কদ্রু ও বিনতা

বন্ধুরা, মহাভারতের নাম তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছো? সে এক বিশাল বই। শুধু কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধের গল্পই নয়, আরো কত সুন্দর সুন্দর গল্প যে সেখানে আছে, তা ভাবাই যায় না। আজ তোমাদের সেখান থেকে একটা গল্প শোনাই।

অনেক কাল আগে আমাদের দেশে কশ্যপ নামে এক ঋষি ছিলেন। তাঁর অনেক স্ত্রী’র মধ্যে দুজন স্ত্রীর নাম ছিল কদ্রু এবং বিনতা। সম্পর্কে এঁরা দুজন ছিলেন দুই বোন। দুজনেই সুন্দরী ও এত নম্র স্বভাবের ছিলেন যে কশ্যপ তাদের খুব ভালবাসতেন। তাদের সেবায় খুশি হয়ে একদিন কশ্যপ তাদের দুজনকেই পছন্দমত বর দিতে চাইলেন। দুই বোন তো মহা খুশি। কদ্রু উচ্ছ্বসিত হয়ে চাইলেন সাহসী ও শক্তিশালী এক হাজার সন্তান। আর বিনতার প্রার্থনা ছিল মাত্র দুটি সন্তানের। কশ্যপ হেসে বললেন, “কদ্রুর হাজার সন্তানের পাশে তোমার মাত্র দুটি ছেলের জন্য কামনা, বিনতা? তুমি তো আমার কাছে আরো কত কিছু চাইতে পারতে…!”

বিনতা লাজুক নত মুখে ধীর স্বরে বললেন, “মহাঋষি, অধিক সন্তানে আমার প্রয়োজন নেই। দুটি পুত্রই যথেষ্ট। তবে তারা যেন হয় বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায় উজ্জ্বল এবং কদ্রু-পুত্রদের তুলনায় অনেক বেশি বলবান। বিশ্বে তারা যেন সর্বজনমান্য ও দেবতাদের স্নেহধন্য হয়। এর বেশি আমার কিছু চাইবার নেই।”

বিনতার প্রার্থনায়, তার মনটি যে কত সুন্দর আর পরিষ্কার তা কশ্যপের কাছে প্রকাশিত হওয়াতে তিনি খুব প্রসন্ন হলেন। তিনি কদ্রুর প্রার্থনামত তাকে এক হাজার ডিম দিলেন। এই ডিম ফুটে বেরিয়ে এল এক হাজার বাচ্চা সাপ। এরা হল কদ্রুর সন্তান; তাই কদ্রু পৃথিবীতে নাগমাতা বলে পরিচিত হলেন। আজ চারপাশে যত সাপ দেখা যায়, সবার আদিমাতা হলেন কদ্রু।

আর বিনতাকে তিনি দিলেন দুটি বড় বড় ডিম। আদেশ দিলেন সেদুটিকে সাবধানে রাখতে, যতদিন না তারা নিজেরাই ভেঙে যায়। বিনতা স্বামীর আদেশে ডিমদুটিকে ঈষৎ গরমজলে ডুবিয়ে পরম যত্নে রক্ষা করতে লাগলেন।

ধীরে ধীরে পাঁচশো বছর কেটে গেল। কদ্রুর ছেলেরা বড় হয়ে গেছে। কিন্তু অবাক কান্ড, বিনতার ডিমগুলি যেমন কি তেমনই রয়ে গেছে। এতদিন তিনি যে বিশ্বাসে ডিমগুলিকে যত্ন করেছেন, তা যেন টলে যাচ্ছে। সত্যিই কি তিনি এই ডিম থেকে পুত্রলাভ করতে পারবেন? এখন তো প্রতিবেশীরা নানারকম কথার গুঞ্জন তুলছে; তার বোন কদ্রুও তাকে বক্র দৃষ্টিতে দেখেন, হাসেন। তার কানে কথা আসলে তিনি শঙ্কিত হন।

এইভাবে আরো কিছুদিন কাটল। শেষে একদিন অধৈর্য্য হয়ে চারপাশের শুভার্থীদের প্ররোচনায় বিনতা এক সাংঘাতিক কান্ড করে বসলেন। মস্ত এক লাঠি দিয়ে তিনি একটি ডিমের উপর সজোড়ে আঘাত করলেন। প্রচণ্ড শব্দ করে ডিমটি ভেঙে গেল আর শোনা গেল এক দারুণ হাহাকারময় আর্তনাদ। সেই শব্দ ছড়িয়ে গেল সারা পৃথিবীতে। প্রথমে সবাই ভয় পেয়ে গেলেও পরে সবিস্ময়ে দেখল, এক অনৈসর্গিক আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়েছে, আর তার ভিতর থেকে বেড়িয়ে এল ভীমকায় এক শিশুপুত্র। তার শরীরের রং লাল, অদ্ভুত এক আলো তাকে ঘিরে রয়েছে। কেউ তার সামনে যেতে পারছে না। বিনতা তো এগিয়ে এলেন ছেলেকে কোলে নিতে। কিন্তু একি! হাহাকার করে বিনতা কপালে করাঘাত করছেন কেন? একটু খেয়াল করে প্রতিবেশীরা দেখলেন, সর্বাঙ্গসুন্দর পূর্ণ সুগঠিত শরীর নিয়ে যে ছেলেটি এখুনি তাদের চোখের সামনে ভূমিষ্ঠ হল, তার পাদুটি নেই, তৈরীই হয়নি।

মায়ের বিলাপ শুনে ছেলেটি বলল, “এখন কেঁদে কি হবে মা? আমার এই অবস্থার জন্য তো তুমিই দায়ী। কদ্রুর পুত্রলাভ হল আর তোমার হল না, এই কারণে তুমি এতই দুঃখিত আর ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লে যে মহর্ষির আশ্বাসের কথা তোমার আর মনেই রইল না। আমার পুরো শরীরটা তৈরী হবার জন্য আর কয়েকটা দিন সময় দিলে না, মা?” লজ্জায় দুঃখে নতমুখ বিনতার তখন কপালে আঘাত করা ছাড়া কি-ই বা করার ছিল? একটু পর বিনতা বললেন, “পুত্র, মূর্খ হতভাগিনী মাকে ক্ষমা করে দাও। আমারই ভবিতব্য, কাকে দোষ দেব? এখন যদি বল এই অবস্থায় কি করণীয়।”

ছেলেটি বলল, “আমার নাম অরুণ। আমার চলৎশক্তি নেই, তাই আমার দ্বারা অন্য কোন কাজ হবে না। তুমি পিতাকে বল আমায় সূর্যের রথে বসিয়ে দিতে। আমি সপ্তাশ্ববাহিত সূর্যরথের সারথি হব। তবে যাবার আগে বলে যাই, দ্বিতীয় ডিমটির যেন এই অবস্থা কোরো না। ঠিক সময়ে জন্মালে সে ভুবনবিজয়ী বীর হবে এবং তার দ্বারা তোমার দুঃখ ও কলঙ্কমোচন হবে।” জলভরা চোখে বিনতা মাথা নাড়লেন।

এবার বিনতার আবার প্রতীক্ষার পালা। যথাসময়ে দ্বিতীয় ডিমটি নিজে থেকেই প্রচণ্ড শব্দে ফেটে গেল। আবার সেই আলোর ছটা। তবে এবার আর হাহাকার নেই। সারা বিশ্ব উচ্ছ্বসিত বন্দনার সুরে আনন্দে বিনতাপুত্রকে আহ্বান জানাল। এক সুন্দর পুরুষ সেই আলোর মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে বিনতাকে প্রণাম করল। তার সুগঠিত দেহ দেখলেই বোঝা যায় সে অত্যন্ত বলশালী। তার মুখ বিদ্যা ও বুদ্ধির প্রভায় ঝল্‌মল্‌ করছিল। রাজবেশ পরা সেই পুরুষের পিঠে দুটি ডানা ছিল। সে বিনতাকে বলল, “মা, আমি গরুড়, তোমার পুত্র; মহাঋষি কশ্যপের বরে জন্মেছি। আমি পাখিদের রাজা। তাই আজ থেকে নাগমাতা কদ্রুর মত তুমিও পক্ষীকুলের জননী হলে। বল, তোমার কোন প্রিয় কাজ করে দেব? তবে তার আগে আমায় কিছু খেতে দাও, আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত।” চোখে আনন্দের জল, মুখে হাসি নিয়ে বিনতা ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন তার বাবা কশ্যপের কাছে।

গরুড় চলে গেছে অনেকদিন হল। বলে গেছে মায়ের কোন প্রয়োজন হলেই যেন তিনি তাকে স্মরণ করেন; সে সঙ্গে সঙ্গেই এসে হাজির হবে। বাড়িতে কিছু ঘটনা ঘটছে তার অগোচরে। গরুড়ের প্রশংসায় সকলেই পঞ্চমুখ, এই ব্যাপারটা কদ্রু কিছুতেই আর মেনে নিতে পারছেন না। কই, কেউ তো তার ছেলেদের সম্পর্কে ভাল কিছু বলে না? তাঁর মনে হল, এসব কিছুর জন্য বিনতাই দায়ী। তাই তাঁকে কষ্ট দিয়ে কদ্রু মনের জ্বালা মিটাতে চাইলেন।

একদিন দুই বোন গেছেন নদীতে স্নান করতে। সেখানে একটু দূরে দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের ঘোড়া উচ্চৈঃশ্রবা ঘাস খাচ্ছিল। বিখ্যাত এই ঘোড়াটির রঙ যে সাদা, সেকথা সকলেই জানত। কদ্রু কোন ছুতোয় বিনতার সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য বললেন, “দেখ্‌ দেখ্‌ বোন, কি সুন্দর ওই ঘোড়াটি ! ওর গায়ের রঙ শ্বেতবর্ণ, কিন্তু পুচ্ছ কৃষ্ণবর্ণ…কি সুন্দর !” বিনতা একটু অবাক হয়ে বললেন, “হ্যাঁ দিদি, ওইটি-ই তো ইন্দ্রের বিখ্যাত ঘোড়া উচ্চৈঃশ্রবা। কিন্তু ওটির পুচ্ছ তো কালো নয় ! তুমি কি জানোনা, উচ্চৈঃশ্রবার রঙ সাদা?” কদ্রুও সেকথা জানতেন, তবু ঝগড়া করার জন্যই তিনি তর্ক শুরু করলেন। বিনতারও রাগ হয়ে গেল। তিনিও প্রতিতর্ক করতে লাগলেন। কদ্রু তো এটাই চাইছিলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত মত দিলেন যে আগামীকাল সকালে এসে কাছ থেকে দেখে এই রহস্যের সমাধান হবে। যদি কদ্রুর কথা ঠিক হয় তবে বিনতাকে তাঁর কাছে দাসী হয়ে থাকতে হবে। উত্তেজিত বিনতা অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে তাতেই রাজী হয়ে গেলেন।

সেইদিন রাতে কদ্রু, তার ছেলেদের ডেকে সব ঘটনা বিস্তারিত বলে আদেশ করলেন, বিনতা যেন বুঝতে না পারে এমনি করে সাদা ঘোড়ার লেজ যেভাবেই হোক এক রাতের মধ্যে কালো বানিয়ে দিতে। সমস্ত কালো সাপেরা গিয়ে ঘোড়াটির লেজ এমন ভাবে পেঁচিয়ে রইল যে সেটিকে দূর থেকে কালো দেখতে লাগল। সেইসব বিষধর সাপের নিঃশ্বাসে উচ্চৈঃশ্রবার সারা শরীরও কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেল। পরদিন ভোরবেলা বিনতা দেখলেন, কাল নদীতীরে যে ঘোড়াটি ঘাস খাচ্ছিল, সেটা সাদা নয় কালো। শর্ত অনুযায়ী সেইদিন থেকে বিনতা কদ্রু আর তার ছেলেদের দাসী হিসেবে বহাল হলেন।

 

দীর্ঘকাল গরুড়ের দেখা নেই। সে তার পিতার কাছে যাবার পর তার জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। একদিন হঠাৎ তার মনে হল, মা যেন তাকে ডাকছেন। প্রতিশ্রুতিমত সে চলল তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। সেই সময় বিনতা কদ্রু ও তার হাজার পুত্রকে অন্য একটা দ্বীপে বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছেন। সারা দিনের সমস্ত কাজের শেষে শ্রান্ত ক্লান্ত হলেও বিনতার রেহাই নেই। তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই। দুঃখে যন্ত্রণায় চোখ মুছতে মুছতে বিনতা ভাবছিলেন, দেবতাদেরও প্রিয় এমন দুই মহাবলী পুত্রের জননী হয়েও তাঁর কি কপাল! এই দুঃখের কি শেষ নেই? এমন সময় গরুড় এসে তাঁকে প্রণাম করে দাঁড়াল। সে বিনতাকে কাঁদতে দেখে আর তাঁর মলিন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইল। বিনতা সব খুলে জানালে গরুড় তো রেগে অগ্নিশর্মা। কপট কদ্রুপুত্রদেরকে সে পারলে তখনই মারতে যায় আরকি। কিন্তু বিনতা তাকে শান্ত করে বললেন, যেভাবেই হোক, পণবদ্ধ অবস্থা থেকে তিনি এভাবে মুক্তি পেলে সেটা তাঁরই অপযশ।

মায়ের কথায় একটু শান্ত হয়ে গরুড় কদ্রুর সঙ্গে দেখা করে মায়ের পরিবর্তে সেদিনের দাসত্ব স্বীকার করতে চাইল। কদ্রু ও তার ছেলেদের তো মহা আনন্দ। শক্ত সমর্থ মহাবিহঙ্গের পিঠে চেপে তারা চলল বেড়াতে। ফিরে আসার পর গরুড় কদ্রুর কাছে জানতে চাইল কিভাবে এই পণ থেকে বিনতা মুক্তি পেতে পারেন। কদ্রু ভাবলেন, তাঁর পুত্রেরা অমর নয়। নানা ভাবে মানুষ ও দেবতারা তাদের বিনষ্ট করে থাকে। যে অমৃত খেয়ে দেবতারা অমর হয়েছেন, তা যদি ছেলেদের জন্য পাওয়া যায় তবে এর থেকে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। আর অমৃত সংগ্রহের জন্য গরুড়ের থেকে উপযুক্ত জন আর কোথায়? তিনি বললেন, যদি সে তাঁর পুত্রদের জন্য অমৃত এনে দিতে পারে তবেই বিনতা দাসীত্বপণ থেকে মুক্তি পাবেন।

গরুড়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল, কারণ কাজটা তো সহজ নয়। কিন্তু সে বাক্যব্যয় না করে সম্মতি জানিয়ে মার কাছে বিদায় নিতে এসে বলল, “মা, তোমার এই কষ্টের লাঘব না হওয়া পর্যন্ত আমার স্বস্তি হবে না। আমি শীঘ্রই তোমায় মুক্ত করে নিয়ে যাব।” বিনতার আশীর্বাদ নিয়ে সে চলল পিতার কাছে, কারণ অমৃতের খোঁজ তাঁরই কাছে আছে।

সূর্যমণ্ডলে সেদিন মহা কলরব। কে এক মহাশক্তিশালী পুরুষ এসেছেন অমৃতের সন্ধানে। রক্ষীরা ত্বরিদ্গতিতে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে সংবাদ পাঠাল, “মহারাজ, অমৃতভবনের চারপাশের সপ্তবলয় রক্ষাব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে এক জ্যোতির্ময় পুরুষ অমৃতের জন্য এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে আটকানো আমাদের সাধ্য নয়। আপনি শীঘ্র আসুন।”

সসৈন্য ইন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়েও গরুড়ের মুখে একটুও ভয়ের ছাপ নেই। দেখে ইন্দ্র বিস্মিত হলেন। তবুও প্রথমে শান্তভাবে তার উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন, তারপর তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলেন। গরুড় সবিনয়ে তার আসার কারণ বিবৃত করে জানাল, যেহেতু এছাড়া তার মা-র মুক্তি পাবার কোন আশা নেই, তাই সে অমৃত নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। স্বয়ং দেবরাজের কথায় সে বিচলিত হচ্ছে না দেখে তিনি ক্রমশঃ ক্রুদ্ধ হতে লাগলেন। দুইজনে যুদ্ধ শুরু হল। কিন্তু প্রবল পরাক্রমী ভুবনবিজয়ী বাসব কিছুতেই গরুড়কে পরাস্ত করতে পারলেন না। শেষে তাঁর হাতে উঠে এল দধীচির অস্থি দ্বারা নির্মিত চরমতম অস্ত্র বজ্র। সারা বিশ্ব হায় হায় করে উঠল এই ভয়ংকর অস্ত্রের প্রয়োগের ফল জেনে। কিন্তু গরুড় ভয় পেল না। মহাস্ত্রটিকে প্রণাম করে সে তার পাখা থেকে একটি পালক খসিয়ে নির্ভীকভাবে বজ্রের সামনে পেতে দিল। অস্ত্রের আঘাতে পালকটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল, কিন্তু গরুড়ের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হল না।

এবার ইন্দ্রের মনে ভয় হল। বজ্র যার কাছে ব্যর্থ হয় সে তো সাধারণ মানুষ নয়! তিনি গরুড়ের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করতে হাত বাড়ালেন। তিনি গরুড়কে বোঝালেন, কেন কদ্রুপুত্রদের হাতে অমৃতের মত জিনিষ তুলে দেওয়া যায় না। অমৃত শুধুমাত্র সৎভাবাপন্ন মানুষের জন্য; হীনভাবাপন্ন লোকেদের হাতে অমৃত যাওয়ার অর্থ পৃথিবীর সর্বনাশ ডেকে আনা। দুজনে মিলে অনেকক্ষণ ধরে যুক্তি করলেন, কিভাবে গরুড়ের মায়ের মুক্তিলাভ সম্ভব হয়, অথচ অমৃত নাগদের করায়ত্ত না হয়। শেষ পর্যন্ত দুজনে একমত হয়ে একটা উপায় ঠিক করলেন। সেইমত অবশেষে অমৃত হস্তান্তরিত হল।

নাগলোকে ফিরে গরুড় কদ্রুকে বললেন, “আপনার কথামত অমৃত নিয়ে এসেছি। এবার আমার মাকে মুক্তি দিন।” অমৃতের নাম শুনে উল্লসিত কদ্রু-সন্তানেরা তখুনি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আরকি। কিন্তু গরুড় তাদেরকে বাধা দিয়ে বলল, “অমৃত অত্যন্ত পবিত্র জিনিষ। তাই তোমরা সবাই স্নান করে পরিষ্কার হয়ে এসো। ততক্ষণ এই পাত্রটি এই ঘরে একটি কুশাসনের উপর রক্ষিত থাক (কুশ এক ধরণের ঘাস যার পাতার ধারটা খুব ধারালো)।” কথাটার সারবত্তা উপলব্ধি করে সকলেই স্নান করতে গেল। খালি ঘরে সেই বহু আকাঙ্খিত অমৃতভাণ্ডটি পড়ে রইল। গরুড় তার মাকে নিয়ে চলে গেল।

ইন্দ্রের কাছে এটাই তো সেই বহুপ্রার্থিত সুযোগ। এই মুহূর্তের জন্যই তাঁর গরুড়ের সঙ্গে গোপন আলোচনা হয়েছিল। সকলের অগোচরে তিনি পাত্রটি সরিয়ে নিয়ে গেলেন। একটু পরেই স্নানশেষে সর্পকুল এসে দেখল, একি,কোথায় অমৃত, কোথায় কি? সেই ঘরে কোন পাত্রেরই চিহ্ন নেই। হতাশ সাপেরা সবাই মিলে সেই কুশাসনটিকেই চাটতে লাগল। তারা ভেবেছিল এই কুশাসনের উপরই পাত্রটি রাখা ছিল; যদি এক কণাও সেখানে পড়ে থাকে। কিন্তু ফল হল কি? কুশের ধারে তাদের জিব দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। সেই থেকে সব সাপেরই জিভের অগ্রভাগ দুই ফাঁক হয়ে গেছে। গরুড় ধারে পাশে কোথাও ছিল না, তাই তারা তাকেও দোষ দিতে পারল না।

বন্ধুরা, কদ্রু আর বিনতার গল্প এখানেই শেষ হল। এরকম বহু সুন্দর গল্পের খনি হল মহাভারত। যদি তোমাদের ভাল লাগে, তবে আরেকদিন অন্য গল্প শোনা যাবে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!