তাবুক যুদ্ধ
চতুর্দিকে অনেক রাজ্যবর্গ ইসলাম গ্রহন করলেন, এ জন্য মুসলিম বাহীনির শক্তি আরও বেড়ে গেল। কিন্তু রোমের খ্রিস্টান শাসনকর্তা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জনপ্রিয়তা, প্রতিপত্তি এবং প্রভাবকে সমুলে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য মক্কা আক্রমনের জন্য তৈরি হতে লাগলেন । হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কানে এ খবর যথাসময়ে পৌঁছে গেল । রোমের সম্রাট ছিল খুব প্রভাবশালী । তার ঐশ্বর্য প্রচুর আর সৈন্যবাহিনী ছিল অগনিত । রোমের সম্রাটের বিপক্ষে অস্ত্রধারন এত সহজ ব্যাপার ছিল না । এদিকে হযরত মোহাম্মদ (সা.) তৈরি হতে লাগলেন । এ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ, অজস্র অস্ত্র-শস্ত্র এবং অনেক সৈন্যবাহিনীর খুবই প্রয়োজন । তখন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আহবানে মুসমানরা সংরাম-তহবিলে যথাসাধ্য সাহায্য করতে লাগলেন । দানশীলরুপে হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রচুর অর্জন করেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) ভাবলেন, এবার তিনি এতো অধিক দান করবেন যাতে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর দানকে অতিক্রম করা যায়। এবার দানের দিক দিয়ে তিনি প্রথম স্থান দখল করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসা লাভ করবেন।
হযরত ওমর (রাঃ) অকৃপণ হাতের স্তূপীকৃত দ্রব্য দেখে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রীতিমতো আশ্চার্য হলেন। হযরত ওমর (রাঃ)-এর মুখের দিকে চেয়ে বললেন, ওমর, তুমি কি তোমার গৃহে কোন কিছুই রেখে আসনি? তখন তাঁর প্রশ্নের উত্তরে হযরত ওমর (রাঃ) খুব নম্র কন্ঠে উত্তর দিলেন, মাত্র একদিনের মতো খাদ্য-বস্তু গৃহে রেখে বাকি সকল দ্রব্যাদি এনেছি। তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললনে, আবু বকর, তোমার দানও সামান্য নয়। তোমার গৃহে আর কি পরিমাণ খাদ্য আছে? নবীজীর কথার উত্তরে হযরত আবু বকর (রাঃ) অতি নম্র স্বরে বললেন, আল্লাহ এবং রাসূলের জন্য আমার বলতে যা কিছু সকলই আমি উৎসর্গ করেছি। গৃহে আমি কোন কিছুই রেখে আসিনি যা ছিল সব কিছু আমি নিয়ে এসেছি। তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সহর্ষ স্বরে বললেন, মারহাবা। তোমার দান খুবই প্রশংসনীয়, যার কোন তুলনা হয় না।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গে সকল সময় সুখে-দুঃখে সুদিনে দুর্দিনে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাঁইয়ার মতো থাকতেন। তাঁর মতো এত বিশ্বাসী আর এত আপনজন এবং উদার প্রাণ আর ভদ্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাহাবীদের মঝে দ্বিতীয় আর কেউই ছিলেন না।
রাতের অন্ধকারে সকলের অগোচরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা হতে মদীনায় হিযরত করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন একমাত্র হযরত আবু বকর (রাঃ)। শক্রুদের সর্তক কুটিল দৃষ্টি এবং উদ্যত তরবারিকে শিরোধার্য করে হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন “গারে সাওয়ের” সাপ ও সরীসৃপসঙ্কুল অন্ধকার পর্বত গহ্বরের ভিতরে।