হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৬ষ্ট পর্ব
হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার কথা শুনে তারা জবাব দিল, আমাদের তো ধারণা হচ্ছে যে, আপনি জারজীসের যাদুতে প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। আর তারই ফলে আপনি কুপথে পা বাড়াতে উদ্যত হচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকেও সে ভ্রান্ত কুপথের বর্বর পথিক করে নিতে সচেষ্ট হচ্ছেন।
উক্ত সৎ লোকটি বললেন, আমি কোন কুপথে পা বাড়াতে উদ্যত হইনি। বরং আমি অত্যন্ত সত্য ও খাঁটি পথের সন্ধান লাভ করেছি। আর তোমরা যেহেতু আমার স্বদেশবাসী তাই তোমাদের প্রতি আমার কর্তব্য হিসেবে আমি তোমাদেরকেও সে পথে আহ্বান করতেছি। আমার কথায় আস্থা এনে যদি তোমরা এ পথ অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় তা তোমাদের জন্য কল্যাণ ডেকে আনবে। তার কথায় শেষ পর্যন্ত চার হাজার লোক সত্য ধর্ম গ্রহণ করে ধন্য হল।
এ সংবাদ বাদশাহ দাদিয়ানের নিকট পৌঁছালে নরাধম উক্ত মুসলমানদের প্রতি তার সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিল। বাদশাহর প্রেরিত বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে সেই সামান্য সংখ্যক মুসলমানগণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হল। কিন্তু অতবড় বাহিনীর বিরুধে নগণ্য সংখ্য মুসলমানগণ কতক্ষণ আর টিকতে পারে? তারা অনেকেই শাহাদাতবরণ করলেন। আর কিছু সংখ্যক মুসলমান বিভিন্ন দিকে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলেন।
যুদ্ধ শেষে জনৈক সৈনিক হযরত জারজীস (আঃ) কে বলল, তুমি যে আল্লাহ্র প্রেরিত নবী তাঁর কি কোন নিদর্শন তোমার নিকট আছে? যদি তুমি কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দেখাতে পার তবে আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারি যে, তোমার আল্লাহ্র প্রতি আমরা বিশ্বাস আনতে পারি কি না। আমি যে আসনখানা বসা আছি, এর চার কোণে চারটি বৃক্ষ উৎপন্ন হোক এবং তা হতে চার প্রকার ফুল এবং তা হতে চার প্রকার ফল উৎপন্ন করুক যা আমরা খেতে পারি। তুমি এ কাজ করে দেখাতে পারলে আমরা মনে করব, সত্যই তুমি আল্লাহ্র নবী।
লোকটির কথা শুনে হযরত জারজীস (আঃ) আল্লাহ্ পাকের দরবারে দোয়া করলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে কাফির লোকটি যে সব বস্তু দেখতে চাইলেন সে সব বস্তু তৈরী হয়ে গেল। কিন্তু লোকটি তা দেখেও তাঁর ওয়াদামত আল্লাহ্ পাকের প্রতি ঈমান আনল না। সে বলে উঠল সর্বনাশ এবার বুঝতে পারলাম। সত্যিই তুমি একজন পাকা যাদুকর। অবশ্য ঐ লোকটি ঈমান না আনলেও উপস্থিত অন্য লোকদের অনেকেই হযরত জারজীস (আঃ) এর অলৌকিক কার্য দেখে স্পষ্ট অনুভব করল যে, নিশ্চয় কোন যাদুকরের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ পাকের নবীর কাজ স্বীকার করে তারা হযরত জারজীস (আঃ) এর প্রচারিত ধর্মের প্রতি ঈমান আনল।
বিধর্মী বাদশাহ দাদিয়ান ভাবল। এভাবে যদি কিছু কিছু লোক স্বধর্ম পরিত্যাগ করতঃ হযরত জারজীস (আঃ) এর ধর্ম গ্রহণ করে তবে ক্রমে ক্রমে আমাদের পিতৃ পুরুষদের ধর্ম একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং যেভাবে হউক জারজীসে ধ্বংস করতেই হবে।
অতঃপর তামা দ্বারা বিরাট একটা গরুর আকার জন্তু তৈরী করে হযরত জারজীস (আঃ) কে তাঁর পেটে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিল। এরপর একটি বিরাট অগ্নিকুণ্ডে সে তামা নির্মিত জন্তুটি নিক্ষেপ করল।
আল্লাহ্ পাকের মর্জির বিরুদ্ধে কেউ কোন কিছু করতে পারে না। বাদশাহ দাদিয়ানের ইচ্ছা ছিল এরূপ অপরদিকে আল্লাহ্ পাকের মর্জি ছিল ভিন্নরূপ। তাই তামার মূর্তি আগুনে নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণবেগে প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
যারা আগুনে তামার মূর্তি জ্বালাবার তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয়েছিল তারা ঝড় -বৃষ্টির প্রকোপে ছুটে পালাল, ঝড় এবং প্রবল বৃষ্টির ফলে সাথে সাথে অগ্নিকুণ্ড নিভে গেল। এ সময় আল্লাহ্র আদেশে জনৈক ফিরিস্তা নির্ভাব অগ্নিকুণ্ড হতে তামার জন্তুটি বের করে তা হতে হযরত জারজীস (আঃ) কে বের করে আনলেন।
হযরত জারজীস (আঃ) মুক্তি লাভ করে নির্দ্ধিধায় ও নির্ভিকভাবে বিধর্মীদের মজলিসে গিয়ে উপস্থিত হলেন। বিধর্মীগণ তাঁকে দেখে বিস্ময় এবং ভয়ে একেবারে হতবাক হয়ে গেল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলে উঠল, অবস্থাটা কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। হযরত জারজীস (আঃ) আল্লাহ্ পাকেরই সত্য নবী। আবার কিছু কিছু লোক বলল, কিসের সে সত্য নবী! সে একজন ভীষণ যাদুকর।
আমাদের সকলেই তাঁকে এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা কে কখন তাঁর মায়ার ছলনায় প্রতারিত হয়ে পড়ে। তা বলা যায় না।
তাঁদের এসব কথা শুনে হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, তোমাদের মনের দ্বিধা দূর করে এখনও আমাকে আল্লাহ্ পাকের নবী বলে স্বীকার কর। আল্লাহ্ পাক তোমাদের কল্যাণ দান করবেন, নতুবা তোমাদের উপর আল্লাহ্ পাকের এমন গজব নেমে আসবে যাতে তোমরা সকলেই ধ্বংসের কবলে পতিত হবে।