আগেই বলেছি নবীকে অমান্য করার ফলে কি ভয়াবহ ধ্বংস নেমে এসেছিলো আ’দ জাতির উপর। সে জাতি অহংকারী লোকেরা পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। বেঁচে থাকেন কেবল হজরত হুদ (আঃ) আর তাঁর গুটি কয়েক অনুসারী। এঁরা এবং এদের সন্তানরা অনেক দিন আল্লাহর পথে চলতে থাকেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁরা মহান আল্লাহকে ভুলে যেতে থাকে। পার্থিব মোহ তাঁদের বিপথে পরিচালিত করে। দুনিয়ার আকর্ষণ তাঁদের পরকালীন সাফল্যের কথা ভুলিয়ে রাখে। ফলে পার্থিব উন্নতির জন্যে তাঁরা নবীর পথ থেকে বিচ্যুত হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সুবিধা ভোগীরা সমাজের স্বার্থকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এরা মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে ‘যেমনি নাচাও তেমনি নাচি’ ধরনের অনেক দেব দেবীর মূর্তি বানিয়ে নেয়। এভাবে একদিকে তাঁরা শিরক, কুফর ও জাহেলিয়াতের চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে জৈবিক ভোগ বিলাসের জন্যে পাহাড় খোঁদাই করে প্রাচীন ভারতীয় ইলোরা অজন্তার মতো অসংখ্য মনোহরী প্রাসাদ গড়ে তোলে। এই আল্লাহ্ বিমুখ বৈষয়িক উন্নতি তাঁদেরকে চরম হঠকারি ও অহংকারী বানিয়ে তোলে। এই হঠকারী জাতির নাম কি আপনারা জানেন?
হ্যা, এদের নামই সামুদ জাতি।
সামুদ জাতির আবাস
হুদ (আঃ) এঁর সাথে আ’দ জাতির যে লোকগুলো বেঁচে গিয়েছিলেন, সামুদ জাতি তাঁদেরই উত্তর পুরুষ। পরবর্তী কালে এ বংশের কোন প্রভাবশালী নেতার নামে এরা সামুদ জাতি নামে পরিচিত হয়। প্রথমে ‘আ’দের’ ধ্বংসের পর উত্তর দিকে সরে এসে এরা নিজেদের আবাস ও বসতি গড়ে তোলে। সেকালে এদের আবাস এলাকার নাম ছিল ‘হিজর’। এ কারনে কুরআনে এদেরকে ‘আসহাবুল হিজর’ বা হিজরবাসী নামেও অভিহিত করা হয়েছে। (সূরা ১৫ আল হিজর” আয়াত ৮০-৮৪)। তাঁদের সেই ঐতিহাসিক এলাকার বর্তমান নাম হলো ‘ফাজ্জুন্নাকাহ’ এবং ‘মাদায়েনে সালেহ’। এ স্থানটির অবস্থান হিজাজ ও সিরিয়ার গোটা মধ্যবর্তী অঞ্চল জুড়ে।
বৈষয়িক উন্নতি ও নৈতিক অধঃপতন
সামুদ জাতির বৈষয়িক ও নৈতিক অবস্থা ছিল আ’দ জাতিরই অনুরুপ। সামুদ জাতি সমতল ভুমি আর পাহাড়ের গাত্র খোদাই করে গড়ে তোলে ভরি ভরি সুরম্য অট্টালিকা। এগুলোর প্রযুক্তিগত কারুকাজ ছিল খুবই উন্নত। তাছাড়া এগুলো ছিল অত্যন্ত বিলাসবহুল। ছিল ঝর্নাধারা, বাগবাগিচা, থরে থরে খেজুরের বাগান। এতো সব প্রাসাদ, মনোরম উদ্যান আর স্মৃতিসৌধ তাঁরা কেন গড়ে তুলেছিল? কুরআন বলছে ‘ফারেহীন’ অর্থাৎ তাঁরা এগুলো গড়ে তুলেছিল গর্ব- অহংকার, ক্ষমতা, অর্থ আর প্রযুক্তিগত উন্নতি দেখানোর জন্যে। (সূরা ৪০ আল মুমিনুনঃ আয়াত ৮৩)
কুরআন আরো বলছে, তাঁরা সাধারন মানুষের উপর যুলুম ও শোষন করে তাঁদের দুর্বল করে রেখেছিল। গোটা জনগনের তুলনায় অল্প সংখ্যক লোকের হাতেই কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব।
মূর্তি পূজাকে তাঁরা তাঁদের ধর্ম বানিয়ে নিয়েছিল। আর মূর্তিগুলোর উপর পৌরোহিত্য করতো এসব নেতারা। দেব দেবীর মূর্তির নামেই জনগণকে করা হত শোষন। মনগড়া পূজা অর্চনা করার মধ্যেই ছিল তাঁদের যাবতীয় সুবিধা। ধর্মের মুখোশ পরেই তাঁরা আল্লাহদ্রোহীতার নেতৃত্ব দেয়।
এঁর পয়লা সুবিধা ছিল এই যে, দেব দেবীর নামে নেতাদের পক্ষে নিজেদের মনগড়া আইনই জনগনের উপর চাপিয়ে দেয়া ছিল অত্যন্ত সহজ। দ্বিতীয় সুবিধা ছিল, অসাড় দেব দেবীর পক্ষে ঠাকুরগিরি করে জনগণকে শোষণ করার পথ ছিল অত্যন্ত সুগম। তাছাড়া পুরোহিত সেজে জনগনের উপর কৃতিত্ব করা ছিল খুবই সহজ। এভাবে জনগন ছিল সমাজপতিদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। অর্থাৎ জনগন ছিল সমাজপতিদের হুকুমের দাস। সমাজপতিরা ছিলো যালিম, প্রতারক আর শোষক। এই ঘুনে ধরা নোংরা নৈতিক ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাঁদের শিল্প, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নতির বাহার। বাইরের চাকচিক্য দিয়ে ঢেকে রেখেছিল তাঁদের ভেতরের কলুষতা।
আলোর মশাল নিয়ে এলেন সালেহ
এই অধঃপতিত জাতিকে মুক্তির পথ দেখানোর জন্যে মহান আল্লাহ্ সামুদ জাতির সবচাইতে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি সালেহ কে তাঁদের নবী নিযুক্ত করলেন। আল্লাহর বানী আর হিদায়েতের আলো নিয়ে হজরত সালেহ আলাইহিস সালাম হাজির জনগন এবং জাতির নেতৃবৃন্দের কাছে। অত্যন্ত দরদ ভরা হৃদয় নিয়ে তিনি তাঁদের আহবান জানালেন কল্যাণ ও মুক্তির দিকে। আহবান জানালেন তাঁদের মালিক ও প্রভু মহান আল্লাহর দিকে। বললেন-
সামুদ জাতির নবী সালেহ (আঃ)-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।