বিড়ম্বনা- সোহেল রানা

সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙল সবুজের। পাশে তার মোবাইলটা ছিল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে চমকে উঠল সে। আজ লাবণীর সাথে দেখা করার কথা ৯ টার সময়। আজ প্রথম দেখা হবে তাদের। অলরেডি ৮ টা ৩০ বেজে গেছে। এখন সে রেডি হয়ে যেতে যেতে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। প্রথম দেখা করার সময় যদি এমনটা হয়, তার প্রেম তো লাটে উঠবে।

গতরাতে ঘুমানোর সময় মোবাইলে এলার্ম দিয়েছিল সে ৫ টায় যাতে বেজে উঠে। কিন্তু ভুলে মোবাইলটা সাইলেন্ট করা ছিল, তাই আর বেজে উঠেনি।

তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে পাশের বেডে গেল সবুজ। তার পাশের বেডে তখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে হৃদয়। হৃদয় তার রুমমেট। দুজনেই এই বাসাটা নিয়ে ব্যাচেলার থাকে।

সবুজ হৃদয়ের গায়ে হালকাভাবে ধাক্কা দিয়ে তার নাম ধরে ডাকল –
— “হৃদয়… হৃদয়…”

হৃদয় তখন উল্টো কাঁত হয়ে শুয়ে নাক ডাকার শব্দ বাড়িয়ে দিল। সবুজ আবার ডাক দিল,
— “এই হৃদয়… হৃদয়…”

হৃদয় অস্ফুটে শব্দ করল,
— “হুমমম…”
— “তোর সাবানটা একটু দে, আমারটা শেষ হয়ে গেছে।”

হৃদয় ঘুমের ঘোরেই বলল,
— “সাবান ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে।”

— “ধুর বেটা, মজা করিস না তো! এখানে ইঁদুর আসবে কোত্থেকে?”

হৃদয় চোখ না মেলেই বলল,
— “কাল তোর চাইতে বড় একটা ইঁদুর দেখেছি আমি। ইঁদুরটা সাবান খেয়ে ফেলেছে।”

— “বন্ধু, ফাজলামি করিস না তো! লাবণীর সাথে আজ প্রথম দেখা করতে যাচ্ছি। একটু সুন্দর করে গোসল করে ফিটফাট হয়ে যেতে হবে তো!”

হৃদয় কোন উত্তর না দিয়ে নাক ডাকতে শুরু করল। অগত্যা সবুজ কাপড় কাচার সাবান নিয়ে বাথরুমে চলে গেল গোসল করতে।

সে চলে যেতেই হৃদয় ধীরে ধীরে চোখ খুলল। নিজের বালিশটা আলগা করে দেখে নিল সাবানটা আছে কিনা। হ্যা, আছে। মৃদু একটা হাসি দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করল সে।

একটু পর সবুজের বেডে তার ফোনটা বেজে উঠল। কয়েকবার বাজতে দেখে হৃদয় ফোনটা হাতে নিল। স্ক্রিনে দেখল লাবণীর নামটা। ফোন রিসিভ করল সে। সাথে সাথেই একটা মিষ্টি কণ্ঠ শোনা গেল –
— “এই, কোথায় তুমি? আমি অপেক্ষা করছি তো অনেকক্ষণ ধরে।”

লাবণীর কণ্ঠ শুনে হৃদয় কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না। এপাশ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে লাবণী আবার বলল –
— “কি হলো সবুজ, চুপ কেন তুমি?”
— “এ্যা? না মানে হ্যা, আসতেছি! কোথায় আসতে হবে বল?”

লাবণী বলল,
— “গতকালই তো বলেছিলাম, আমি কলেজ গেটের পাশেই আছি।”
— “আচ্ছা, দাঁড়াও, আমি আসতেছি।”

ফোন কেটে দিয়ে হৃদয় মনে মনে বলল,

“এই মেয়েটাকে কিছুতেই সবুজের সাথে লাইন মারতে দেওয়া যাবেনা!”

যে ভাবা, সেই কাজ। সে সবুজের মোবাইল থেকে লাবণীর নাম্বারটা কপি করে নিজের সিমে রাখল। সবুজের সিমটা জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোবাইলটা আগের মতো করে রাখল।

এরপর বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলল,
— “ঐ সবুজ, তাড়াতাড়ি বের হ…”

ভেতর থেকে সবুজের কোন সাড়া নেই। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে চিৎকার,
— “হৃদয়! বন্ধু একটু শুন…”
— “কি হয়েছে?”
— “বাথরুমের পানি শেষ হয়ে গেছে!”
— “তাইলে বের হয়ে আয় না!”
— “না বন্ধু, বের হওয়ার অবস্থা নাই… তুই পানি এনে দে!”

হৃদয় হাসতে হাসতে বলল,
— “ঠিক আছে, এখনি দিচ্ছি।”

তারপর বাড়িওয়ালাকে ডেকে মোটর চালিয়ে দিল।

সবুজ গোসল না করেই বের হয়ে এল। হৃদয় জিজ্ঞেস করল,
— “কি রে, গোসল করবি না?”
— “না, লাবণী অপেক্ষা করছে।”
— “আচ্ছা, যা! আমি গোসল করি তাহলে।”

সবুজ তখন চোখ কুঁচকে বলল,
— “তোর হাতে সাবান এলো কোত্থেকে?”
— “ইঁদুরটা আবার এনে দিয়েছে!”

হৃদয় মুখ টিপে হেসে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল।

সবুজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফেয়ার লাভলি মাখল, চুল আঁচড়াল, বডি স্প্রে মারল।
— “বন্ধু, যাচ্ছি আমি, দোয়া করিস।”
ভেতর থেকে হৃদয় উত্তর দিল,
— “যা বন্ধু, হৃদয়ের দোয়া সবসময় তোর সাথে।”

কিন্তু সবুজ যখন বের হলো, দেখল মোবাইলে “Invalid SIM”! আর লাবণীর নাম্বার নাই!

বাধ্য হয়ে সে রাস্তায় বের হল। পথে এক বাসার কাজের মেয়ে জানালা দিয়ে ময়লা পানি ছুড়ে মারল—তা গিয়ে পড়ল সবুজের গায়ে!

— “বোন, আর পাঁচ সেকেন্ড পরে মারতে পারতেন না?”
— “আপনি পাঁচ সেকেন্ড আগে আসতে পারতেন না?”

এই বলে জানালা বন্ধ!

সবুজ বিরক্ত হয়ে ফিরে এল। আর তখনই হৃদয় ফিটফাট সাজে সানগ্লাস পরে বের হচ্ছে।

সবুজ: “তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
হৃদয়: “ওরে বেটা, গার্লফ্রেন্ড কি শুধু তোর একার আছে?”


লাবণী তখন কলেজ গেটের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। হঠাৎ ফোন—
— “হ্যা লাবণী, আমি সবুজ বলছি। ১০ মিনিট ওয়েট কর।”
— “ঠিক আছে, ১০ মিনিটের বেশি থাকব না।”

কিছুক্ষণ পর এক প্রাইভেট কার এসে থামল। সেখান থেকে নেমে এলো হৃদয়। চশমা খুলে হাসি দিয়ে বলল,
— “আমি জানতাম তুমি আমার সাথে দেখা না করে থাকতে পারবে না।”
— “কে আপনি?”
— “তুমি চিনলে না লাবণী? আমি সবুজ!”

এভাবে গল্পটা চলল যতক্ষণ না শেষের চমকটা এল…

শেষে লাবণী জানাল সে বিবাহিত, আর তার ছোট একটা মেয়ে আছে
সবুজ আর হৃদয় নির্বাক হয়ে গেল।

শেষ দৃশ্য—
মোটা লোকটা এসে হৃদয়কে বলল,
— “আমার গাড়ি কই?”
হৃদয় চাবি হাতে দিয়ে বলল,
— “ধরেন, ঐখানে আছে গাড়ি।”

তারপর দু’জন নীরবে হেঁটে গেল আলাদা পথে।

(সমাপ্ত)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!