শৈশব_রওশন মতিন

সেই এক অসীম সাহসিক স্পর্ধা এবং পথ যেমন অশেষ,তেমনি চলার গতি ও ছন্দ ক্লান্তিহীন আনন্দে মুখর ।সেই জাগ্রত স্পর্ধার সঞ্জীবনী উন্মাদনায় দিনগুলো হত চঞ্চল,ফাগুনের গাড় লাল বৃত্তে স্বপ্নের শতদল এঁকে যাওয়া কুঁঁিড়র মত,নীলদিগন্তে উড়ে যাওয়া একঝাক মুক্ত পাখির মত আমার প্রিয় শৈশব ।জীবনের অনাগত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়া সেই শৈশব , সেই চিন্তা মুক্ত ,ভাবনা মুক্ত দিনগুলো ,স্বাধীনতার প্রিয় শৈশব । নিজেকে মনে হত স্বাধীনতার অমর সন্তান ।ভর দুপুরে রোদে তেঁতে ফুটবল খেলার অনন্দ,ঝোপে -ঝাড়ে লুকোচুরি খেলা,পেয়ারা গাছে পেয়ারা খাওয়া,বনের ফুল তোলা,বেতঝাড় থেকে বেত কেটে ছড়ি বানানো,দুর্গা পূজার মেলায় বেলুন-বাঁশী কেনা মনের আনন্দে বাজানো ,টগবগে উচ্ছাস।বন্ধুদের নিয়ে হৈ চৈ,ছোট নদীটার তীরে বালুচরে নকল পাহাড় গড়া,উদ্দাম সাঁতর কাটা,অবসরে বুলবুলি আর শালিকের ছানাকে নিয়ে আদর করা…তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। চাঁদনী আকাশে আপ্লুত মায়াবী জোৎস্নার মত এক অনির্বান –অমিতাভ আনন্দ আমার সমগ্র চেতনার মর্মমূলে ঠাঁই নেয় নিশ্চিন্তে সুখের আবাস ভেবে

যেন কোনো আহত বেদনার স্মৃতি চিহ্ন,ছাল-বাকল উঠে যাওয়া কেটে ফেলা তাল গাছের গুড়িটা, কোনো প্রতœতাত্বিক গবেষনার প্রাগৈতিহাসিক ফসিল উপকরনের কথাই মনে করিয়ে দেয়-গুড়িটার উপর বসে বসে কত সময় বয়ে গেছে মনের অতলে অসীম কল্পনার নগ্ন জাল বুনে বুনে।ঝাঁঝালো দুপুরের মৌনতায় সারাটা পাড়া-গাঁ যখন ক্লান্ত হয়ে ঝিমোত, দূরন্ত  ক্ষুধা -–পিপাসায় খাঁ-খাঁ করত মাঠ-ঘাট, বনানী ,মাটি ও প্রকৃতি, আমরা তিনটি দূরন্ত ছেলে দেব শিশুর মত
ঘুরে বেড়াতাম বনে –বাদাড়ে ,বন্ধনহীন অবাধ মুক্ত জীবনের অঙ্গনে।দস্যি ছেলের মত কিছুই যেন পরোয়া করিনা পৃথিবীকে পরাজিত করার কি দুর্বার জীগিসা ও জিজ্ঞাসা মনের অতলান্তে অঙ্কুরিত হত , সে কথা ভাবতেও আজ ভাল লাগে।সামনে মেলে দেয়া সেই দৃশ্যপট,উন্মোথিত উত্থিত জীবন ও জগতের শ্বাশত চিরন্তন বহমান প্রতিচ্ছবি।ছায়াঘন গ্রাম
, দূর দিগন্ত ঘিরে অশেষ নীলিমা,বোবা বৃক্ষের জড়তা, লাল মেটো সড়কের রুক্ষতা,বৃক্ষের ছায়ায় শুয়ে আছে বয়সের ভারে জীর্ন ও পথক্লান্ত পথিক বৃদ্ধ।তীব্র শব্দের গাতময় আবেগ তুলে ছুটে যায় ট্রাকগুলো।এই পারিপাশ্বিকতার প্রভাব কি আমার অজান্তেই আমার আত্মার গভীরে ঠাঁই নিয়েছিল কিনা আমি বলতে পারিনা।তবে এই পারিপাশ্বিকতার প্রভাব হয়তোবা আমার উন্মুক্ত মনের অবচেতনায় আমার জীবনকে ,আমার মানসকে গড়ে তুলেছিল পূর্নতার স্বরুপে।
এক সময় ফিরে সেই গাছটার কাছে কাঁচামিঠা যার নাম। কান্ডের ঠিক উপরে তিনটি মোটা ডাল শাখা মেলে দিয়েছিল যেখান থেকে,তিনটে ডালে হেলান দিয়ে পকেট থেকে সাদা কাগজে মোড়া নুনÑঝাল বের  করে কাঁচা আম জ্ঞখেতাম , আর কত কত যে গল্প করতাম আমরা তিন বন্ধু!ঝাঁঝালো দুপুর,রোদের চাবুক ঝিলমিল করে বিষন্ন নির্জতায়।
আমরা তিন বন্ধু গল্প করতাম অনর্গল।
আসলে আমার জীবনের এই সময় কালটা ছিল আগামীর প্রস্ততি পর্ব।অতি সচেতন ভাবে এবং অত্যন্ত আন্তরিকতা ও বিশ্বস্থতার সাথে দৈনন্দিন ঘটনা প্রবাহের সাথে সংহত করছি নিজের চিন্তাধারা,পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াচ্ছি ,মেলাচ্ছি নিজেকে।পৃথিবীর এই বিরাট রঙ্গমঞ্চের নায়ক নায়িকাদের নাট্র জীবনের দ্বন্দ সংঘাত আমাকে আকর্ষন করে জ্ঞসহজাতভাবেই।আমি জীবনকে কঠিনভাবে ভালবাসতে শিখলাম।অর্জন করলাম ধারালো মানসিক পূর্নতা।কোনো জিনিসের উপর এত বেশী সুক্ষ পর্যবেক্ষন ক্ষমতা,বিশ্লেষন ক্ষমতা আর বিচার শক্তি দেখেআমি নিজেই বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে যাই।অজানাকে জানবার তীব্র কৌতুহল আর  নিজেকে প্রকাশ করার আনন্দ আমাকে পেয়ে বসে।আমার মাঝে মাঝে মনে হত ,চিত্তমুক্তির এই সন্মোহনী মাদকতায় মনে হত,সারা পৃথিবীর আেনাচে কানাচে ঘুরে ঘুরে নিজের চোখে সবকিছু না দেখলে, পৃথিবীর যত ভাষা আছে,যত বই আছে সব না জানলে,না পড়লে বোধ হয় আমার আত্মা কখনো শান্ত হবেনা।
নেপোলিয়নের মত আমার জন্ম যেন বিপ্লব থেকে।কৈশোরের মধ্যাহ্নে এসে ১৯৭১ সারের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও
ও প্রিয় জন্মভূমির উত্তাল গন জাগরন আমার কিশোর মানসকে প্রভাবিত করল খুব সহজেই।আমার প্রতিবাদি সত্তা আহরন করল এই আন্দলন থেকেই তার অগ্নিমন্ত্র।প্রতিদিনের খবরের কাগজের হেডলাইণগুলো পড়তাম।সঙ্গীনের মুখে প্রতিদিন অজস্র রক্তের নদীতে স্নাত হয়ে সেই এগারো বছরের অদম্য কিশোর নিজের কাছেই অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে এক কঠিন প্রতিজ্ঞা
করেছিল। কি সেই প্রতিজ্ঞা সেই সুন্দর দেহিক গড়নের কিমোর প্রতিজ্ঞা করেছিল সেদিন,জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে সত্য ,স্বাধীনতা ও শান্তির স্বপক্ষে আমরন লড়াই চালিয়ে যাবে ।আমরন প্রতিবাদ করে যাবে পরাধীনতা ,জুলুম ও শোষনের

বিরদ্ধে।সময়ের সেই এক ক্রান্তি লগ্ন,যখন সে বাইরের দুনিয়াতে চোখ মেলে তাকালো সে আরোতে খুঁজে পেল তার অনেক বন্ধুকে । তার চরিত্র গড়ে উঠল ইস্পাত কঠোর স্বকীয়তায়।আবার এই সময়ই প্রথম আমার রক্তে টের পেলাম আধ্যাত্মিকতার ছাপ ।আমার জীবন এগিয়ে চলেছে এক সুস্পস্ট পরিনতির দিকে।একটাই লক্ষ্য,হয় স্বাধীনতা না হয় কবর ।
প্রেম,সমাজ  কিংবা সংসার সবকিছুরই জন্য একটি সুনির্দিস্ট সিদ্ধান্ত থাকা ভাল।আর তা হল , কোনো সত্যকে
,কোনো সুন্দরকে ,কোনো পরমকে পাবার সুতীব্র আকাংখা।কিন্তু তাকে হতে হবে ঠিক নিজের মত অবিকল।আমার সমগ্র সত্তাই অপূর্নতার বিরুদ্ধে।আমি চাই ক্রটিহীন পূর্ন সুন্দর।আমার সমস্ত সংগ্রাম যাবতীয় পাপ,অনাচার ও অপূর্নতার বিরুদ্ধে ।মুলত এ সংগ্রাম ও বিক্ষোভ আমার নিজের বিরুদ্ধেই । নিজের পাপ ও অপূর্নতার বিরুদ্ধে ।জীবনের অলি গলি চষে চষে
এই হলো যুক্তি ও চিন্তার স্থির বিশ্বাসের বিশুদ্ধ উচ্চারন ।এবং শেষ পর্যন্ত নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে ।যতদিন না সমস্ত অশুভ,অন্যায়,অসুন্দর,পাপ ও বৈরীতার সমস্ত শেকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়।
মানবজাতির এই অবিশ্বাস ও বিভেদের শেষ কোথায়?এই হিংস্রতা ও হানাহানির শেষ কোথায়?রাজনৈতিক ডমাডোল আজ মিথ্যাচার,দুর্নিতি ও জঘন্যতায় ভরা।সাধারন সরল মানুষকে ধোকা দেবার ,বোকা বানানোর দাবার গুটি, সাপমন্ত্র হল এই তথাকথিত প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মাচারন। সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে সবাই উন্মাদ জুয়া খেলায় মেতে উঠেছে ।  এখন এদের আসল চেহারা ও চরিত্র বেরিযে পড়েছে ।ধর্ম ও রাজনীতি ভন্ডামির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে ।এখন সময় এসেছে
এইসব ক্ষমতালোভী ভন্ডদের মুখোশ উন্মোটন করার,এদের আসল রুপটি সভ্যতার সামনে তুলে ধরার এবং এইসব শয়তানদের প্রতিরোধ ও প্রত্যাখান করার ।নতুবা মানব জাতিকে হিটলারের মত আত্বহননের পথ বেছে নিতে হবে ।
ঈশ্বর ,প্রকৃতি ও মানুষের অপার  ভালবাসার কাছে নতজানু ও কৃতজ্ঞ আমি । আমি বিশ্বাস করি ,শুভবুদ্ধিরই জয় হবে শেষ পর্যন্ত ।
আমি যা লিখি তা যেমন সত্য যা লিখিনা তাও  সত্যি।সাহিত্য,শিল্পকলার স্টাইল,ব্যাকরন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উপাদান  উপকরন অসম্পুর্ন হরে চলবে না ।চলমান গতির আবেগে তাকে নতুন করে জন্ম নিতে নিতে
হবে ।তাকে হতে হবে সময়ের সাহসী সৈনিক,হতে হবে নতুন জীবনের দিক সন্ধানী অভিযাত্রিক ।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!