হযরত আদম (আঃ)-এর প্রথম অপরাধ -২য় পর্ব

হযরত আদম (আঃ)-এর প্রথম অপরাধ -১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

শয়তান বলল, ভাই ময়ূর তুমি আমাকে দয়া কর। তোমাকে আমি প্রতিদান হিসেবে এমন এক এছেম শিখিয়ে দেব যা পাঠ করলে তুমি কোন দ্বীন বৃদ্ধ হবে না । দ্বিতীয়ত কোন দিন তোমার মৃত হবে না। তুমি কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবে না । তৃতীয়ত এ সুখের বেহেস্ত হতে তোমাকে কোন দিন বের হতে হবে না।  এ বলে শয়তান এছেমে আজম পড়ে ময়ূরকে শুনাল । ময়ূর শয়তানের মন মোহনী বক্তৃতায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে নিয়ে বেহেস্তের দরজায় পৌঁছাল । সেখানে প্রহরী হিসেবে ছিল এক সাপ । ময়ূর সাপকে সব ঘটনা বলল। সাপ দরজার এক ছিদ্র দিয়ে শুধু মাথা বের করে ময়ুরের কথা শুনল এবং শয়তানকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে ? শয়তান পূর্বের ন্যায় উত্তর দিল আমি একজন ফেরেস্তা ।

আমি আরশে আজীমের নিচে বসবাস করতাম । সেখানে বসে আমিন এমন এক এছমে আজম শিখেছি যা পাঠ করলে সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয় । সাপ বলল, দোয়াটি আমাকে শিখিয়ে দাও । শয়তান বলল, হ্যাঁ! তোমাকে শিখিয়ে দিতে পারি একটি শর্তে । সেটা হল আমাকে বেহেস্তের মধ্যে পৌঁছে দেবে । সাপ বলল, হযরত আদম বেহেস্তে থাকা অবস্থায় কাউকে বেহেস্তে প্রবেশ করার হুকুম নেই । অতএব এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । তখন শয়তান বলল, আমি তোমার মুখের মধ্যে থেকে বেহেস্ত দেখে আসবো ।

 বাইরে বের হব না । সাপ তখন শয়তানের এ প্রস্তাবে রাজী হল এবং হা করল । শয়তান সাপের মুখে প্রবৃষ্ট হল । অতএব শয়তান সাপকে বলল, আমাকে বিবি হাওয়ার নিকট নিয়ে চল । সাপ শয়তানকে মুখে নিয়ে বিবি হাওয়ার কাছে পৌছাল । তখন শয়তান সজোরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করল । সাপের মুখ থেকে কান্নার শব্দ শুনে বেহেস্তের সকল হুর গেল মান তাঁর কাছে সমবেত হল । এমন কি বিবি হাওয়া ও সেখানে পৌঁছালেন । অতপর সাপকে তাঁর ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করা হল । সে বলল, আমি তোমাদের পরিণামের ভেবে কাঁদছি । আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ও হযরত আদম (আঃ)-কে শীঘ্রই বেহেস্তে থেকে বের করে পৃথিবী নামক এক নিরস ও অশান্তিপূর্ণ স্থানে প্রেরণ করবেন । এ কথা আরশে আজীমের লিপিতে উক্ত রয়েছে । পৃথিবীতে প্রেরণের ব্যাপারটি দ্বীপান্তরে শাস্তি ভোগের শামিল । সেখানে ক্ষুধা, দারিদ্রতা, পীড়া, দুঃখ, পরিশ্রম ও অশান্তি বিরাজমান । সেখানে পরিশ্রম করে খাদ্য জন্মাতে হবে ।

খাদ্য জন্মাতে ব্যর্থ হলে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হতে হবে । সেখানে তোমাদের অসংখ্য সন্তান-সন্ততি জন্ম নিবে। তাঁদের মধ্যে ঝগড়া কলহ লেগেই থাকবে । খুন খারাবী নিত্য নৈমিক্তিক ব্যাপার বলে বিবেচিত হবে। রৌদ্র বৃষ্টির দিন গুজরান করতে হবে। আল্লাহ তায়ালাকে শত শতবার ডেকে ও তাঁর সাক্ষাত লাভ করতে পারবে না । তিনি সহজে বনী আদম (আঃ)-এর কোন দাবী দাওয়া পূরণ করবেন না। মানুষ জন্ম থেকে মৃত পর্যন্ত অবিরাম পরিশ্রম করেও নিজ পেটের আহার সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে না । তখন অন্যায় অসৎ পথ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে । এক কথায় দোজখের যন্ত্রণার চেয়ে সেখানে কোন অংশে নীপিড়ন কম নেই ।

সেই ভয়াবহ কষ্টকর পৃথিবীতে গিয়ে দিবারাত্র চোখের পানি ফেলে তোমরা শুধু কাঁদবে । কিন্তু তাতে তোমাদের দুঃখের কোন অবসান হবে না। আমি তোমাদের সে দুঃখময় জীবনের কথা ভেবে কাঁদছি । বিবি হাওয়া শয়তানকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কথার সত্যতা কিভাবে যাচাই করব । শয়তান বলল, আমি আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে বলছি আমি এক বিন্দু মিথ্যা কথা বলিনি । যদি আমি মিথ্যা বলি তবে যেন আমার উপর আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেস্তাদের লালত পতিত হয়।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত আদম (আঃ)-এর প্রথম অপরাধ -৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।