ঘুমন্ত শহর।
দূরে কোথাও হঠাৎ ভয়ার্ত আর্তচিৎকার। মুমূর্ষু আর্তনাদ। অতঃপর নীরবতা। চমকে ওঠেন ড. ফয়সাল। জানালায় চোখ রেখে বিস্ফারিত হয়ে যায় চোখ। কয়েকটা শিশু দৌড়াচ্ছে, তাদের চোখে মুখে মৃত্যুর ভয়াবহ আতঙ্ক। পেছনে একজন মা। তার কোলে ফুটফুটে শিশু। তিনিও দৌড়াচ্ছেন। কী ঘটছে? বুঝতে পারেন না তিনি। হঠাৎ কোথা থেকে ছুটে আসে শেল। প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকা শিশুগুলো নিথর হয়ে যায় মুহূর্তেই। সেদিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে থমকে যান মা। গুলির আঘাত হয়তো সহ্য করতে পারতেন। কিন্তু চোখের সামনে সন্তানের লাশ সহ্য করার মতো নয়। পড়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু হঠাৎ ছুটে আসা বুলেট তাকে স্তব্ধ করে দেয় চিরদিনের জন্য।
অজানা আতঙ্কে হঠাৎ চমকে ওঠেন ড. ফয়সাল। এতক্ষণ তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন। নিজেকে আশ্বস্ত করেন তিনি। টেবিলে রাখা এমআরপি (মেসেজ রিসিভার প্রটোকল) ডিভাইসটি বিপ বিপ করে যাচ্ছে। অজানা আশঙ্কায় বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান তিনি। এমআরপি ডিভাইসটিতে প্রতি মুহূর্তেই একটা মেসেজ নিজের ভাষা পরিবর্তন করে যাচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেসেজটি বাংলায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। একটি এসওএস (সেভ আওয়ার সয়েল)। তিনি বিস্ময়ের সাতে লক্ষ্য করেন যে, মেজেটি পৃথিবীর কারো নয়। অন্যকোন গ্রহ থেকে আসা। প্রেরকের ম্যাপ নির্দেশ করছে ইউরেনাস গ্রহ। অজানা আশঙ্কা আর বিস্ময় আচ্ছন্ন করে তাকে। মেসেজটিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাতরভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। মেসেজটিতে বলা হয়েছে তার বাসার হাই সিকুরেটেড প্রটেকশনের কারণে ইউরেনাসের একজন প্রতিনিধি তার বাসার বাইরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বিস্তারিত বলতে চান।
এক মিনিট ভাবলেন ড. ফয়সাল। তিনি ভালো করেই জানেন এটা কোন ফাঁদ হতে পারে কিন্তু মানবতার প্রশ্নে নিজের কথা ভাবতে মন চাইল না তার। বেরিয়ে এলেন তিনি। বাইরে কেউ নেই! তবে কি ফাঁদ? সে মুহূর্তেই কাছে কোথাও থেকে ভেসে এল একটা কণ্ঠ। তিনি সালাম দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করলেন।
ইউরেনাসে অনেক আগে থেকেই রয়েছে আমাদের বাস। জ্ঞান, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিতে ইউরেনাসবাসী পৃথিবীকে ছাড়িয়ে গেছেন অনেক আগেই। আইনের শাসন আর ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার জন্য আমরা নিজেদেরকে নিয়ে গিয়েছিলাম অনেক উঁচুতে। গ্রহের জন্য খুব উন্নত প্রযুক্তির নিরাপত্তা সিস্টেম কার্যকর করা আছে যাতে বাইরে থেকে কেউই কোন সময় এই গ্রহটির নিরাপত্তাবলয় ভেদ করতে পারবে না। কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্যত্র। গ্রহের ভেতর থেকে কেউ গ্রহবাসীর ক্ষতি করতে পারে সেটা আমাদের নীতিনির্ধারকরা কোনদিনই কল্পনা করতে পারেননি। তাই তেমন কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করা ছিল না। কিন্তু দুর্নীতি, নৈতিক অবনতি আর গ্রহের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট তথ্য পাচারের দায়ে গ্রহের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে গ্রহ থেকে নির্বাসিত করা হয়। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। নির্বাসিত কুচক্রীরা হঠাৎ আক্রমণ করে আমাদের গ্রহের সিসিএস (সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেম)। আমাদের প্রতিরোধব্যবস্থা না থাকার কারণে তারা খুব সহজেই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। তারা অন্য একটি গ্রহের দালাল হিসেবে ইউরেনাসকে একটি জনমানবশূন্য করার মিশন নিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। নারী শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না তাদের হাত থেকে। আপনি যে স্বপ্নটা দেখেছেন তা আসলে স্বপ্ন নয়। আমাদের ইলেভেন জেনারেশনের ভিডিও ট্রাসমিশন সিস্টেমের মাধ্যমে আপনাকে আমরা সরাসরি কিছু ফুটেজ দেখাচ্ছিলাম। এ জন্যই আমরা আপনার দ্বারস্থ হয়েছি কারণ আপনি একজন সৎ বিজ্ঞানী। ইসলামের সুমহান আদর্শ আপনার মধ্যে আছে তাই মহাজগতের কল্যাণার্থে আপনার সাহায্য আমাদের অপরিহার্য। আমরা প্রতিরোধ করতে গেলে তারা পুরো গ্রহ উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। আর তাদেরকে যেকোন সশস্ত্র প্রতিরোধ করতে গেলেই আমাদের কেন্দ্রীয় সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেন্দ্রীয় সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্রহ হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে।
কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব? জানতে চাইলেন ড. ফয়সাল। আপনাদের উন্নত টেকনোলজির নিরাপত্তা সিস্টেম কী করে আমি দখলমুক্ত করব? আমাদের হাতে সেইমানের কোন প্রযুক্তি নেই।
হ্যাঁ স্যার। সেটা আমরাও জানি। আর স্যার সেটাই একটা আশার দিক। বললেন ইউরেনাসের প্রতিনিধি।
কিভাবে?
স্যার, আমাদের সমরাস্ত্র প্রযুক্তি পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার ধাপ উপরে এ কারণে পৃথিবীর অনুন্নত সমরাস্ত্র নিয়ে আমাদের গ্রহে কোন তথ্য নেই। কাজেই সেটা কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে তা দখলকারীদের জানা নেই। আপনি খুব সহজেই একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
আশান্বিত হলেন ড. ফয়সাল। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল তার মস্তিষ্কে। দখলকারীরা সংখ্যায় খুবই অল্প। তারা কন্ট্রোল রুমের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদেরকের যদি কোনরকম অকেজো করে দেওয়া যায় তবে কাজটা খুবই সহজে হয়ে যাবে। তিনি সম্মত হলেন ইউরেনাস গ্রহে যেতে। তাদের লাইট রকেট কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দিল ইউরেনাসে। তাকে গ্রহের সম্মানিত রাষ্ট্রপ্রধান ড. ফয়সালকে সম্ভাষণ জানালেন। তিনিও কুচক্রীদের হামলায় তার পরিবার পরিজনকে হারিয়েছেন।
খুব সহজ একটা প্ল্যান হাতে নিলেন ড. ফয়সাল। ক্লোরোফর্ম গ্যাস (কার্বন, হাইড্রোজেন ও ক্লোরিনের একটি যৌগ যা মানুষকে অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহার করা হয়) যদি কোনভাবে ব্যাপক পরিমাণে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ভবনে প্রয়োগ করা যায় তবে খুব সহজেই তারা চেতনা হারিয়ে ফেলবে। কোন প্রকার অস্ত্রের ব্যবহার এবং ক্ষতি ছাড়াই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে গ্রহের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম।
পরিকল্পনা মোতাবেক কাজে নেমে পড়লেন তিনি। বিশাল একটা বায়বীয় এলাকাকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালের মাধ্যমে একটা ক্ষেত্র তৈরি করা হলো যেখানকার বায়ুমন্ডলে ভরিয়ে দেয়া হলো ক্লোরোফর্ম গ্যাস। বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক সিগন্যাল চার পাশ থেকে সেই গ্যাসকে ধরে রেখে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে গেল দখল হয়ে যাওয়া এলাকাটিতে। কেউ জানল না। দখলকারীরা চিন্তাও করতে পারল না কী পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের ওপর। শুধু মিষ্টি একটা গন্ধ অনুভব করল তারা আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই চেতনাহীন হয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষেই যে যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে রইল তারা। ভয়াবহ ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেল ইউরেনাস গ্রহবাসী।
২
ইউরেনাস গ্রহবাসী একত্রিত হয়েছেন ড. ফয়সালকে একনজর দেখার জন্য। রাষ্ট্রপ্রধান পরিচয় করিয়ে দিলেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. ফয়সালকে। এক ভয়াবহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনি ইউরেনাস গ্রহটিকে। জলভরা চোখে সবার কৃতজ্ঞতা হৃদয় ছুঁয়ে গেল ড. ফয়সালের। তিনি জানেন তার এই অসামান্য সাফল্য কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ। সৃষ্টিকর্তার অসীম অনুগ্রহে তার চোখেও বেয়ে পড়ল একফোঁটা জল। জীবনতো জীবনের জন্যই।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।