হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৫ম পর্ব

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

যাদুকর বলল, জাঁহাপনা তাঁকে কুকুর বানানো তো সামান্য কাজ। তবে আপনার যখন ইচ্ছা, আমি তাই করতেছি। যাদুকর এক পেয়ালা পানি আনিয়ে মন্ত্রতন্ত্র পড়ে তাতে পূঁক দিল। তারপর বাদশাহকে বলল, জাঁহাপনা! এ পানিটুকু জারজীসকে পান করিয়ে দিন। বাদশাহ হযরত জারজীস (আঃ) কে দরবারে ডেকে এনে উক্ত পানির পেয়ালা তার হাতে দিয়ে বলল, হে জারজীস! এ পানিটুকু এখনি তুমি পান করে ফেল।

হযরত জারজীস (আঃ) কোনরূপ ইতস্ততঃ না করেই আল্লাহ্‌ পাকের নাম উচ্চারণ করে সমস্ত পানিটুকু পান করে ফেললেন। পানি পান করায় তার ভিতরে কোনরূপ প্রতিক্রিয়াই দেখা দিল না। যাদুকর দল আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হে জারজীস! পানি পান করে তুমি তোমার মধ্যে কোনরূপ ভাবান্তর অনুভব করতেছ কি?

যাদুকরদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ভাবান্তর কি অনুভব করব? তবে আমার খুবই পানির পিপাসা পেয়েছিল, তোমাদের দেয়া পানিটুকু পান করে আল্লাহ্‌র রহমতে আমার প্রাণ শীতল হয়ে গিয়েছে। এ পরিবর্তনটুকু আমি অনুভব করতেছি।

হযরত জারজীস (আঃ) এর জবাব শুনে পাপীষ্ঠ কাফিরগণ একেবারে হতভম্ব হয়ে গেল। তাঁদের মুখে আর কোন কথাই বের হল না। অতঃপর যাদুকরগণ বাদশাহের নিকট বলল, জাঁহাপনা! আপনার বিরুধে যদি কোন প্রবল পরাক্রান্ত সেনাপতি বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করতে আসত তবে আমাদের যাদুর জোরে তাঁকে সদলবলে নিপাত করতে পারতাম। কিন্তু ঐ জারজীসকে মনে হচ্ছে, খুব পাকা যাদুকর। তার শক্তির সাথে আমরা কুলায়ে উঠতে পারব না।

যাদুকরদের প্রধান ব্যক্তি হযরত জারজীস (আঃ) কে লক্ষ্য করে বলল, জারজীস! আমরা আজ নির্দ্বিধায় স্বীকার করতেছি, তুমিই ও যুগে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ যাদুকর, তোমাকে ওস্তাদ বলে মেনে নিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। মনে হচ্ছে তুমি স্বয়ং ভগবানের তুল্য ক্ষমতার অধিকারী। নতুবা আমরা তোমাকে যে পানি পান করায়েছিলাম, ঐ পানি পান করার পর এতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এমন কোন লোক দুনিয়াতে নেই। অথচ দেখলাম ঐ পানি তোমার উপর কোন আছরই করতে পারল না।

হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, হে যাদুকর! তোমরা তোমাদের খেয়াল অনুসারে আমার সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতেছ। আসলে আমি কোন যাদুকর নই এবং ভগবানও নই। তোমরা মহান স্রষ্টা আল্লাহ্‌ পাককে ভগবান বলে ধারণা করতেছ। তিনি একক। তিনি সকল শক্তির অধিকারী ও সর্বশক্তিমান। তার অসীম শক্তি হতে আমাকে কণা মাত্র শক্তি দান করেছেন। আমরা যে-ই যা করি না কেন, তা তারই শক্তি ও ক্ষমতার বিকাশমাত্র। তারই প্রদত্ত সাহায্য ও অনুগ্রহের বলে আমি যাবতীয় বিপদ হতে রক্ষা পেয়ে থাকি। তিনি যাকে রক্ষা করেন কারো সাধ্য নেই যে, তার তিলমাত্র ক্ষতি সাধন করতে পারে। আমি তারই নিকট হতে প্রেরিত হয়েছি তার বাণী প্রচার করতে।

হযরত জারজীস (আঃ) এর নিকট রাজ্যের শ্রেষ্ঠ যাদুকরদের এভাবে পরাজয় স্বীকার করায় হযরত জারজীস (আঃ) এর সুখ্যাতি ও সুনাম সমস্ত রাজ্যে প্রচারিত হল। তিনি যে সত্যিই আল্লাহ্‌র নবী দেশের জনসাধারণের প্রায় সকলেই তা বিশ্বাস করল। অতএব সর্ব সাধারণ বিপদে আপদে তার নিকট এসে তার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে দোয়া করাতে শুরু করল।

একদা জনৈক মহিলা হযরত জারজীস (আঃ) এর নিকট এসে আরজ করল, হে আল্লাহ্‌ পাকের নবী! আমি একজন অভাবগ্রস্ত অসহায় রমণী। সম্বল বলতে আমার একটা গাভী ছিল এর দ্বারা আমার দিন অতিবাহিত হত। হঠাৎ আমার সে গাভীটি মারা গিয়েছে। এখন আমি কোন উপায় দেখতেছি না। অতএব আপনি যদি আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে দোয়া করে আমার গাভীটি জীবিত করে দিতেন, তাহলে আমার বড়ই উপকার হত।

মহিলার কথা শুনে হযরত জারজীস (আঃ) বললেন, তুমি আমার এ লাঠিখানা নিয়ে যাও। এটা তোমার মৃত গাভীটির গায়ে স্পর্শ করিয়ে বলিও যে, হে আল্লাহ্‌ পাকের সৃষ্টি গাভী! তুমি আল্লাহ্‌ পাকের হুকুমে জীবিত হও। তাতে গাভী জীবিত হয়ে উঠিবে এবং তোমাকে পূর্বের মতই দুধ প্রদান করবে।

মহিলা হযরত জারজীস (আঃ) এর উপদেশ অনুযায়ী কাজ করল। তাতে আল্লাহ্‌র রহমতে সত্যিই গাভীটি জীবিত হয়ে গেল এবং পূর্বের মতই দুধ দিতে লাগল। হযরত জারজীস (আঃ) এর মোজেযার কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল।

ঐ সময় বাদশাহ দাদিয়ানের সভাসদ্গণের মধ্যে জনৈক সৎ ও বিচক্ষণ ব্যক্তি হযরত জারজীস (আঃ) এর কার্যকলাপে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহ্‌ পাকের এবং নবীর প্রতি ঈমান আনলেন। একদা তার কওমের লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা হযরত জারজীস (আঃ) এর যে সকল আশ্চার্য ও অলৌকিক কার্যসমূহ অবলোকন করতেছ, তাতে তোমরা তার সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করতেছ?

হযরত জারজীস (আঃ)-এর কাহিনী-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।