খুপড়ি ঘর-ভূতের গল্প

ঘটনাটি আমার এক বন্ধু শুভর। সে ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় ভাবল কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি ঘুরে আসবে। ওদের গ্রাম খুলনার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

যেই ভাবা, সেই কাজ। পরদিন দুপুরে ও বাসে উঠল। খুলনা পৌঁছাতে রাত ৯টা বেজে গেল। ওদের গ্রামটি ছিল এতটাই ভিতরে যে সেখানে যেতে হলে ভৈরব নদী পার হতে হয়। নদী পার হতে হতে তখন রাত ১১টা। গ্রামে সেটা অনেক রাত।

শুভ ভ্যান বা রিকশা পাবার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করল, কিন্তু পেল না। অবশেষে ঠিক করল পায়ে হেঁটেই যাবে। বাড়ির পথঘাট সবই তার ভালো চেনা। উপরন্তু, আকাশে সেদিন চাঁদের আলো থাকায় তেমন অসুবিধা হচ্ছিল না।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে চলে এল পুরনো প্রতাপ জমিদারের বাড়ির সামনে। অমনি ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হল। রাত তখন ১২টা। শুভ সেই জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিল। কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি কিছুটা থামল—তখনো ঝিরঝির করে পড়ছিল। সে ভাবল, এর মধ্যেই রওনা দেবে। তাই করলও।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর শুভ অনুভব করল, ওর পিছনে কেউ আসছে। কিন্তু পিছনে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেল না। আবার কিছুক্ষণ পরে একই অনুভূতি। তবুও সাহস করে হাঁটতে লাগল। শুভ ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করত না। কিন্তু আবারও একই ঘটনা ঘটল। এবার পিছনে তাকিয়ে সে দেখল একটি মেয়ে। ঠিক তখনই আবার জোরে বৃষ্টি শুরু হল।

শুভ পাশের একটি বড় বটগাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াল। সঙ্গেসঙ্গেই মেয়েটিও ওর পাশে এসে দাঁড়াল। মেয়েটি বলল,
— আপনি কি রহমান চেয়ারম্যানের নাতি?
শুভ অবাক হয়ে বলল,
— হ্যাঁ… কিন্তু আপনি আমায় চিনলেন কীভাবে? আপনাকে তো কখনো দেখিনি।
মেয়েটি বলল,
— আমায় অনেকেই চেনে না, কিন্তু আমি সবাইকেই চিনি।

মেয়েটির এই অদ্ভুত কথায় শুভ কিছুটা বিস্মিত হল। এরপর মেয়েটি বলল,
— ওই যে তালগাছগুলোর পাশে যে একটা ঘর দেখছেন, ওটাই আমাদের ঘর। আমি আর আমার দাদি থাকি। আজ রাতে মনে হয় না বৃষ্টি থামবে… চলুন আমাদের ঘরে। কাল সকালে আপনাকে পৌঁছে দেওয়া যাবে।

প্রথমে শুভ কিছুটা ইতস্তত করলেও পরে রাজি হল এবং মেয়েটির সাথে গেল। গিয়ে দেখল, তার দাদি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভকে দেখেই বলল,
— আসছো বাবা… তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

বৃদ্ধার এমন কথায় শুভ বিস্মিত হল, কিন্তু কেন যেন এক অদ্ভুত টানে কিছু না বলে ঘরে ঢুকল। বৃদ্ধা তাকে মাথা মুছার জন্য একটি পুরনো কাপড় দিল। তারপর তার নাতিকে বলল,
— ওকে কলপাড়টা দেখিয়ে দে।

মেয়েটি শুভকে কলপাড়ে নিয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে ফিরতেই দেখল, হরেক রকম খাবার নিয়ে বৃদ্ধা বসে আছে। শুভ খাবার খেল। খাওয়ার পর তাকে পাশে একটি রুমে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হল। শুভ ঘুমিয়ে পড়ল।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল—দেখল, সেই মেয়েটি আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে ডাকছে। বলল,
— চুপ… দাদি ঘুমাচ্ছে, চলুন বৃষ্টিতে ভিজি।

শুভরও মন্দ লাগল না, রাজি হয়ে গেল। দু’জনে বৃষ্টিতে ভিজছে, খুবই মজা করছে। হঠাৎ শুভ দেখল, মেয়েটি আর পাশে নেই। চারদিকে তাকিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করল, কিন্তু পেল না। হঠাৎ অদ্ভুত এক হাসির শব্দ শুনতে পেল।

শুভ সেই হাসির উৎস খুঁজতে গিয়ে পাশের পুকুরপাড়ে তাকাল—আর তখনই সে যা দেখল, তা ভয়ঙ্কর!
সে দেখল, মেয়েটির পায়ের পাতার দিক উল্টো। সারা গায়ে অসংখ্য বড় বড় লোম, চোখ দুটো গভীর গর্তের মতো, আর লম্বায় প্রায় ১০ ফুট। আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার—তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সেই বৃদ্ধা, তবে আগের মতো নয়…

বৃদ্ধা জীবন্ত একটি মুরগির পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে চিবিয়ে খাচ্ছে!

এই দৃশ্য দেখে শুভ প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করল। পুকুরে একটি সাকো ছিল—সে সাকো পেরোতে লাগল। পিছনে ফিরে দেখল, সেই বুড়িও ওর পেছনে আসছে আর সাকোটা জোরে জোরে দুলাচ্ছে। শুভ তখন প্রাণপণে আয়াতুল কুরসি পড়ছে।

কোনোমতে সাকো পার হয়ে ক্লান্ত হয়ে গেল, তবুও দৌড়াতে লাগল। অবশেষে ওদের বাড়ির উঠানে পৌঁছে জোরে চিৎকার করতে লাগল, দরজায় কড়া নাড়তে লাগল। পিছনে তাকিয়ে দেখল, সেই বুড়িও ভাঙা ভাঙা পায়ে এগিয়ে আসছে। ঠিক তখনই শুভর নানা দরজা খুলে দিলেন, আর শুভ সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেল।

পরদিন সকালে শুভর ঘুম ভাঙলে দেখল, সে বিছানায় শুয়ে আছে আর চারপাশে অনেক মানুষ। পরে সে সবাইকে ঘটনা খুলে বলল। ঘটনা শুনে সবাই বলল—
সেই রাতে নাকি কোনো বৃষ্টিই হয়নি! আর পুকুরপাড়ে যে খুপড়ি ঘরের কথা সে বলেছে, সেখানে তেমন কোনো ঘরই নেই।

পরে শুভর নানা তাকে এক হুজুরের কাছে নিয়ে যান। হুজুর সব শুনে বলেন—
যে মেয়েটিকে সে দেখেছে, সেটা হয়তো কোনো পরী ছিল। কিন্তু সেই বৃদ্ধা সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারলেন না…

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!