হযরত যায়িদ (রাঃ) -২০পর্ব

হযরত যায়িদ (রাঃ) -১৯পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

যায়িদ (রাঃ)-সহ কিছু সাহাবীকে নিয়ে উমার (রাঃ) মদীনার নিকটবর্তী জার নামক বন্দরে যান। খাদ্যশস্য ভর্তি জাহাজ পৌঁছালে সেখানে দুটি গুদাম বানিয়ে শস্য সংরক্ষণ করা হয়। উমার (রাঃ) যায়িদকে নির্দেশ দেন, দুর্ভিক্ষে কবলিত মানুষের একটি তালিকা তৈরি করতে এবং প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দকৃত শস্যের পরিমাণও লিখে একটি ফর্দ (রেজিস্টার) বানাতে।

যায়িদ (রাঃ) উমারের নির্দেশ অনুযায়ী রেজিস্টার প্রস্তুত করেন এবং প্রত্যেককে একটি কাগজের চাকতি দেন, যার নিচে উমারের (রাঃ) সীল-মোহর লাগানো থাকে। চাকতি তৈরি ও সীল-মোহর লাগানোর এ প্রক্রিয়া ইসলামে প্রথমবারের মতো ঘটে, এবং এর রূপকার ছিলেন যায়িদ (রাঃ)।

ইসলামের আসল উদ্দেশ্য হলো মহত্তম চারিত্রের পূর্ণতা সাধন। যায়িদ (রাঃ)-এর চরিত্রের যে সকল গুণ-বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল তা হলো— হুব্বে রাসূল (রাসূলের প্রতি গভীর ভালোবাসা), ইত্তেবায়ে রাসূল (রাসূলের অনুসরণ), আমর বিল মারুফ (ভাল কাজ প্রবর্তন), শাসকদের প্রতি উপদেশ ও নসীহত, এবং মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনা।

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) প্রতি প্রবল ভালবাসার কারণে তিনি অধিকাংশ সময় তাঁদের দরবারে উপস্থিত থাকতেন। প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে সরাসরি রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর খিদমতে হাজির হতেন। এমনকি কিছু সময়ে এত সকালে যেতেন যে, রাসূলের (সাঃ) সঙ্গে সেহরী খেতেন। তখন রাসূল (সাঃ) তাঁকে স্বীয় কক্ষে ডেকে নিতেন।

একদিন যায়িদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে দেখতে পান, তিনি খেজুর খেয়ে সেহরী গ্রহণ করছেন। তখন রাসূল (সাঃ) যায়িদকে আহারে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। যায়িদ বললেন, “আমি রোযা রাখার ইরাদা করেছি।”
রাসূল (সাঃ) বললেন, “আমরাও তো এটাই ইরাদা করেছি।” সেদিন যায়িদ (রাঃ) রাসূলের (সাঃ)-এর সঙ্গে সেহরী গ্রহণ করেন। কিছুক্ষণ পর নামাযের ওয়াক্ত হলে তিনি রাসূল (সাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করেন।

যায়িদ (রাঃ) অধিকাংশ সময় রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর পাশে বসে যেতেন। রাসূল (সাঃ) তাঁর সঙ্গে এতখানি খোলামেলা ছিলেন যে কখনো কখনো নিজের হাঁটু যায়িদের (রাঃ)-র ران-এর ওপর রেখে যেতেন। একদিন এমন অবস্থায় ওহী নাযিল হয়। যায়িদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর হাঁটু তখন এত ভারী মনে হচ্ছিল যে, তার ভার সহ্য করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মনে হচ্ছিল যে, আমার ران ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। কিন্তু বেয়াদবী হয়ে আমি এ অবস্থায় এক শব্দও উচ্চারণ করিনি, চুপচাপ বসে থাকলাম।”

রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর নির্দেশ পালন তিনি বিন্দুমাত্র হেরফের না করে করতেন। একবার শামে তিনি আমীর মুয়াবিয়ার (রাঃ)-এর নিকট যান। সেখানে একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। মু’য়াবিয়া (রাঃ) একজনকে হাদীসটি লিখে রাখার জন্য বলেন। যায়িদ (রাঃ) বললেন, “রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আমাকে হাদীস লিখতে নিষেধ করেছেন।” এরপর তিনি তার লিখিত অংশটি মুছে দেন।

আমীর উমারাদের সামনেও তিনি রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর সুন্নাত প্রচারের বিষয়ে চুপ থাকতেন না। মারওয়ান ইবন হাজম, তখন মদীনার গভর্ণর, মাগরিব নামাযে ছোট ছোট সূরা পড়তেন। যায়িদ (রাঃ) বললেন, “এমনটি কেন করছেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তো বড় বড় সূরাও পড়তেন।”

সাহাবা ও তাবেঈনদের কেউ কখনো অজ্ঞতাবশত সুন্নাতের বিপরীতে কোনো কাজ করলে যায়িদ (রাঃ) তাঁকে সতর্ক করতেন। একবার গুরাইবীল ইবন সা’দ (রাঃ) বাজারে একটি পাখি ধরেন। যায়িদ (রাঃ) তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে গিয়ে একটি থাপ্পড় মারলেন এবং পাখিটি ছিনিয়ে উড়িয়ে দিলেন। এরপর তিনি গুরাইবীলকে লক্ষ্য করে বলেন,
“ওরে নিজের শত্রু, তোমার জানা নেই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনাকে হারাম ঘোষণা করেছেন!”

একবার তিনি শুরাহবীলকে বাগানে জাল পেতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন,
“এখানে শিকার করা নিষিদ্ধ!”

হযরত যায়িদ (রাঃ) -২১পর্ব -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!