বিবি হালিমার কোলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সাত দিন মাতা আমেনার দুধ পান করেন। তারপর আটদিন ছুয়াইবার দুধ পান করেন। এ ছুয়াইবা আবু লাহাবের দাসী ছিল। মহানবীর জন্মের সংবাদ নয়ে সর্ব প্রথম সে আবু লাহাবের নিকত পৌঁছে দিল। আবু লাহাব হামজাকেও কিছুদিন দুধপান করিয়েছিলেন। তাই হযরত হাজমা (রাঃ) মহানবীর চাচা হলেও এ সম্পর্কে তাঁর দুধ ভাই। ছুয়াইবার পর খাওলা বিনতে মুনজের তাঁর পর আরো তিন জন মহিলা তাকে দুধ পান করান। এভাবে একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর বিবি হালিমার কোলে আসেন। তৎকালীন সম্মানী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ শহরের পাশ্ববর্তী মহল্লার নিজ নিজ সন্তানকে প্রতিপালন করা পছন্দ করতেন। কারণ শহরের লোকদের তুলনায় গ্রামবাসীদের ভাষায় অনেক বালাগত পাওয়া যায় তাদের ভাষা শুদ্ধ ও মধুর ছিল। তাই সদ্যজাত শিশুকে সকল গ্রামাঞ্চলে বা শহরতলীতে প্রতিপালন করার উদ্দেশ্যে ছিল তাদিগকে শুদ্ধ ও সুমধুর ভাষা শিক্ষা দেয়া।

চিরন্তন প্রথা অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে ধত্রীগণ, সম্ভ্রান্ত ও শরীফ পরিবারের সন্তান পাওয়ার আশায় মক্কা শহরে আগমন করল। এ ছিলছিলায়, তায়েফের বনু ছায়াদের একদল ধাত্রী মক্কায় এসে শিশুর সন্ধানে বের হয়ে পড়ল। এতিম শিশু রাসূল (সাঃ) কে কেউই গ্রহণ করল না। কারণ পিতৃহীন শিশুর লালনপালনের খুব বেশী বিনিময় লাভের আশা নেই।

বিবি হালিমা ছাদিয়া একটি দুর্বল গাধার উপর উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁর সওয়ারী মস্থর গতিতে মক্কায় পৌঁছাতে অনেক বিলম্ব হয়ে গেল। যখন অপরাপর ধাত্রীগণ শিশু সন্তান নিয়ে বাড়ী ফিরতেছে তখন হালিমার উটনী মাত্র মক্কায় পৌঁছেছে। ধনী লোকদের সন্তান সবই তারা গিয়েছে, বিবি হালিমা কোন সন্তান পেলেন না। খালি হাতে ফিরে যাওয়াও ভাল মনে করলেন না। তাই এতিম শিশু মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে গ্রহণ  করলেন। বিবি হালিমা যখন বালক মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর চেহারা দেখলেন খোদা প্রদত্ত নূর এবং ঐশ্বরিক রূপ তাঁর চেহারায় দেখতে পেয়ে শিশু মুহাম্মাদের জন্য তিনি দেওয়ানা হয়ে গেলেন। এক দৃষ্টিতে বিবি হালিমা ও তাঁর স্বামীর অন্তরকে কেড়ে নিল। হালিমা যখন তাকে বুকের সাথে মিলালেন, তখন বিবি হালিমার স্তনে প্রচুর দুধের সঞ্চার হল। হযরত আমেনা হতে অনুমতি নিয়ে বিবি হালিমা বিদায় নিলেন। হালিমার সঙ্গী ধাত্রীগণ বহু পূর্বেই রওয়ানা হয়ে চলে গিয়েছিল এবং তাদের সওয়ারীও খুব দ্রুতগামী ছিল। বিবি হালিমার গাধাটি অতিশয় দুর্বল ছিল। বহু দুররা লাগায়ে ওটাকে চালাতে হয়েছে। যখন হযরত রাসূলে পাক (সাঃ)-কে নিয়ে বিবি হালিমা তাতে আরোহন করলেন, তখন ওটা এত দ্রুত চলতে লাগল যে, সকলেই অবাক হয়ে গেল। তাঁর বহু পূর্বে রওয়ানা দেয়া সওয়ারী সমূহকে পিছনে ফেলে সকলের পূর্বে ঘরে পৌঁছালেন।

হালিমার উটনীর শুষ্ক স্তন দুধে ভরে উটল। তাঁর ক্ষীন বকরিগুলি সবল হয়ে গেল। বিবি হালিমার উট বকরিগুলি প্রত্যেক দিন পেট ভরে বাড়ী ফিরে। অন্যান্য লোকজন বলতে লাগল হালিমার প্রাণীগুলি যেখানে চারণ করে আমাদের প্রাণীগুলিও সেখানে দিতে হবে। কিন্তু দেখা গেল একই ময়দানে ঘাস খাওয়ায়েও অন্যান্যদের প্রানী হালিমার প্রাণীর ন্যায় পেট ভরে আসে না। শিশু মুহাম্মাদ শুধু এক স্তনের দুধ পান করতেন। অপর স্তন তাঁর দুধ ভাই আবদুল্লাহর জন্য রাখত।

এ সকল ঘটনায় তাদের বিশ্বাস হল যে, নবাগত শিশুটির বরকতেই এরূপ হচ্ছে। তায়েফেও তখন ভীষণ দুর্ভিক্ষ ছিল। মহানবীর বরকতে তাও দূর হয়ে গেল। তিনি দুধ পান করার বয়সেও কোন সময় উলঙ্গ হন নি। কাপড়েও

পেশাব পায়খানা করেননি। হযরত হালিমা সর্বদাই তাঁকে দৃষ্টির আওতায় রাখতেন। চোখের আড়ালে যেতে দিতেন না।

শায়মা নাম্মী হালিমার এক কন্যা ছিল। একদিন শায়মার সঙ্গে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) চারণ ভূমিতে চলে যান। হযরত হালিমা তাঁকে কিছুক্ষণ না দেখতে পেয়ে অত্যন্ত অস্থির ও অতিশয় চঞ্চল হয়ে উঠলেন এবং পুত্র মুহাম্মদের অনুসন্ধানে তৎক্ষণাৎ বের হলেন। শায়মার সঙ্গে দ্বিপ্রহরের প্রখর রোদ্রে খোলা আকাশের নিচে তপ্ত বালুকা রাশির উপর দেখতে পান বালক হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে। তিনি শায়মাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি কেন এ প্রখর রোদ্রের মধ্যে তাঁকে এনেছ? শায়মা উত্তরে বলল, ওহে আম্মাজান! আমার কুরাইশী ভাইকে রোদ্রে স্পর্শ করতে পারে না। আমি দেখতে পেয়েছি তাঁর মাথার উপর এক খণ্ড মেঘ এসে তাঁকে ছায়া প্রদান করছে। তিনি যখন চলতেন মেঘখণ্ড তাঁর সাথে চলত এবং তিনি যখন দাঁড়াতেন মেঘখণ্ড দাড়ায়ে যেত।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।