যথারীতি রাজ্যে এলান করে দেয়া হলঃ
উজির মহা শান্তিতে বসে আছে তার খাস কামরায় মনটা বেশ ফুরফুরে, রাজা তার এই অভিযানে ব্যার্থ হবে নিশ্চিত এবং ব্যার্থ হলেই রাজার কাছে তার মনবাসনা উপস্থাপন করবে সে । এই আনন্দে সে শারাব খেয়ে মাতল হয়ে নিদ্রায় গেল।
পরদিন রাজ দরবারে সকলে উপস্থিত রাজাকে নতুন কথা শুনানোর জন্য রাজার সভাসদের সদস্যগণও উপস্থিত কিন্তু উজিরের আসন খালি । রাজা কিছুটা বিস্মতি কিন্ত তিনি কালবিলম্ব না করে একজন একজন করে ডাকতে লাগলেন কিন্তু কেউই রাজাকে নতুন কথা শোনাতে পারলনা, সকলের কর্মকান্ডে রাজা যানপরাই হতাশ। ভেবেছিলেন তিনি সবাই তার কাছে নতুন কথার ফুরঝুডি নিয়ে আসবে কিন্তু কোথয় কি, সবই ব্যার্থ । রাজা মনে মনে উজিরের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছেন, ব্যটা জেনে শুনে কেন এই বুদ্ধি দিল? সে জানত এটা হবার নয় তাই সে আজ রাজ দরবারে অনুপস্থিত, হঠাৎ করেই সবার পিছনে এক যবুক চিৎকার দিয়ে রাজাকে বলছে “আমার আছে নতুন কথা” দরবারে হইচই পরে গেল, কি কথা, কি কথা?
রাজা সবাই ধমকের সুরে থামতে বললেন সবাই চুপচাপ, এবার রাজা যুবকটির উদ্দেশ্যে বললেনঃ বল যুবক কি তোমার নতুন কথা?
যুবকটি বলতে শুরু করলঃ
আমার বাবা একজন কৃষক, প্রতিদিন উদয়-অস্ত মাঠে কাজ করেন প্রচন্ড রোদে তাকে খোলা মাঠে কাজ করতে খুবই কষ্ট হত । বাবার এ কষ্ট দেখে আমার মা বাবাকে একটা বুদ্ধি দিলেন মায়ের বুদ্ধি মোতাবেক বাবা পরদিন সকাল বেলা আমাদের বাশঁ ঝার থেকে কিছু বাশেঁর গিরা (যা দিয়ে নতুন বাশ গজায়) আর চারটা কলা গাছ কেটে নিয়ে এলেন, এরপর আমাদের হালের বলদ দুটোকে পাশাপাশি দাড় করালেন, বলদ দুটোর পিঠের ওপর কালগাছ গুলো আড়াআড়ি ভাবে বসালেন এবং কলাগাছ গুলোর ওপরে কিছু মাটি বিছিয়ে দিলেন এবং সেই মাটিতে বাশের গিরা গুলি রোপন করলেন কিছুদিন যেতে না যেতেই গরুর পিঠের ওপরে বিশাল বাশঁ ঝার হল বাবা সেই গরু দিয়ে মাঠে হাল চাষ করতেন যেহেতু গরুর পিঠে বাশঁঝার তাই বাবার গায়ে কোন রোদ লাগতে পারত না, বাবা বেশ আরামেই মাঠে কাজ করতে পারতেন।
এবার বলুন এটা কি নতুন কথা নয়?????????????????
রাজা বেশ খুশি হলেন যুবকটির কথায় তাই তিনি যুবক কে দ্বিতীয় দিন আসার অনুমতি দিলেন। যুবকটি রাজাকে সালাম ঠুকে বিদায় নিল।
ওদিকে উজিরের এই কথা শুনে হার্টফেল কররা মত অবস্থা তাই চিন্তা করতে লাগল কি করা যায় দুর থেকে উজিরের প্রহরী ব্যাপরটি লক্ষ্য করল এবং তার কাছে সে সালাম ঠুকে বলল: হুজুর বিচলিত হবার কোন কারণ নেই যুবক দ্বিতীয় দিন নতুন কথা কোথায় পাবে? আর যদিও বলে তাহলে তাকে তৃতীয় কথাটি বলার আগেই কোন কোন ভাবে জব্দ করে ফেলব
উজির বলল: তারচেয়ে তাকে হত্য করে ফেলি?
প্রহরী: না হুজুর তাকে হত্যা করলে রাজা মশাই টের পেয়ে যাবেন। অন্য কোন ভাবে তাকে শায়েস্তা করতে হবে।
: কিন্তু কি ভাবে?
: তার আগে তাকে দ্বিতীয় কথাটি বলতে দিন।
: ঠিক আছে।
নতুন কথা ২
পরেরদিন রাজ দরবারে উজির সহ সকলেই উপস্থিত, যথাসময়ে সেই যুবকটিও উপস্থিত সেখানে, এবার রাজা তাকে দ্বিতীয় নতুন কথা শুনানোর আদেশ দিলেন আর যুবকটি বলতে শুরু করলঃ
গরুর পিঠে বাশঝারের কারনে বাবা বেশ আরামেই কৃষিকাজ করছিলেন কাজ করে বেশ শান্তি ছিল তার মনে, সেবার ফসলও খুব ভালো হল ফলে আমার মাকে দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়েছিল। এত পরিশ্রম করেও ঠিক সময়ে ধান শুকাতে পারছিলেন না সব ধান সিদ্ধ করা শেষ কিন্তু শুকানোর জায়গা নেই, মা পড়লেন মহা বিপদে । হঠাৎ করেই মায়ের মাথায় একটি বুদ্ধি এল, যেই ভাবা সে কাজ, আমাদের ঘরে ধান, চাল সংগ্রহ করার জন্য মাটির বিশাল পাত্র ছিল যাকে আমরা মটকি বলতাম, মা সেই রকম একটি মটকি ঘরের বাইরে এনে আকাশের দিকে মুখ করে রেখে দিলেন। তখন আমি কিছুই বুঝতে পারিনি, বুঝলাম সন্ধার পরে যখন চারিদিক অন্ধকার তখন আমার মা বাড়ীর উঠোনে সিদ্ধ ধান বিছিয়ে দিলেন, এরপর সেই মটকিটা কাত করে দিলেন ধানগুলোর দিকে আমি আর বাবা তো অবাক মটকি থেকে বেড়হচ্ছে রোদ আর সেই রোদে রাতের বেলাও ধান শুকাচ্ছে আমার মা। মানে মটকির মধ্যে রোদ ধরে রেখেছিলেন তিনি।
বলুন মহারাজ একথা কি আগে কখোনো শুনেছেন?
রাজ দরবারে হইচই পড়েগেল যুবকটির কথাশুনে
কিন্তু উজিরের মেজাজ চরমে তাই সে রাজ দরবার ছেড়ে তার খাস কামরায় চলে গেল এবং তার প্রহরকে ডেকে বললঃ ব্যাটা হারামজাদা তুইকি বললি আর কি হল? এর চেয়ে ওই ব্যাটাকে মেরে ফেললেই ভাল হত। উজির রাগে যখন ফুসছে প্রহরী তখন মুচকি হাসছে প্রহরীর হাসি দেখে উজির আরো খেপে গেল, হাতে ছুরি নিয়ে প্রহরীকে মারতে উদ্যত হল, প্রহরী তখন বললঃ হুজুর মারবেন না আমার কাছে উপায় আছে এবং এতে কাজ হবেই হবে। উজির বললঃ কি উপয়? আছে হুজুর আছে শুনুন, এই বলে উজির ও প্রহরী ফিসফিস করে বুদ্ধি আটল। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠল (ভিলেন স্টাইলে)।
গভীর রাতে উজিরের প্রহরী ও কিছু লোক মিলে রাজ্যের কিছু লোককে কতগুলো মোহর ধরিয়ে দিল এবং কানে কানে বলল যেঃ ওই যুবকটি যা বলবে তোমরা সবাই উত্তরে বলবে “এটা আমরা দেখেছি এটা আমরা শুনেছি” ভুলেও যেন মুখ ফসকে নতুন কথা শব্দটি বের না হয়।
পরদিন সকালে রাজদরবারে গ্রামের সবাই হাজির আজকের নতুন কথা শুনার জন্য
সেই যুবকটিও যথাসময়ে হাজির শুধু রাজার আদেশের অপেক্ষায়…………………….
নতুন কথা ৩
রাজার আদেশ পেয়ে যুবকটি বলতে শুরু করলঃ
মহারাজ, আজকে আমি আমার বাবার কথা নয় আমার নিজের একটি কথা বলব আপনাকে, শুনুন,,,,,,,,,,,,,,,,,,
অনেকদিন আগে এক বিকেলে আমি নৌকা চালাচ্ছিলাম রাজপ্রাসাদের পিছনের খালটায় হঠাৎ দেখি খালের পাড়ের মাটি ভেঙ্গে হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা খালের পানিতে পড়ছে আমি দেখে তৎখনাৎ আমার নৌকাটাকে চালিয়ে সেখানে গেলাম এবং আমার নৌকাটাকে খালের পাড়ে এমন ভাববে রাখলাম যাতে সকল স্বর্ণমুদ্রা গুলো পানিতে না পড়ে আমার নৌকার উপরে পড়ে। দেখতে দেখতে আমার নৌকাটা ভরে গেল স্বর্ণমুদ্রায়!! এবার আমি কোনমতে নৌকাটাকে রাজপ্রসাদের ঘাটে এনে বেধে রাখলাম এবং সোজা রাড়ির দিকে গেলাম মুদ্রা রাখার পাত্রের খোজে ফিরে এসে দেখি আমার নৌকা নেই।
সাথে সাথে রাজ দরবারের সকলে বলে উঠল হ্যা মহারাজ এটা আমরা দেখেছি এটা আমরা শুনেছি। জবাবে যুবকটি বললঃ তাহলে মহারজ আমার সেই স্বর্ণমুদ্রা বোঝাই নৌকা আপনার কাছেই আছে, দেখুন মহারাজ পুরো দরবারের সবাই সাক্ষী, দয়া করে আমার স্বর্ণমুদ্রা বোঝাই নৌকাটি আমাকে ফেরৎ দিন আমি বিদায় হই। আমি জানি আপনি ন্যায় বিচার করেন। আপনি অন্যায় বরদাস্ত করেননা এবার আমার বিচারটুকু করুন মহারাজ।
উজিরের চোখ তো ছানাবড়া, কি করবে সে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ সে চিৎকার করে বলে উঠলঃ এসব মিথ্যে এসব বানোয়াট, মহারাজ আপনি বিশ্বাস করবেন না।
রাজাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে, বিষন্নমনে তিনি বললেনঃ যুবক আমার পুরো রাজ্য লিখে দিলেও তোমর স্বর্ণমুদ্রা বোঝাই নৌকার মূল্য হবেনা এরচেয়ে বরং তুমি রাজ্যের শাসন ভার গ্রহণ কর এবং আমার কন্যাকে বিয়ে কর, বল রাজি?। আপনি আমাদের রাজা আমাদের ত্রতা আপনার কথায় রাজি না হয়ে উপয় আছে? আমি রাজি আপনার প্রস্তাবে কিন্তু তার আগে আপনার উজিরকে এবং তার প্রহরীকে শুলে চড়াতে হবে। রাজা বললেন বেশ তাই হবে আজ সূর্যাস্তের পরেই দতাদেরকে শুলে চাড়ানো হবে, এই বলে রাজা তাদের কে বন্দি করার নির্দেশ দিলেন
স্বপ্ন যখন হারিয়ে যাবে মিথ্যে সুখের মেলায়
কষ্টগুলো ভাসিয়ে দিও, কালো মেঘেরে ভেলায়
যত্ন করে রেখে দেব স্বপ্ন ভাঙ্গার সুখ,
সুখে রাখার জন্যে তোমায় আমি যে উন্মুখ।
সূত্র : আড্ডাসর
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।