হযরত যায়িদ (রাঃ) -২০পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এক শাম সময় একজন মদীনায় এলো জয়তূনের তেল বিক্রি করতে। অনেক ব্যবসায়ী সেখানে কথাবার্তা বললেন। আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) কথাবার্তা করে তেলটি কিনলেন না। মাল সেখানে থাকতেই দ্বিতীয় ক্রেতা উপস্থিত হল। সে আবদুল্লাহ ইবন উমারকে বললেন,
“আমি আপনাকে এত লাভ দিচ্ছি, আমার কাছে বিক্রি করে দিন।”
ইবন উমার রাজী হয়ে গেলেন এবং কথা পাকাপাকি করার জন্য নিজের হাতের ওপর তার হাত রাখলেন। তখনই পিছন থেকে কেউ তাঁর হাত টেনে ধরলেন। তিনি তাকিয়ে দেখলেন, যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ)। যায়িদ বললেন,
“এখন বেচো না। প্রথমে মালটি এখান থেকে সরিয়ে নাও, কারণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমনভাবে বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন।”
একবার তিনি দুপুরের সময় মদীনার গভর্নর মারওয়ানের বাড়ি থেকে বের হলেন। শিষ্যরা তা দেখে ফেললো। তারা মনে করলো, হয়তো বিশেষ কোনো প্রয়োজনের জন্য গিয়েছেন। তারা এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো।
যায়িদ বললেন, “এই সময় তিনি কয়েকটি হাদীস জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছি, তিনটি অভ্যাসের ব্যাপারে মুসলিমের অন্তরে বিরূপ ভাব জন্মাবে না। তাহলো:
১. আল্লাহর জন্য কাজ করা
২. শাসকদের নসীহত করা
৩. জামায়াতের সাথে থাকা।”
উবাদা ইবন সামিত ছিলেন একজন উচ্চ স্তরের সাহাবী। একবার তিনি বায়তুল মাকদাস গেলেন। সেখানে একজন থাবাতী ব্যক্তিকে তাঁর বহনটি একটু ধরতে বললেন। সে ধরতে অস্বীকার করলো। উবাদা তাকে কঠোরভাবে ধমকালেন এবং মারলেন।
কথাটি খলিফা উমারের কানে গেল। তিনি উবাদাকে বললেন, “আপনি এ কেমন কাজ করলেন?” উবাদা বললেন, “আমি তাঁকে ঘোড়াটি একটু ধরতে বললাম, আর সে অস্বীকার করলো। আমি তাকে মারলাম।”
উমারের মেজাজ কিছুটা উত্তেজিত হলো। তিনি বললেন, “আপনি বদলা বা কিসাসের জন্য প্রস্তুত হোন।”
সেখানে যায়িদ ইবন সাবিত উপস্থিত ছিলেন। তিনি এক্ষেত্রে একজন সাহাবীর অপমান সহ্য করতে পারলেন না। তিনি উমারকে বললেন, “আপনি একজন দাসের বদলায় নিজের ভাইকে মারবেন?”
উমারের কথার পর কিসাস পরিবর্তিত হলো এবং উবাদাকে শুধুমাত্র দিয়াত ধার্য করা হলো। উবাদা (রাঃ) দিয়াত আদায় করলেন।
এমনি আর একটি ঘটনা। উমার (রাঃ) যখন শামে ছিলেন, তখন একদিন খবর পেলেন যে একজন মুসলিম একজন জিম্মীকে হত্যা করেছে। উমার হত্যাকারী মুসলিমকে কিসাসের নির্দেশ দিলেন। যায়িদ অতিকষ্টে খলিফাকে বুঝালেন এবং কিসাসের পরিবর্তে দিয়াতে রাজী করালেন।
স্বভাবতই তিনি চুপচাপ থাকতে ভালোবাসতেন। খলিফাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। উমার (রাঃ)-এর অন্যতম সঙ্গী ও পারিষদ ছিলেন। খলিফা উসমান (রাঃ)-এর সাথে তাঁর এত গভীর সম্পর্ক ছিল যে, লোকে বলত, উসমান (রাঃ) তাঁকে খুবই ভালোবাসতেন।
আলী (রাঃ)-এর এবং মুয়াবিয়ার (রাঃ)-এর দ্বন্দ্বের সময় আলীর পক্ষে কোনো যুদ্ধে অংশ নেননি, তবুও তিনি আলীকে দারুণভাবে ভালোবাসতেন এবং তাঁর মাহাত্ম্য ও মর্যাদার প্রবক্তা ছিলেন। আমীর মুয়াবিয়ার (রাঃ)-এর সাথেও সুসম্পর্ক ছিল। শামে গেলে তাঁর গৃহেই উঠতেন।
মারওয়ান ছিলেন তাৎকালীন আরব বিশ্বের একজন অতি বিখ্যাত রাজনীতিবিদ। যায়িদ (রাঃ)-এর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতেন না। একদিন মারওয়ান যায়িদ ইবন সাবিতকে ডেকে রাজনীতি বিষয়ক কিছু প্রশ্ন করলেন। যায়িদ জবাব দিচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি দেখলেন কিছু লোক পর্দার আড়াল থেকে তাঁর বক্তব্য লিখছে।
যায়িদ তৎক্ষণাৎ বললেন, “মাফ করবেন, এতক্ষণ আমি যা কিছু বলেছি তা সবই আমার ব্যক্তিগত মতামত।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) তাঁকে খুবই সম্মান করতেন। একদিন যায়িদ (রাঃ) যখন ঘোড়ায় চড়তে যাবেন, ইবন আব্বাস তাঁর জিনিসটি ধরে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। যায়িদ (রাঃ) বললেন, “আপনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাচাতো ভাই, দয়া করে আপনি সরে যান।”
ইবন আব্বাস (রাঃ) বললেন, “আমাদের উলামা ও বড়দের সাথে এমন আচরণ করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
যায়িদ (রাঃ) বললেন, “আপনার হাতটি একটু বাড়িয়ে দিন।”
ইবন আব্বাস (রাঃ) হাত বাড়ালে যায়িদ হাতে চুমু দিয়ে বললেন, “আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবীর (সাঃ) পরিবার পরিজনদের সাথে এমন আচরণ করতে।”
হযরত যায়িদ (রাঃ) -২২পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
 
					