হযরত যায়িদ (রাঃ) -২পর্ব

হযরত যায়িদ (রাঃ) -১পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

যাইহোক, খন্দক যুদ্ধে যে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। যায়িদ (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (সাঃ) আমাকে খন্দকে আংশগ্রহণের অনুমতি দেন এবং এক খন্ড কুবতী (মিসরীয় সূক্ষ্ম ও শুভ্র) বস্ত্র ও দান করেন। খন্দক খনন ও মাটি বহনে অংশ নেন। এ অবস্থায় আম্মার একবার রাসূলুল্লাহর (সাঃ) দৃষ্টিতে পড়লে তিনি মন্তব্য করেনঃ বেশ ভালো ছেলে তো। এই ঘটনাক্রমে একমসয় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এই অবস্থায় ইবন হাযাম একটু রসিকতা করে তাঁর কাঁধ থেকে অস্ত্র সরিয়ে নেন। যায়িদ টের পেলেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কাছেই ছিলেন। তিনিও একটু রসিকতা করে ডাক দিলেনঃ ইয়া আবা রুকাদ! ওহে নিদ্রাকাতর ব্যক্তি ওঠো। তারপর তিনি লোকদের এ ধরনের মশকারা করতে নিষেধ দেন। এই খন্দক থেকে নিয়ে পরবর্তীকালের সকল যুদ্ধ ও অভিযানে তিনি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে অংশগ্রহণ করেন।

তাবুক যুদ্ধের সময় হযরত যায়িদের (রাঃ) গোত্র মালিক ইবন নাজ্জার ঝান্ডা প্রথম ছিল আম্মারা ইবন হাযামের হাতে। পরে রাসূল (সাঃ) সেটি যায়িদের হাতে অর্পণ করেন। এতে আম্মার মানে করেন, হয়তো তাঁর কোন ক্রটি হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার কোন ক্রটি হয়েছে কি? তিনি জবাব দেনঃ না, তেমন কিছু নয়। আমি কুরআনের বিষয়টি প্রতি লক্ষ্য রেখে এ কাজ করেছি। যায়িদ তোমার চেয়ে বেশি কুরআন পড়েছি। কুরআনই অগ্রাধিকারযোগ্য।

খলীফা হযরত আবু বকরের (রাঃ) খিলাফাতকালে ভন্ড নবী মুসায়ালামা আল-কাজ্জাবের সাথে ইয়ামামার যুদ্ধ হয়। এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যায়িদও (রাঃ) অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর গায়ে একটি তীর লাগে। কিন্তু তিনি মারাত্মক আঘাত থেকে বেঁচে যান। খলীফা উমারের (রাঃ) আমালে খাইবার থেকে ইহুদীদের বিতাড়নের পর তথাকার ওয়াদি-উল-কুরা’মুসলামানদের মধ্যে বন্টন করা হয়। যায়িদও (রাঃ) একটি অংশ লাভ করেন।

খলীফা উসমান (রাঃ) যখন বিদ্রোহীদের দ্বারা গৃহবন্দী তখন মদীনার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি বিদ্রোহীদের সাথে লড়বার জন্য খলীফার অনুমতি চান। এ সময় যায়িদ ইব্ন সাবিতও (রাঃ) খলীফার সাথে দেখা করে বলেনঃ আনসাররা আপনার দরজায় হাজির আপনি চাইলে তারা আবারও আল্লাহর আনসার হিসাবে কাজ করতে প্রস্তুত। খলীফা বলেনঃ তোমারা যদি লড়াই করার ইচ্ছা করে থাক তাহলে তাতে আমার সম্মতি নাই।

হযরত যায়িদ ইবন সাবিতের (রাঃ) গোটা জীবন সৎকর্মের সমষ্টি। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সেক্রেটারী। ওহী লিখতেন। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) চিঠি-পত্র লিখতেন এবং যে সব চিঠি-পত্র আসতো তা পাঠ করে শোনাতেন। পরবর্তীকালের খলীফা উমারেরও (রাঃ) সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন।

পবিত্র কুরআন ইসলারে মূল ভিত্তি। এর সংগ্রহ ও সংকলন করার মহাগৌরবের অধিকারী হলেন কিতাবুল ওহী যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ)। হযরত রাসূলে কারীমের (সাঃ) জীবনকাল পর্যন্ত হাড়, চামড়া খেজুরের পাতা  ও মুখস্থ হাফেজদের স্মৃতিতে কুরআন সংরক্ষিত ছিলো। বহু সাহাবী কুরআন মুখস্থ করেছিলেন। এ সকল হাফেজদের মধ্যে যায়িদও একজন।

হযরত রাসূলের কারীমের (সাঃ) ইনতিকালের পর আরব উপদ্বীপের একদল মানুষ মুরতাদ (ইসলাম ত্যাগ করা) হয়ে মুসায়লামা আল কাজ্জাবের দলে ভিড়ে যায়। সে ইয়ামামায়ে নিজেকে নবী বলে ঘোষনা করে। হযরত আবু বকর (রাঃ) তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেন। মুসয়ালামা ইয়ামামার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হয়। তবে এ যুদ্ধে ৭০ জন হাফেজ  কুরআন শাহাদাত বরণ করেন।

এ ঘটনার পর হযরত উমারের (রাঃ) অন্তরে কুরআন সংগ্রহ করার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তিনি খলীফা আবু বকরকে (রাঃ) বলেন, এভাবে হাফেজদের শাহাদাতের ধারা অব্যাহত থাকলে কুরআনের বিরাট অংশ এক সময় হারিয়ে যাবার আশংকা আছে। সুতারং বিলম্ব না করে গোটা কুরআন এক স্থানে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নিন। খলীফা তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেন। তিনি যায়িদ ইবন সাবিতকে ডেকে বলেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান নওজোয়ান। তোমার প্রতি সবার আস্থা আছে। তুমি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবদ্দশায় ওহী লিখেছিলে। সুতরাং এ কাজটি সম্পাদন কর।

হযরত যায়িদ (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! তাঁরা আমাকে কুরআন সংগ্রহ করার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা করার চেয়ে একটি পাহাড় সরানোর দায়িত্ব দিলে তা আমার কাছে অধিকতর সহজ হতো। তিনি খলীফাকে বললেনঃ তা ঠিক। তবে ভালো কাজে অসুবিধা কি? তারপরেও যায়িদ কাজটি করতে ইতস্তত করতে থাকেন। খলীফা বিভিন্নভাবে বুঝানোর পর তিনি রাজী হয়ে গেলেন।

হযরত যায়িদ (রাঃ) -৩পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!