হযরত শোয়েব (আঃ) এর কাহিনী -শেষ পর্ব
হযরত শোয়েব (আঃ) এর কাহিনী -২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এমনি অবস্থায় ফেরেশতা জিব্রাঈল এসে এমন ভীষণ আওয়াজ দিলেন যে, তাতে সমস্ত লোকজন মৃত্যু মুখে পতিত হল।
এভাবে অল্পক্ষণের মধ্যেই সমগ্র এলাকাটি প্রানশূন্য একটি নির্জন মরুভূমিতে পরিণত হয়ে গেল।
আল্লাহ্ পাকের গজব সমাপ্তির পর হযরত শোয়েব (আঃ) আল্লাহ্ পাকের দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহ্ পাক! আমি এখন এখানে বসবাস করব, না শহরে চলে যাব? আল্লাহ্ পাকের পক্ষ হতে নির্দেশ হল, হে শোয়েব! তুমি এখন তোমার অনুসারীদের নিয়ে শহরে চলে যাও।
হযরত শোয়েব (আঃ) আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে শহরে ফিরে এসে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর যে সকল মুমিন উম্মতদিগকে সাথে নিয়ে শহরের বাইরে গিয়েছিলেন তাঁদের ঘর-বাড়ী সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন রয়েছে। কেবলমাত্র আল্লাহ্র অবাধ্য বিধর্মী লোকদের ঘরবাড়ীগুলি পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।
অতঃপর মুমিন উম্মতগণ তাঁদের নিজ নিজ ঘর-বাড়ীতে বসবাস শুরু করল। কিছুদিনের মধ্যে ধ্বংস প্রাপ্ত মাদইয়ান নগরী আবার সমৃদ্ধ হয়ে উঠল।
এ ভীষণ ধ্বংস কাণ্ডের পর হযরত শোয়েব (আঃ) তাঁর কওমের মধ্যে পুনরায় বার বছর ধর্ম প্রচার করে ছিলেন। তাঁর কওমটি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে মাঝে মাঝে প্রায়ই তিনি আল্লাহ্ পাকের দরবারে খুব করে কান্নাকাটি করতেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চক্ষু দু’টি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
একদা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহ্ পাকের নবী! আপনি কেন এত কান্নাকাটি করতেছেন? যদি আপনি আপনার চক্ষের মায়ায় কান্নাকাটি করে থাকেন তা হলে আল্লাহ্ পাক তাও পুরা করে দিবেন। আর যদি দোজখের ভয়ে কান্নাকাটি থাকেন, তবে কান্নাকাটি বন্ধ করুন। কেননা আল্লাহ্ পাক আপনার জন্য দোজখ হারাম করে দিয়েছেন। আর যদি আপনি দুনিয়াবী কোন কারণে কান্নাকাটি করে থাকেন, তবে কান্নাকাটি বন্ধ করুন। কেননা আপনার যে কোন আকাঙ্খা আল্লাহ্ পাক পূরন করে দিবেন।
হযরত শোয়েব (আঃ) বললেন, ভাই জিব্রাঈল! ওসব কিছুই আমি চাই না। আমি শুধু আল্লাহ্ পাকের দীদার কামনা করি। আল্লাহ্ পাক যেন আমার এ বাসনা পূরণ করেন।
ফেরেশতা হজরত জিব্রাঈল (আঃ) হযরত শোয়েব (আঃ) এর এ আকাঙ্খার কথা আল্লাহ্ পাকের দরবারে পেশ করলে আল্লাহ্ পাক তাঁকে বললেন, জিব্রাঈল! তুমি শোয়েবকে জানায়ে দাও, রোজ কিয়ামতে অবশ্যই আমি তাঁর বাসনা পুর্ণ করব।
ফেরেশতা হজরত জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহ্ পাকের এ ওয়াদার কথা হযরত শোয়েব (আঃ) কে জানায়ে দিলেন। তা শুনে হযরত শোয়েব (আঃ) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাঁর মনের চিন্তা দুর করলেন।
এরপর হযরত মুসা (আঃ) হযরত শোয়েব (আঃ) এর নিকট আগমন করে কিছুদিন তাঁর সাহচর্যে অবস্থান করে বিদায় হয়ে গেলেন।
কথিত আছে যে, হযরত শোয়েব (আঃ) অন্ধ অবস্থায় বার বছর জীবিত ছিলেন। তিনি দু’শত বিশ বছর জীবিত ছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) তাঁর নিকট হতে বিদায় হবার পর সাত বছর চার মাস জীবিত ছিলেন। কোন কোন তাফসীরকারকদের মতে হযরত মুসা (আঃ) এর নবুয়ত লাভের চার বছর পর হযরত শোয়েব (আঃ) পরলোক গমন করেন।
তাঁর দাফন কার্য সমাধা হয়েছিল শাম এর কোন এক স্থানে।