হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৭ম পর্ব

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

তাঁর কথা শুনে কাফিরগণ বলল, জারজীস! আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করে অবশ্যই তোমার প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ করব যদি তুমি ইতিপূর্বে আমাদের যে সকল লোক আকস্মিক ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে তাঁদেরকে জীবিত করতে পার।

হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, এটা আমার প্রতিপালকের নিকট অত্যন্ত সহজ কাজ। এ কথা বলে তিনি তাঁদের কবরস্থানের নিকট গিয়ে আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ্‌ পাকের রহমতে সেই বিরাট কবরস্থানে সমাহিত বার হাজার মৃত্যু ব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠল। তাঁদের সাথে বহু প্রাচীনকালে মৃত আরও বহু লোক পুনঃজীবন লাভ করল। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম ছিল নওফেল।

হযরত জারজীস (আঃ) লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, কতকাল পূর্বে তোমার মৃত্যু হয়েছিল। সে বলল, প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে আমার মৃত্যু হয়েছিল। এ দীর্ঘকাল আমি অনবরত আযাব ভোগ করে আসছি।

কবরস্থানেই এ আশ্চার্য ঘটনা দেখে এক বৃদ্ধা মহিলা কোলে একটি পুত্র সন্তান নিয়ে এসে হযরত জারজীস (আঃ) কে বলল, হুজুর! আমার পুত্রটি অন্ধ, খোড়া ও বোবা, আপনি দয়া করে এর জন্য আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে দোয়া করুন। যেন আল্লাহ্‌ পাক তাঁকে ভাল করে দেন। হযরত জারজীস (আঃ) নিজের মুখের সামান্য লালা তাঁর চক্ষে লাগিয়ে দিলেন। তাতে তাঁর অন্ধত্ব দূর হয়ে গেল। তৎপর তাঁর দু’কর্ণে দুটি ফুঁক দিলেন, তাতে তারমুখ কথা ফুটল এবং কানে কথা শুনতে লাগল। তারপর হযরত জারজীস (আঃ) তাঁর দু’খানা পা-ও ভাল করে দিলেন। বৃদ্ধা মহিলা তাঁর পুত্রের আরোগ্য হবার সাথে সাথেই হযরত জারজীস (আঃ) এর ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করল।

উক্ত বৃদ্ধার হযরত জারজীস (আঃ) এর ধর্ম গ্রহণের কথা শুনে পাপীষ্ট বাদশাহ দাদিয়ানের লোকজন পাঠিয়ে বৃদ্ধার বাড়ি ঘেরাও করল। বাইর হতে তাঁর খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে তাঁকে অনহারে রাখল। বৃদ্ধা অনাহারে খুবই কাতর হয়ে পড়ল। আল্লাহ্‌ পাকের কুদরতে বৃদ্ধার ঘরের খুটিগুলো সজীব বৃক্ষে পরিণত হল। তাতে সুমিষ্ট ফল ধরে সঙ্গে সঙ্গে তা পেকে যেত আর বৃদ্ধা সে ফল খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করত।

এ ঘটনা বাদশাহ দাদিয়ানের কানে যাওয়া মাত্র সে লোকজন পাঠিয়ে ঘরের বৃক্ষরুপি খুটিগুলোর গোড়ার মাটি খুঁড়ে ফেলল। তখন সে ফলের গাছগুলো আবার খুঁটিতে পরিণত হল। বাদশাহর নির্দেশে বৃদ্ধার হাত পায়ে লোহার পেরেক মেরে তাঁকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখল। বন্ধী অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হল। এ ঘটনায় পর বাদশাহ দাদিয়ান হযরত জারজীস (আঃ) কে কেটে টুকরা টুকরা করে সমুদ্রে ফেলে দেবার নির্দেশ করল। সঙ্গে সঙ্গে বাদশাহর হুকুম পালিত হল। কিন্তু হযরত জারজীস (আঃ) এর পবিত্র দেহের টুকরাগুলো সমুদ্রে ফেলিবামাত্র এক অদৃশ্য আওয়াজ হল, হে সমুদ্র! আল্লাহ্‌র পাকের নির্দেশে জারজীসের পবিত্র দেহের টুকটাগুলো একত্র করে তীরে পৌঁছে দাও। সমুদ্র আল্লাহ্‌ পাকের নির্দেশ পালন করল। অমনি হযরত জারজীস (আঃ) তাঁর সাবেক রূপ ধারণ করে জীবিত অবস্থায় উঠে দাঁড়ালেন। এ অপূর্ব দৃশ্য দেখে কাফিরগণ বিস্ময় হয়ে বলতে লাগল, জারজীসের খোদাই সম্ভবতঃ আবার তাঁকে প্রাণ দান করল।

হযরত জারজীস (আঃ) তাঁদেরকে লক্ষে করে বললেন, তোমরা আমার আল্লাহ্‌ পাকের এ অসীম শক্তি দেখেও কি তাঁর প্রতি ঈমান আনবে না।

তারা বলল, জারজীস! তুমি বার বার আমাদেরকে তোমার খোদার প্রতি ঈমান আনতে বলে অনর্থক কষ্ট ভোগ করতেছ। বরং তুমি আমাদের দেব-দেবীর পূজা করলে শান্তিতে থাকতে পারবে। আমরা তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তুমি আমাদের দেব-দেবীর পূজা করলে আমরা সকলে তোমাকে আমাদের নেতা বলে মান্য করব।

হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, আমি শত কষ্টই ভোগ করি না কেন, প্রকৃত এবং সত্য আল্লাহকে পরিত্যাগ করে তোমাদের অলীক দেবতার পূজা আমি করব না।

হযরত জারজীস (আঃ) এর মুখে এরূপ জবাব শুনেও কাফিরগণ সর্বত্র একটা মিথ্যা খবর প্রচার করল যে, জারজীস আমাদের দেব-দেবীগণের পূজা অর্চনা করতে রাজী হয়েছে। তারা তাঁকে বাদশাহর দরবারে নিয়ে গেল। বাদশাহ বলল, শুন জারজীস! এতদিন আমরা তোমার উপর বহু অত্যাচার করেছি এখন থেকে তোমার উপর আর কোনরূপ অত্যাচার করা হবে না। তুমি আমার রাজ প্রসাদেই অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে ভণ্ড কাফিরদের প্রচারণা শুনে তাঁর ভক্ত অনুসারিগণ খুবই চিন্তিত ও বিচলিত হয়ে পড়ল।

হযরত জারজীস (আঃ) কোন কথা না বলে বাদশাহর রাজদরবারেই রয়ে গেলেন। রাত্রে তিনি নামায আদায় করে অত্যন্ত মধুর স্বরে পবিত্র তৌরাত পাঠ আরম্ভ করলেন। তা শ্রবণ করে বাদশাহর স্ত্রী অতান্ত মুগ্ধ হল। ইতিপূর্বে সে আর কোনদিন তৌরাতের বাণী শ্রাবণ করেনি। বাদশাহর স্ত্রী ঐ বাণীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তখনই তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে সত্য ধর্ম গ্রহণ করল।

যা হোক বাদশাহ দাদিয়ান হযরত জারজীস (আঃ) কে দেব-দেবীর পূজা করতে বললে, তিনি বললেন, মন্দীরে গিয়ে দেব-দেবীকে আমার নিকট আসতে বল। বাদশাহ বলল, তারা তো পাথরের তৈরি তারা এখানে আসবে কিরূপে?

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।