হযরত সালেহ (আ)-এর উষ্ট্রীর মোজেযা
“সামুদ জাতির কাছে আমি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে তাদেরকে বললো, হে আমার স্বজাতিয় ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো খোদা নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত। আল্লহার যমীনে বিচরণ করতে থাক। কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে তাকে স্পর্শ কর না। নইলে তোমরা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কবলে পড়বে”।–(সূরা আ’রাফঃ ৭৩)
বাহ্যিক বাচনভঙ্গি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আয়াতের প্রথম অংশে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও দ্বিতীয়াংশে নিদর্শন শব্দদ্বয় দ্বারা এ উষ্ট্রীকেই বুঝানো হয়েছে। সূরা শূয়ারার অষ্টম রুকু’তে বিশদভাবে বলা হয়েছে যে, সামুদ জাতি স্বয়ং হযরত সালেহের কাছে নিদর্শন চেয়েছিল, যাতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, তিনি আল্লাহর নবী। সেই দাবীর জবাবেই হযরত সালেহ উষ্ট্রী হাযির করেছিলেন। সুতরাং উষ্ট্রী যে মোজেযাস্বরূপই এসেছিলেন, তা সন্দেহাতীতভাবে সত্য।
অন্যান্য বহু নবী অবিশ্বাসীদের জবাবে আপন নবুয়াতের প্রমাণ হিসেবে যেসব মোজেযা দেখাতেন, এটা সে ধরনেরই একটি মোজেযা। হযরত সালেহ অবিশ্বাসীদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন যে, উষ্ট্রীর বেঁচে থাকার ওপর তোমাদের জীবন নির্ভরশীল। এ হুঁশিয়ারী থেকৈ প্রমাণিত হয় যে, উষ্ট্রীর জন্ম হয়েছিল মোজেযার আকারে। তিনি আরো বলেছিলেন যে, উষ্ট্রী তোমাদের ক্ষেতে অবাধে চরে বেড়াবে। একদিন সে একাকী পানি খাবে। অপর দিন অন্য সকলের জন্তু-জানোয়ার পানি খাবে।
তোমরা যদি তার কোনো ক্ষতি কর তাহলে সহসা তোমাদের ওপর খোদার আযাব নেমে আসবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জিনিসের অলৌকিকত্ব লোকেরা স্বচক্ষে দেখতে পায়, তাকেই শুধু এমন মর্যাদার সাথে উপস্থাপিত করা যায়। উষ্ট্রীটি যেখানে খুশী চরে বেড়াত এবং একদিন সে একা আর অপর দিন সকেলর জানোয়ার পানি খেত। অবস্থা অনেক দিন চলেছে এবং তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তা বরদাশত করেছে। অবশেষে অনেক সলা-পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করে তাকে মেরে ফেলা হলো।
অথচ হযরত সালেহের এমন কোনো শক্তি ছিল না যার জন্যে তাঁকে ভয় করার কিছু ছিল। এ উষ্ট্রীর অলৌকিকত্বের আরও প্রমাণ এই যে, তারা এর জন্যে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল এবং জানত যে, তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো শক্তি আছে যার বলে সে তাদের মধ্যে অমন স্পর্ধার সাথে ঘুরাফেরা করে। উষ্ট্রীটি কি ধরনের ছিল এবং কিভাবে তার আবির্ভাব ঘটলো, সে সম্পর্কে কুআন ও হাদীসে কোনো স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় না। সে জন্যে তাফসীরকারগণ এর জন্ম সম্পর্কে যেসব বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, তা গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু কুরআন থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, উষ্ট্রীটি কোনো না কোনো দিক দিয়ে মোজেযা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিল।
মৃতের পুনর্জীবন সংক্রান্ত মোজেযা
“অথবা উদাহরণস্বরূপ সেই ব্যক্তির কথা স্মরণ কর যে একটি বিধ্বস্ত জনপথ অতিক্রম করার সয় বললো, এ মৃত জনপদকে আল্লাহ কি করে পুনরুজ্জীবিত করবেন? আল্লাহ তায়ালা তখন তার প্রাণ সংহার করলেন এবং সে একশ’ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় পড়ে রইল। অতপর আল্লাহ তাকে দ্বিতীয় বার জীবন দান করলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা বলত, তুমি কত দিন মৃত অবস্থায় পড়েছিলে? সে বলল, একদিন বা কয়েক ঘণ্টা। আল্লাহ বললেন, তোমার এ অবস্থার ওপরে একশ’ বছর অতীত হয়েছে।
তুমি এখন একটু নিজের খাদ্য ও পানীয়ের দিকে তাকিয়ে দেখ তা মোটেই বিকৃত হয়নি। অন্যদিকে তোমার গাধার দিকেও তাকাও (কার কংকাল পর্যন্ত পচে যাচ্ছে)। তোমাকে লোকদের জন্যে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরার জন্যেই আমি এসব ঘটিয়েছি। তারপর দেখ আমি কিভাবে এ কংকাল দাঁড় করিয়ে তার মধ্যে রক্ত-মাংস সংযোজন করছি। এভাবে তার কাছে যখন সত্য পরিস্ফুট হয়ে উঠল তখন সে বলল, আমি জানি যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান”।–(সূরা আল বাকারাঃ ২৫৯)
এ ব্যক্তি কে ছিলেন এবং সেটা কোন বস্তি ছিল, তা আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে যে জন্যে এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে তা এতটুকু বলার জন্যে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিজের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তাকে তিনি এভাবেই হেদায়াতের আলো প্রদান করেন। ব্যক্তি এবং স্থান নির্ণয়ের কোনো উপায়ও আমাদের হাতে নেই এবং তাতে কোনো লাভও নেই। তবে পরবর্তী বিবরণ থেকে বুঝা যায় যে, যে ব্যক্তি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে তিনি নিশ্চয়ই কোনো নবী ছিলেন।
উপরোক্ত প্রশ্নের অর্থ এ নয় যে, সে বুযর্গ ব্যক্তি পরকাল অবিশ্বাস করতেন অথবা সে সম্পর্কে তাঁর কোনো সন্দেহ ছিল। বরং আসলে তিনি নিগুঢ় তত্ত্বের চাক্ষুস অভিজ্ঞতা লাভ করতে চেয়েছিলেন। নবীদেরকে এ সুযোগ দেয়া হত। দুনিয়ার মানুষ যাকে একশ’ বছর আগে মারা গেছে বলে জানে, সে ব্যক্তির জীবিত হয়ে ফিরে আসা সমসাময়িক লোকদের মধ্যে তাকে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে যথেষ্ট।
হযরত আইয়ুবের রোগ নিরাময়কারী ঝর্ণা
“আমার বান্দা আইয়ূবের কথা স্মরণ কর। সে তার প্রভুকে সম্বোধন করে বলল, শয়তান আমাকে যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট ও আযাবে ফেলে দিয়েছে। (আমি তাকে নির্দেশ দিলাম) মাটিতে পা দিয়ে আঘাত কর। এ হচ্ছে ঠাণ্ডা পানি গোসল ও পান করার জন্যে”।–(সূরা সোয়াদঃ ৪১-৪২)
আল্লাহর হুকুমে মাটিতে পদাঘাত করতেই একটা ঝর্ণা বেরিয়ে এল। সেই ঝর্ণার পানি পান ও তা দিয়ে গোসল করাই ছিল হযরত আইয়ুবের রোগের চিকিৎসা। মনে হয়, সম্ভবতঃ হযরত আইয়ুব কোনো মারাত্মক চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাইবেলেও বলা হয়েছে যে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাঁর সারা শরীর ফোঁড়ায় জর্জরিত ছিল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।