার পর তার ছোট গোলাপি জিভ দিয়ে সে তার মুখ, হাত, পা চেটে পরিষ্কার করতো । এতে তার কোনো ভুল হতো না । তার মালিক সবসময় বলতো, কোমা. কোমা, তুই না থাকলে আমার কী হবে?

একদিন ওই দুই বেড়াল ভ্রমনে বেরুলে  একটি চেরি বৃক্ষের নিচে তাদের দেখা হলো । গাছটি তখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল । প্রথম দর্শনেই বেড়াল দুটির একে অপরকে ভালো লাগে । গোন বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিল যে এবার তার একটি সাথি দরকার, কিন্তু আশপাশে যেসব পুষির সঙ্গে দেখা হতো তাদের কেউই ওর মনঃপুত হয়নি । কিন্তু কোমাকে দেখামাত্র তার মনে হলো, এরকম একটি বেড়াল বন্ধুর কথাই সে এতদিন মনে মনে ভেবে এসেছে । কোমারও মনে হলো গোনই তার বন্ধু হবার যোগ্য হুলো । কিন্তু উভয়ই তাদের পথে বেশ কিছু বাধা দেখতে পেল ।

প্রথমত, গোন তার প্রভু সংগীতশিল্পীর কাছে গিয়ে অনুরোধ জানালো তিনি যেন কোমাকে ওই ভদ্রমহিলার কাছ থেকে কিনে নেন, কিন্তু তিনি রাজি হলেন না । কোমও তার মালিককে অনুরোধ করল তিনি যেন গোনকে কিনে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন, কিন্তু তিনিও কোমার কথায় কর্ণপাত করলেন না । গোন-কোরার ইচ্ছা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলল । অবশেষে তারা পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় ।

এক চাঁদনি রাতে তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল, সারারাত , পরের সারাদিন তারা পথে পথে ঘুরে বেড়াল । তারপর তারা এসে পৌঁছল একটি ভারি সুন্দর পার্কে । সেখানে চমৎকার গাছ-গাছালি, ঠান্ডা আবহাওয়া, স্নিগ্ধ ছায়াঘেরা পরিবেশ ।গোন-কোমার কাছে মনে হলো এ যেন স্বর্গোদ্যান । কিন্তু কাছেই লুকিয়ে অপেক্ষা করছিল বিরাট আকারের একটি রাক্ষস । তার চার পা. বিশাল লেজ, ধারালো দাঁত আর থাবা নিয়ে সে সুযোগ খুঁজছিল ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ।কোমা ঝটপট তার কাছের চেরি গাছটায় উঠে বসলো. আর গোন তার দাঁতমুল খিঁচিয়ে গলার মধ্যে গড়গড় আওয়াপ তুলে তার বন্ধুকে বাঁচাবার জন্য রুখে দাঁড়ালো । কিন্তু রাক্ষসটা ছিল যেমন বৃহদাকার তেমনি ভয়ঙ্কর । তার বিরুদ্ধে গোনের টিকে থাকার কোনো আশাই ছিল না । ভাগ্যক্রমে একটি ভৃত্য ওদের গড়গড় ও তর্জন-গর্জন শুনে পার্কে এসে উপস্থিত হয় । কান্ড-কারখানা দেখে সে রাক্ষসটাকে তাড়িয়ে নিয়ে তার খাঁচায় ঢুকিয়ে দেয়, তারপর গোনকে কোলে তুলে ওই পার্কের মালিক রাজকুমারীর কাছে নিয়ে গেল । অতএব গোন যখন রাজকুমারীর কাছে আর কোমা তখন চেরি গাছের মাথায় বসে আছে । রাজকুমারী গোনকে খুব আদর-যত্ন করলেন, কিন্তু কোমাকে ছাড়া তার কিছুই ভালো লাগল না । কোনো উপায় না দেখে সে মনে মনে ভবলো, একটু ধৈর্য ধরে থাকি, দেখা যাক কী করা যায় ।

গোন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাজকুমারীর কাছে এসেছিল । কিছুকাল ধরে এক দুষ্টু জাদুকর রাজকুমারীর প্রেমে পড়ে গিয়ে তাকে করায়াত্ত করার জন্য নানারকম জাদুর আশ্রয় নিচ্ছিল । সে বিভিন্ন রূপ নিয়ে তার কাছে এসে জ্বালাতন করছিল ।একদিন রাজকুমারী বারান্দায় বসে আপন মনে গুনগুন করে গান গাইছিলেন , হঠাৎ তার মনে হলো জানালা দিয়ে কী যেন উপর দিকে উঠে আসছে । এক নজর দেখেই তিনি বুঝতে পারলেন ওই দুষ্টু জাদুকর নতুন ছদ্মবেশে তার কাছে আসছে । সাপটিকে এঁকেবেঁকে অগ্রসর হতে দেখে রাজকুমারী ভয়ে চিৎকার করে মূর্ছা গেলেন ।গোনও অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে সাপটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার ধারালো দাঁতের কামড়ে সাপটিকে মেরে ফেলল । আর যে জাদুকর এতদিন রাজকুমারীর জীবনকে অভিশপ্ত করে তুলেছিল তার জীবন মুহুর্তে শেষ হয়ে গেল ।

গোন আগেই রাজকুমারীর প্রিয় ছিল, এখন থেকে তার প্রতি রাজকুমারীর ভালোবাসা দশগুণ বেড়ে গেল । কিন্তু কোমাকে সে ভুলতে পারে না, তাই তার সুখ কখনো পুর্ণ হয় না । একদিন সে রাজকুমারীর জানালার চৌকাঠে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে পার্কের দিকে তাকাতেই দেখল বড়োসড়ো কদাকার একটি হুলো বেড়াল একটা ছোটখাটো পুষিকে খুব জ্বালাতন করছে, তাকে ভয় দেখাচ্ছে । গোনের চিরকালের স্বভাব সবল অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের পক্ষ দিয়ে লড়াই করা ।লাফ দিযে সে পার্কে ছুটে গেল, তারপর আচঁড়ে-কামড়ে –খামচে হুলোটাকে পার্কের বাইরে তাড়িয়ে দিল । সে যখন পুষিকে সান্ত্বনা দেবার জন্য ঘুরে তার দিকে তাকালো তখন বিষ্ময়ের সঙ্গে সে লক্ষ করল যে ওই পুষি বেড়াল তো আর কেউ নয়, তারই হারিয়ে যাওয়া বন্ধু কোমা । গোন মিউ মিউ করে কোমাকে ডাক দিতেই সে ওর কাছে ছুটে যায়, তারা বারবার একে অন্যের নাকে নাক ঘঁষে দেয়, আর গড়গড় শব্দ করতে থাকে । তারা দুজনে বন্ধু হয়ে একসাথে বাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করল । গোন কোমাকে রাজকুমারীর কাছে নিয়ে গেল । রাজকুমারী খুশি হয়ে বললেন ঠিক আছে তোমরা দুজন আজ থেকে রাজপ্রাসাদেই থাকবে ।

দুঃখিত!