হযরত শোয়েব (আঃ) এর কাহিনী -২য় পর্ব

হযরত শোয়েব (আঃ) এর কাহিনী -১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত শোয়েব (আঃ) এর নসিহাত ও হেদায়েতের ফলে বেশ কিছু সংখ্যক লোক সৎপথে অবলম্বন করে ধর্মকর্মে যাথারীতি মনোনিবেশ করল। কিন্তু অধিক সংখ্যক লোকই তাঁদের কুপথ পরিত্যাগ করল না। উপরন্ত অন্যান্য লোককে এরূপ বলতে লাগল, তোমরা কেউই শোয়েবের নিকটবর্তী হইওনা। সে যা বলে তাঁর প্রতি আমল করিও না। আমাদের মাল ক্রয় বিক্রয়ের ব্যাপারে আমরা যেমন ইচ্ছা তেমন করি। তাতে তাঁর উপদেশ দেয়ার কি অধিকার? সে কি আমাদের কোন রাজা বাদশাহ যে আমাদেরকে তাঁর উপদেশ শুনতে হবে?

হযরত শোয়েব (আঃ) এ সকল কথা শুনেও তাঁদের প্রতি রাগ না হয়ে বরং বলতে লাগলেন দেখ, তোমরা হযরত নূহ (আঃ), কওমে আদ; হযরত ছালেহ (আঃ), হযরত হুদ (আঃ) এবং কওমে লুতের যমানায় ঘটনাগুলির কথা স্মরণ কর যে, তাঁদের প্রতি আল্লাহ্‌ পাকের পক্ষ হতে কি কঠিন গজব নাযিল হয়েছিল। এখনও সময় আছে, এতদিন যা করে আসছ, আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে তওবা করে ক্ষমা ভিক্ষা করে ভবিষ্যতের জন্য পরিশুদ্ধ এবং বিপদমুক্ত হয়ে যাও। এখনও আল্লাহ্‌ পাকের প্রতি ঈমান এনে খাঁটি ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ কর।

হযরত শোয়েব (আঃ) এর এ সমস্ত উপদেশ তাঁদের শরীরে আগুন জালায়ে দিল। তারা তাঁকে ভয় দেখায়ে বলল যে, তোমাকে আমরা বার বার নিষেধ করেছি, এ ধরণের বাজে কথা নিয়ে আমাদের নিকট আসবে না। কিন্তু তুমি কিছুতেই বিরত হচ্ছ না। আবার তোমাকে সাবধান করে দিলাম। এরূপ বৃথা উপদেশ প্রদান করতে এসে তুমি অকালে তোমার প্রাণটি হারায়ো না। তাঁদের এ ধরণের কথা শুনে হযরত শোয়েব (আঃ) তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে পড়লেন। এমতাবস্থায় একদা ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) তাশরীফ এনে বললেন, হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনার অবাধ্য কওমের প্রতি আল্লাহ্‌ পাক শীঘ্রই গজব নাযিল করবেন। আপনি আপনার অনুসারী ও তাওহীদ পন্থী লোকগণকে নিয়ে এদেশ হতে অন্যত্র চলে যান।  

হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর পরামর্শনুযায়ী হযরত শোয়েব (আঃ) স্বীয় ধর্মভীরু পরিবার ও তাঁর ভক্ত অনুসারীদেরকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করলেন। তা দেখে আল্লাহ্‌ পাকের অবাধ্যচারীগণ তাদেরকে উপহাস করতে করতে বলল, কি হে শোয়েব! আমাদেরকে নানারূপ মিথ্যা ভয়ভীতি দেখায়ে শেষ পর্যন্ত নিজেই লোকজন নিয়ে আমাদের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালায়ে যাচ্ছ?

হযরত শোয়েব (আঃ) জবাবে বললেন, আমি পলায়ন করতেছিনা বরং আল্লাহ্‌ পাকের নির্দেশেই দেশ ত্যাগ করতেছি। কেননা এদেশে শীঘ্রই আল্লাহ্‌ পাকের গজব এসে পড়বে। তাঁর জবাব শুনে বিধর্মীরা আরও বেশী পরিমাণে বিদ্রূপ ও উপহাস করে হাসাহাসি ও করতালি দিয়ে বলাবলি করতে লাগল যে, দেখ শোয়েব এখনও আমাদেরকে মিথ্যা গজবের ভয় দেখাচ্ছ।

হযরত শোয়েব (আঃ) তাঁদের কথায় কোন জবাব না দিয়ে তাঁর লোকজন নিয়ে তিনি উক্ত শহর হতে সামান্য দূরে গিয়ে বসবাস করতে লাগলেন, তাঁর সাথে সর্বমোট এক হাজার সাতশত লোক ছিল।

হযরত শোয়েব (আঃ) যেদিন দেশ ত্যাগ করলেন সে দিনগত রাত্রটি কোন রকম কাটালেন। পরের ভোরেই আল্লাহ্‌ পাকের গজব এসে উপস্থিত হল। দোজখ হতে আগুনের কিছু তাপ ফেরেশতাগণ ঐ দেশে পৌঁছালেন, তাতে সারাদেশ আগুনের মত উত্তপ্ত হয়ে গেল। ঘর-বাড়ী, পথ-ঘাট, মাঠ-প্রান্তর সবই ভীষণ উত্তাপে মানুষ দাড়াবার অযোগ্য হয়ে পড়ল। লোকগণ আগুনে উত্তাপে ঘরে টিকতে না পেরে দৌড়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে মাঠে গেল। মাঠেও একই অবস্থা, বৃক্ষলতা পরিপূর্ণ। বাগানের অবস্থাও তদ্রুপ। মাটির উপর পা রাখা যায় না। ফোস্কা পড়ে যায়। বৃক্ষ লতার উপর হাত রাখলে হাত পুড়ে যায়। নদী-নালা, পুকুর-কুপের পানি গরমে টগবগ করে ফুটতে লাগল। বহু লোক পাগলের ন্যায় দিশেহারা হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে শেষ পর্যন্ত যমিনে উপরে পড়ে প্রাণ হারাতে লাগল। এমনি অবস্থায় হঠাৎ আকাশে কাল মেঘের আবির্ভাব হল। সবদিকেই মেঘ দেখা গেল। লোকগণ মনে করল যে, এ মেঘের নীচে আরাম মিলবে ও শীঘ্রই বৃষ্টি নেমে দেশ শীতল হয়ে যাবে। এরূপ মনে করে বিধর্মীগণ দৌড়ায়ে ঐ মেঘের ছায়ায় আশ্রয় নিতে লাগল। তাতে তারা আরও বিপদ্গ্রস্থ হল। তাতে তারা মরে যেতে লাগল।

হযরত শোয়েব (আঃ) এর কাহিনী –শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।