মুসলমানগণকে সাদরে গ্রহণ খৃষ্টান রাজা নাজ্জাশীর-শেষ পর্ব
মুসলমানগণকে সাদরে গ্রহণ খৃষ্টান রাজা নাজ্জাশীর-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এভাবে দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে মুসলমানগণ দিন কাটাতে লাগলেন। তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর কাফেরগণের মধ্যে অনেকের অন্তরে দয়ার সঞ্চার হল। বনী হাশেমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হাশেম আমেরী গোপনে কিছু খাদ্যদ্রব্যে তুষ্ট এবং আমোদ মত্ত থাকবে আর তোমার আত্মীয় বনী হাশেমের ভাগ্যে এক লোকমা খাদ্য জুটবে না? জোহাইর বলল, তা তো কখনও উচিত হয় না। অবশ্যই আমার প্রাণ কাঁদে। কিন্তু আমি একা কি করতে পারি। আমেরী বলল, আমিও তোমার সঙ্গে আছি। অতঃপর আবুল বোখতারী, ইবন হেশাম, জায়মা এবং মুতয়েমও তাদের সঙ্গে যোগ দিল। সকলে মিলিয়ে চুক্তিপত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলল। তাদের মধ্যে সদাশয় ও সহৃদয় ব্যক্তিগণ বলতে লাগল, বনী হাশেম আমাদেরই আত্মীয়। আমরা আমোদ-প্রমোদ এবং পেট ভরে পানাহার করে জীবন যাপন করব আর তাদের ভাগ্যে একটি রুটিও জুটবে না। এটা কখনও হতে পারে না। তারা সকলে মিলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, এ চুক্তিনামা অবশ্যই ছিড়ে ফেলতে হবে।
কোরাইশগণের সাথে পরদিন আলোচনা চালাবার জন্য জোহাইর সকলকে নিয়ে হেরেম শরীফে উপস্থিত হল। মক্কার সর্দারগণ তাদের অভ্যাস অনুযায়ী হেরেম শরীফে এসে বসল। এমন সময় জোয়াইর ও উপস্থিত হয়ে তাওয়াফ করে কাফেরগণের নিকট এসে বসল। কোরাইশগণকে লক্ষ্য করে বলল, আমরা সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করব আর বনী হাশেম ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মরবে তা আমরা সহ্য করব না। যতক্ষণ পর্যন্ত এ অত্যাচারমূলক চুক্তিপত্র ছিড়ে ছিন্নভিন্ন না করব ততক্ষণ পর্যন্ত বলল, খবরদার; কখনও তা করতে পারবে না। আবু জাহেলের প্রতিবাদ করে জায়মা দাঁড়িয়ে গেল। সে বলল, হে আবু জাহেল! তুমি যখন এ আহাদনামা লিখতে ছিলে তখন আমরা কেউ রাজী ছিলাম না। আবুল বোখতারী উঠে বলল, জায়মা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ সত্য। সঙ্গে সঙ্গে মুতয়েম এবং ইবন হেশাম ও উঠে দাঁড়ায় এবং জায়মার সমর্থন করল।
আবু জাহেল বুঝতে পারল, গতরাত্রে মিটিং করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন সময় আবু তালেব উপস্থিত হল। সে বলল, হে আবু জাহেল! আমি গতরাত্রে মুহাম্মাদকে বলতে শুনেছি আহাদনামায় সমস্ত লেখা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। কেবলমাত্র আল্লাহর নাম বাকী আছে। আবু জাহেল বলল, তা সম্পূর্ণ অবান্তর কথা। আবু তালেব বলল, যদি এ কথা মিথ্যা হয় তা হলে আমি মুহাম্মাদকে তোমাদের হাতে সোপর্দ করে দিব। এ কথার উপর কা’বা গৃহের দরজা খুলে দেখতে পেল, সত্যই আল্লাহর নাম ছাড়া বাকী সমস্ত আহাদনামা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। তখন কাফেরগণ লজ্জিত হয়ে চলে গেল। এদিকে আবু তালেব বনী হাশেম এবং অন্যান্য মুসলমানগণকে নিয়ে পর্বত গুহা হতে বের হয়ে আসলেন।
আবু তালেব উপত্যকায় অবস্থান কালে হযরত আবুযর গেফারী (রাঃ) মদিনা হতে মক্কায় আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ উপদেশমূলক একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
মুসলমানগণকে সাদরে গ্রহণ খৃষ্টান রাজা নাজ্জাশীর-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন