হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-৪র্থ পর্ব
হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাকের ঘটনাটি সম্বন্ধে তাফসীরকারকগণ লিখেছেন যে, কাক দুটি ছিল আল্লাহ্র ফেরেস্তা। এ ফেরেস্তা পাঠিয়ে আল্লাহ তায়ালা মৃত দেহকে কিভাবে দাফন করতে হবে তা পৃথিবীর মানুষকে শিক্ষা দানের জন্য এ ঘটনা অবতারণা করেন। যেহেতু ইতোপূর্বে এ পৃথিবীতে আর কোন মানুষ মারা যায় নি। এটাই মৃত্যুর প্রথম ঘটনা। অতএব মৃত্যুর পরের বিধান ও নিয়ম সম্বন্ধে কারো কোন জ্ঞান ছিল না। তাই ঐ ভাবে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। এছাড়া হত্যা করা ও নিসংসতার ঘটনা ও পৃথিবীতে এটাই সর্ব প্রথম।
কাবিল সব জামেলা শেষ করে নিশ্চিন্ত হল, এবার সে মহা আনন্দে একলিমাকে বিয়ে করবে। পৃথিবীতে তাঁর আর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। তাই মনের আনন্দে সে পথ চলতে আরম্ভ করল। হঠাৎ আল্লাহ তায়লার ইঙ্গিতে তাঁর হাটু পর্যন্ত মাটির মধ্যে গেড়ে গেল। কাবিল তা উঠানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করল। বার বার আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করল এবং তাঁর করুণা ভিক্ষা চাইল। আল্লাহ তায়ালা ভাইকে হত্যা করেছে, তাঁর শাস্তি হল জীবন্ত অবস্থায় তাঁকে মাটিতে পুতে ফেলা। তাই তোমার অন্তিম সময় এসে গেছে কোন ক্রমে তোমার রেহাই নেই তখন কাবিল অনুনয়ের স্বরে বলল, হে পরোয়ারদেগার! বেহেস্তে শয়তান আপনার নিষেধ অমান্য করে হযরত আদম (আঃ)-কে নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করিয়েছিলেন তাঁর উপর তো এতবড় শাস্তি অবতীর্ণ হয় নি। এছাড়া হযরত আদম ও হাওয়া সরাসরি আপনার আদেশ লঙ্ঘন করল, তদেরকেও এতবড় শাস্তি প্রদান করেননি। সেখানে আমার উপর এতবড় শাস্তি চাপানো কি অন্যায় নয় ? তখন তাঁকে জবাব দেয়া হল, তাঁরা কেউ রক্তের বন্ধের ভাইকে হত্যা করে নি। তোর অপরাধের তুলনায় তাঁদের অপরাধ শত ভাগের এক ভাগ।
এরপরে কাবিলের কোমর পর্যন্ত মাটি গ্রাস করে নিল। সে বলল, আমার পাপ কার্জের ধরণ সর্বনিকৃষ্ট। অতএব আমাকে আল্লাহ তায়ালা চরম শাস্তি দিবেন। তাই সে চিৎকার দিয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে আরজ করল, হে মহান প্রভু! আপনি আমার পিতা হযরত আদম (আঃ) কে যে উছিলায় ক্ষমা করেছিলেন আমি সে কালেমা পাঠ করছি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। এখন এ কালেমার বরকতে আমাকে ক্ষমা করুন। এরপরে কাবিলকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা মাটিকে হুকুম দিলেন।
অমনি মাটি তাঁকে ছেড়ে দিল। এবার কাবিল নিজকে পাপমুক্ত মনে করল। তাই সে একলিমাকে ধর্ষণ করতে অগ্রসর হল, তখন আল্লাহ তায়ালা কাবিলকে ফেরেস্তা দ্বারা এক নির্জন এলাকায় নির্বাসন দিলেন। সেখানে তাঁকে এক মহাশাস্তির মধ্যে রেখে দিলেন। জনৈক ফেরেস্তাকে নিয়োগ করে দিলেন যে এক কঠিন পাথর দ্বারা তাঁর মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। ক্ষণকাল পরে মাথা ঠিক হবে, আবার পাথর দ্বারা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। আল্লাহ তায়ালা এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁকে শাস্তি প্রদানের হুকুন দিয়েছেন। কাবিল পাথরের প্রতি আঘাতে যন্ত্রণায় আকাশ বিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পুনরায় যখন তাঁর হুশ আসে তখন দ্বিতীয় বার আঘাত করা হয়।
হযরত আদম (আঃ) হজ্জ সমাধা করে দেশে এসে হাবিলকে দেখতে পেলেন না। তখন আদম (আঃ) ও হাওয়া উভয়ের মন খুব অস্থির হয়ে উঠল। কারণ হাবিল ছিল পিতামাতার অত্যন্ত প্রিয়। হাবিল যেমন ছিল ন্যায়পরায়ণ, সৎ, সাহসী তেমনি ধর্মানুরাগী ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই পিতামাতা তাঁকে না পেয়ে খুবই অস্থির হয়ে গেলেন। এক্ষেত্রে কাবিলের কথা তাঁরা ভুলেও স্মরণ করলেন না। কারণ তাঁর চরিত্র ছিল খারাপ। ধর্ম কর্মের বালাই তাঁর মধ্যে আদৌ ছিল না। এজন্য পিতামাতা কখনই তাঁকে সহ্য করত না। সর্বদা তাঁর থেকে দূরে থাকা নিরাপদ মনে করতেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী