হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ৯ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
একদিন ‘আয়িশা ও হাফসা (রাঃ) পরামর্শ করে উট বদল করে নিলেন। রাতে রাসূল (সাঃ) যথারীতি ‘আয়িশার (রাঃ) উটের পিঠে উঠে এলেন এবং হাফসার (রাঃ) সাথে কথা বলতে বলতে পথ চললেন। এদিকে ‘আয়িশা (রাঃ) স্বামী সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হয়ে কাতর হয়ে পড়লেন। পরবর্তী মঞ্জিলে কাফেলা থামলে তিনি বাহনের পিঠ থেকে নামলেন এবং ঘাসের মধ্যে নিজের চরণ দুটি ডুবিয়ে দিয়ে নিজের মনে বলতে থাকলেনঃ
“হে আল্লাহ! আমি তো আর তাঁকে কিছু বলতে পারি না। আপনি একটি বিষাক্ত বিচ্ছু অথবা সাপ পাঠিয়ে দিন, আমাকে দংশন করুন!”
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সহধর্মিণীদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির মহিলা ছিলেন। কেউ কেউ ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ অভিজাত পরিবারের কন্যা। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে এমন দীন-হীন অবস্থায় জীবন যাপন করতে গিয়ে তাঁদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। এ জন্য তাঁরা সমবেতভাবে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকট জীবনযাপনের মর্যাদা বৃদ্ধির আবদার করতে থাকলেন। এর প্রেক্ষিতে পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল হয়, যাতে তাঁদেরকে এ চূড়ান্ত কথা বলা হয় যে, যাঁরা ইচ্ছা স্বেচ্ছায় সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান, তারা করতে পারেন, অথবা এই দীন-হীন অবস্থা মেনে নিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে জীবন যাপন করতে পারেন।
দাইয়শা (রাঃ) ছিলেন কম বয়স্ক। তাই রাসূল (সাঃ) তাঁকে মা-বাবার সাথে পরামর্শ করে জানিয়ে দেন। বলেনঃ “আমি আল্লাহর রাসূলকেই চাই।” সবার আগেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেন এবং রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) অনুরোধ করলেনঃ “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এ সিদ্ধান্তের জন্য আপনি অন্য কাউকে বরবেন না।”
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অনেক সময় ‘আয়িশার (রাঃ) বুকে মাথা রেখে শুয়ে যেতেন। একদিন রাসূল (সাঃ) সেই অবস্থায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময় আবু বকর (রাঃ) কোন এক কারণে মেয়ের উপর উত্তেজিত হয়ে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েন এবং পার্শ্বদেশে ধাক্কা দেন। কিন্তু ‘আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আরামের ব্যাঘাত হতে পারে, তাই মোটেই নড়াচড়া করলেন না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে সকল বস্ত্রে ইন্তিকাল করেন, ‘আয়িশা (রাঃ) অতি যত্নের সাথে তা সংরক্ষণ করতেন। একবার এক সাহাবীকে তিনি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) একটি চাদর ও কম্বল দেখিয়ে বললেন, “এই কাপড়ের তলে তিনি ইন্তিকাল করেছেন।”
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) গোটা জীবন মানবজাতির জন্য আদর্শ। এ কারণে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে খুশী করার জন্য কেমন আচরণ করবে, তা আমরা ‘আয়িশা (রাঃ) ও রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবনে দেখতে পাই। কখনো কখনো রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) ‘আয়িশার (রাঃ) সাথে দারুণ উদার ও খোলামেলা দেখতে পাই। ‘আয়িশা (রাঃ) অতি তুচ্ছ কোন তামাশা বা খেরাধুলা দেখেও তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক আনসারী মেয়েকে প্রতিপালন করতেন। খুব সাদামাটা ঘরে এসে বললেনঃ “‘আয়িশা! কোন গান-গীত তো নেই।”
একবার ঈদের দিন কিছু হাবশী লোক নিযা হেলিয়ে দুলিয়ে পালোয়ানীর কসরত দেখাচ্ছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) স্বামীর নিকট এই খেলা দেখার আবদার করলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন, আর ‘আয়িশা (রাঃ) সেই খেলা উপভোগ করলেন। যতক্ষণ ‘আয়িশা (রাঃ) ক্লান্ত হয়ে নিজে সরে না গেলেন, রাসূল (সাঃ) ততক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
একবার ‘আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে একটু উঁচু গলায় কথা বলছিলেন। এমন সময় পিতা আবু বকর (রাঃ) এসে উপস্থিত হলেন। তিনি মেয়ের এমন বেয়াদবী দেখে রেগে গেলেন এবং মারার জন্য হাত উঁচু করলেন। রাসূল (সাঃ) দ্রুত মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে ‘আয়িশাকে রক্ষা করলেন। আবু বকর (রাঃ) চলে গেলে রাসূল (সাঃ) ‘আয়িশাকে বললেনঃ “আলহামদুলিল্লাহ, আমি তোমাকে কিভাবে বাঁচালাম।”
একবার একটি মেয়েকে সঙ্গে করে রাসূল (সাঃ) ‘আয়িশার (রাঃ) নিকট এসে বললেন, “তুমি কি এই মেয়েটিকে চেন?” ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ “না।” রাসূল (সাঃ) বললেনঃ “সে অমুকের দাসী। তুমি কি তার গান শুনতে চাও?” ‘আয়িশা (রাঃ) শোনার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। দাসীটি দীর্ঘক্ষণ গান গাইলো। এক সময় রাসূল (সাঃ) তার সম্পর্কে মন্তব্য করলেনঃ “শয়তান তার নাকের ছিদ্রে বাদ্য বাজায়।” অর্থাৎ এ ধরনের গান রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অপছন্দ করতেন।
‘আয়িশাকে (রাঃ) আনন্দ দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে গল্পও শোনাতেন। আবার কখনো ধৈর্যসহকারে ‘আয়িশার (রাঃ) গল্পও শুনতেন। কিন্তু এমন ঘনিষ্ঠ ও আনন্দঘন মুহূর্তেও যদি আজানের ধ্বনি কানে আসতো, তিনি তৎক্ষণাৎ সোজা বেরিয়ে যেতেন, যেন কারো সাথে কিছু দেখা না হয়েছে।
একবার এক সফরে ‘আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সফরসঙ্গিনী ছিলেন। চলার পথে এক পর্যায়ে রাসূল (সাঃ) সকল সঙ্গীকে আগে চলার নির্দেশ দিলেন। এরপর ‘আয়িশাকে বললেনঃ “এসো, আমরা দৌড়াই; দেখি কে আগে যেতে পারে।” ‘আয়িশা (রাঃ) ছিলেন হালকা ও পাতলা, তাই তিনি আগে চলে গেলেন।
কিছুদিন পরে আবার এমন দৌড় প্রতিযোগিতার সুযোগ আসে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ “তখন আমি মোটা হয়ে গিয়েছিলাম, তাই রাসূল (সাঃ) আমার আগে চলে গেলেন।” তখন তিনি বললেনঃ “এ হচ্ছে ঐ দিনের বদলা।”
হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ১১ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।