হযরত যায়িদ (রাঃ) -৩পর্ব

হযরত যায়িদ (রাঃ) -২পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এ কাজে যায়িদকে সহোযোগিতার জন্য খলীফা আবু বকর (রাঃ) আরও একদল সাহাবাকে দিলেন। দলটির সংখ্যা ৭৫ বলে বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে উবাই ইবন কা’ব ও সা’ঈদ ইবনুল আসও (রাঃ) ছিলেন। হযরত যায়িদ খেজুরের পাতা, পাতলা পাথর ও হাড়ের ওপর লেখা কুরআনের সকল অংশ সংগ্রহ করলেন। হাফেজদের পাঠের সাথে তা মিলিয়ে দেখলেন। তিনি নিজেও আল কুরআনের একজন হাফেজ ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবনকালে আল কুরআন সংগ্রহ করেছিলেন।

আয়াতের সত্যতা এবং বিশুদ্ধাতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে বিতর্ক ও ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যেত। এক স্থানে পৌঁছে যায়িদ বললেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকট রজমের আয়াত থেকে শুনেছিলাম। হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ কিন্তু রাসূল (সাঃ) তা লেখার  আনুতি দেননি। মোট কথা কঠোর পরিশ্রম করে হযরত যায়িদ (রাঃ) এ গুরুত্বপূর্ন কাজ সমাপ্ত করেন। তাঁর দ্বারাই সম্পূর্ন আল কুরআন সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করা হয়।

একটি আয়াতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রমানের নিয়ম ধরা হয়েছিল প্রতিটি আয়াতের ব্যাপারে কম পক্ষে দু’ ব্যক্তি সাক্ষ্য। আয়াতটি ছিল হযরত আবু খুযায়মার (রাঃ) নিকট। ইনি সেই আবু খুযায়মা যাঁরা একার সাক্ষ্যকে রাসূল (সাঃ) দুজনের সাক্ষ্যর সমান বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন। এ কারণে হযরত যায়িদ উক্ত আয়াতটির ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন সাক্ষ্যের প্রয়োজন মনে করেননি। তাছাড়া আয়াতটি তাঁর নিজের জানা ছিল। হযরত যায়িদ (রাঃ) কর্তৃক সংগৃহীত ও লিখিত কুরআন মাজীদের এ কপিটি খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) নিজের হিফাজতে রাখেন। তাঁর ইনতিকালের পর দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের (রাঃ) হাতে হয়ে তা তাঁর কন্যা উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসার (রাঃ) এর হাতে পৌঁছে এবং সেখানে সংরক্ষিত হয়।

তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান ইবনুল আফ্ফান (রাঃ)-এর খিলাফতকালে বিভিন্ন অঞ্চলে যখন আল-কুরআনের পাঠে তারতম্য দেখা দেয়, তখন হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়মান (রাঃ) খলীফাকে পরামর্শ দেন, “ইহুদি ও নাসারাদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই আল-কুরআনের একক পাঠ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।” খলীফাও এর গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনুধাবন করেন। তিনি হযরত যায়িদের (রাঃ) সংগৃহীত আল কুরআনের কপিটি হযরত হাফসার (রাঃ) নিকট থেকে চেয়ে নেন। তারপর হযরত যায়িদ ইবন সাবিত, আবদুল্লাহ ইবন জুবাইর, সা’ঈদ ইনুল আসও আবদুর রহমান ইবনুল হারেস ইবন হিশাম (রাঃ) এ চারজন বিশিষ্ট সাহাবিকে তার থেকে কপি করার নির্দেশ দেন। তাঁর হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ মূল কপি থেকে পাঁচ কপি নকল করে দেন। খলীফা উসমান (রাঃ) এই কপিগুলো খিলাফতের পাঁচটি অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মূল কপটি যা মাহসাফে সিদ্দীকী নামে প্রসিদ্ধ -আবার হযরত হাফসার (রাঃ) নিকট ফিরিয়ে দেন। নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওহী লেখার দায়িত্ব বিভিন্ন সাহাবীর ওপর অর্পণ করেছিলেন। এ সকল ভাগ্যবান সাহাবীর অন্যতম হলেন হযরত যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ)।

হযরত যায়িদ কলম, কাগজ, দোয়াত, খেজুর পাতা, চাওড়া ও পাতলা হাড়, পাথর ইত্যাদি নিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পাশে বসে যেতেন। যখন ওহী অবতীর্ণ হতো রাসূল (সাঃ) বলে, যেতেন, আর তিনি লিখে চলতেন। লেখা সম্পর্কে বিশেষ কোন নির্দেশ থাকলে রাসূল (সাঃ) তা বলে দিতেন, আর যায়িদ তদানুযায়ী কাজ করতেন।

ইমামা বুখারী (রঃ) আল-বারা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছের। যখন সূরা আন-নিসার ৯৫ নং আয়াতটি-

গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান এবং সেই মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে—তারা সমান নয়।

হযরত যায়িদ (রাঃ) -৪পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!