ইবলিসের অহংকার
হযরত আদম (আঃ) -এর নামাজ শেষ হবার পরে তাঁর জন্য সেখানে মণিমুক্তা, স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা আবৃত অতি সুন্দর একখানি সিংহাসন আনায়ন করা হল এবং সেখানে তাকে বসতে বলা হল । হযরত আদম (আঃ) সেখানে বসলেন । অতপর আল্লাহ তায়ালা উপস্থিত সব ফেরেস্তাকে হুকুম দিলেন, তোমরা হযরত আদম (আঃ) সম্মান প্রদর্শনের লক্ষে সেজদা কর । আল্লাহ তায়ালা হুকুমের সাথে সাথে কোটি কোটি ফেরেস্তা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে বিরাট শব্দ করে সেজদায় পতিত হল । সেজদা থেকে মাথা তুলে দেখল আজাজিল ছাড়া সকলে সেজদা করেছে । সে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে । সকল ফেরেস্তা তখন দ্বিতীয়বার পুনঃ সেজদায় গেল । এবারের সেজদার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করা । আর প্রথম বারের সেজদার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ্র হুকুম পালন করা । দ্বিতীয় সেজদা থেকে উঠে ফেরেস্তা দেখল আজাজিল একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ।
আল্লাহ তায়ালা আজাজিলকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি করে আমার হুকুম অমান্য করলে! আজাজিল উত্তর দিল, প্রভু! আপনি আদম (আঃ) -কে সাধারণ মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন দিয়ে । অতএব আদম (আঃ) কে সেজদা করা অপমানজনক মনে করে আমি সেজদা করিনি । তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুই নাফারমান, তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা । আল্লাহ তায়ালার এ হুকুমের সাথে সাথে তাঁর শরীররে বেহেস্তি পোশাক খুলে পড়ে গেল এবং তাঁর চেহারা কদাকার ও পশুর আকৃতি ধারণ করল । আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি লানত বর্ষণ করলেন । সব ফেরেস্তাগণ তাঁর প্রতি অভিসম্পাত বানী উচ্চারণ করলেন ।
আল্লাহ তায়ালা তখন তাকে ইবলিস বলে সম্বোধন করেন । তাকে বেহেস্তের বাইরে এক জায়গায় নির্বাসন দেয়া হয় । ইবলিস তখন আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত তুলে বলল, হে আল্লাহ আমি আপনার একজন খাছ বান্দা হিসেবে সম্মান লাভ করেছিলাম । ছয় লক্ষ বছর যাবত আপনার বন্দেগী করেছি এবং ফেরেশতাগণকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছি । কোন দিন সামান্য একটি অন্যায়, অপরাধ করি নি ।
মান মর্যাদার ক্ষেত্রে আপনি আমাকে সর্বোবচ্চ সম্মান প্রদান করে ছিলেন । এমন একটি সামান্য আদেশ লঙ্ঘন করার দায়ে আপনি আমাকে চির অভিশপ্ত বলে ঘোষণা দিলেন । এটা কি আমার প্রতি ন্যায় কাজ করেছেন ? আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার আদেশ অমান্য করার দুঃসাহস যেমন তোমার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তেমনি তুমি অহংকারীতে লিপ্ত হয়েছ । আর জেনে রেখ অহংকারী কোন দিন আমার রহমত লাভে সক্ষম হবে না ।
তখন শয়তান বলল, হে মেহেরবান খোদা! আপনি অন্তত আমার জীবনের এবাদতের বিনিময়ে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করুন এবং বনী আদম (আঃ)-এর চোখের আড়াল থেকে তাদের শিরা উপশিরায় পরিভ্রমণের সুযোগটুকু দান করুন! আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমার আবেদন মঞ্জুর করা গেল । তুমি লানতের ডুরি নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত বেচে থাকবে । ওয়াছ ওয়াছা দানকারী হিসেবে মানুষের শরীরের সকল ধমনীতে ও হৃদয় মাঝে স্থান করে নিতে পারবে । এ সুযোগ তোমাকে দান করা গেল । তবে মনে রেখ আমার সাথী বান্দাদের সামান্য ক্ষতি করতে কোন দিন সক্ষম হবি না ।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী