হযরত যায়িদ (রাঃ) -৩পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরপর যখন নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: “কাঠের দোয়াত হাড় নিয়ে যায়িদকে আমার কাছে আসতে বলো।” যায়িদ এলে তিনি আয়াতটি লিখতে বললেন।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পাশে তখন অন্ধ সাহাবী আমর ইবন উম্মে মাকতুম বসা ছিলেন। তিনি বললেন,
— “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার ব্যাপারে কি হুকুম? আমি তো একজন অন্ধ মানুষ।”
তখন নাযিল হয়, “যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই…” অংশটি।
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যায়িদকে বলেন, “এভাবে লিখো।” যায়িদ পরে অবতীর্ণ অংশটি হাড়ের ফাটার মধ্যে লিখে দেন। কারণ পূর্বে যে হাড়ে আয়াতটি লেখা হয়েছিল, তা ফাটা ছিল।
রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ইনতিকালের সাথে সাথে আনসাদের মধ্যে খিলাফতের বিষয়টি প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাঁরা সাকীফা বনী সায়িদায় সমবেত হন এবং তাদের নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করেন প্রখ্যাত আনসারী সাহাবী হযরত সাদ ইবন উবাদা (রাঃ) তাঁরই মনোনীত ব্যক্তিরা সেখানে বক্তৃতা করছিলেন এবং আনসারদের একটি বড় দল ছিলেন তাঁর সমর্থক। এ মজলিসে যায়িদ ইবন সাবেতও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জনতার মতের বিরুদ্ধে তখন কথা বলা সহজ ছিল না। এ জন্য তিনি চুপ করে বসে থাকতেন।
তারপর হযরত আবু বকর, উমার এবং আবু বকর উবাইদাহ (রাঃ) সাকীফা বনী সায়িদায় পৌঁছালেন এবং মুহাজিরদের পক্ষ থেকে উমার (রাঃ) খিলাফাতের বিষয়টি আলোচনা শুরু করলেন।
তখন সর্বপ্রথম যে আনসারী ব্যক্তি তাঁর বক্তব্য সমর্থন করলেন, তিনি ছিলেন জায়িদ ইবন সাবিত।
হযরত হুবাব ইবনুল মুনজির (রাঃ) একজন আনসারী ও বদরী সাহাবী। তিনি যখন তাঁর বক্তৃতায় দুই আমীরের তত্ত্ব পেশ করে মুহাজিরদের লক্ষ্য করে বললেন,
— “আপনাদের মধ্য থেকে একজন এবং আমাদের মধ্যে থেকে একজন আমীর হবেন। এছাড়া আর কিছুতেই আপোষ হবে না।”
তখন জায়িদ ইবন সাবিত উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে এক নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন,
— “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন একজন মুহাজির। এখনও ইমাম হবেন একজন মুহাজির। আর আমরা যেমন ছিলাম রাসূলের (সাঃ)-এর আনসার, তেমনিভাবে এখন হবো ইমামের আনসার।”
এই কথা বলার পর তিনি আবু বকরের (রাঃ) একটি হাত ধরে আনসারদের লক্ষ্য করে বললেন,
— “এই তোমাদের বন্ধু, তোমার হাতে বাইয়াত কর।”
হযরত যায়িদ (রাঃ)-এর এই বক্তব্য ছিল তারই গোত্রের লোকদের বিপক্ষে। তা সত্ত্বেও তিনি স্বীয় অনুভূতি প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি।
তাঁর বক্তব্য শেষ হলে হযরত আবু বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন,
— “আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। যদি এর বিপরীত কিছু বলা হতো, তাহলে হয়তো আমি তা মেনে নিতাম না।”
হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় আগমন করার পর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ ও এলাকা থেকে রাজা, বাদশা, আমীর এবং গোত্র প্রধানদের চিঠিপত্র বিভিন্ন সময়ে তাঁর নিকট আসতে থাকে। যার বেশীর ভাগই ছিল সিরাইসি ও হিব্রু ভাষায়।
মদীনায় তখন এই দুটি ভাষা শুধু ইহুদিরা জানত। তাদের ছদ্ম আবর ইসলামের সঙ্গে চরম দুশমনীপূর্ণ আচরণ ছিল। এই কারণে উক্ত দুটি ভাষা আয়ত্ত করা মুসলমানদের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়।
হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) এ প্রয়োজনে তীব্রভাবে অনুভব করলেন। তিনি হযরত যায়িদের (রাঃ) মেধার পরিচয় পেয়ে তাঁকেই এ কাজের জন্য নির্বাচিত করলেন। এ প্রসঙ্গে হযরত যায়িদের (রাঃ) একটি বর্ণনা উদ্ধৃত হলোঃ
রাসূল (সাঃ) মদীনায় এলে আমাকে তাঁর সামনে হাজির করা হয়। তিনি আমাকে বললেনঃ যায়িদ আমার জন্য তুমি ইহুদিদের লেখা শিখ। আল্লাহর কসম! তারা আমার পক্ষ থেকেইবরানী ভাষায় যা কিছু লিখা থাকে তার ওপর আমার আস্থা হয় না। তাই আমি ইবরনী ভাষা শিখলাম। মাত্র আধা মাসের মধ্যে এতে দক্ষতা অর্জন করে ফেললাম। তারপর রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ইহুদীদেরকে কিছু লেখার দরকার হলে আমিই লিখতাম এবং রাসূলকে (সাঃ) কিছু লিখলে আমিই তা পাঠ করে শুনাতাম।
হযরত যায়িদ (রাঃ) -৫পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।