যুবকের মৃত্যু
হযরত ওমর (রাঃ)-এর যামানায় এক যুবক মসজিদে বসে ইবাদত করত এবং বেশী বেশী হযরত ওমর (রাঃ)-এর দরবারে যাতায়াত করতো। এক পরমা সুন্দরী মহিলা তাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ফুসলাতে থাকে। এক পর্যায়ে যুবকটাকে আকৃষ্ট করে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত একদিন রাত্রবেলায় যুবকটি মহিলার বাড়িতে এসে পড়ে। মহিলা প্রথমে নিজে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং যুবকটিকেও ঘরে প্রবেশ করতে বলে। যুবকটি ঘরে প্রবেশ করার সময় যখন সে এক পা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে এবং এক পা দরজার বাইরে রয়েছে এমন সময় সাথে সাথে তার এই আয়াতটি মনে পড়ে যায়-
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
অর্থাৎ যারা মুত্তাকী (আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে) শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজে নিমগ্ন করে, সাথে সাথে তারা আত্মসচেতন হয়ে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে এবং তাদের জ্ঞান চক্ষু খুলে যায়। (সূরা আরাফঃ ২০১)
তৎক্ষণাৎ সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। বহুক্ষণ পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরে না আসার কারণে মহিলাটি মনে করল যে, যুবকটি বোধ হয় মারা গেছে। মহিলাটি চিন্তা করলো, ভোর হলে তো লাশটি কেউ দেখে ফেললে আসল ব্যাপারটা হয় তো সকলে জেনে যাবে তাই তার দাসী এবং নিজে মিলে দুজনে ঘাড়ে করে যুবকের বাড়ীর দরজায় রেখে আসলো। অনেকক্ষণ যুবকের জ্ঞান ফিরে এলে তার পিতা আয়াতটি শুনতে চাইলে যুবক পুনরায় আয়াতটি তিলাওয়াত করে একটি চিৎকার দিয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং ইন্তিকাল করেন। রাত্রিকালেই তাকে দাফন করা হয়।
সকাল বেলায় হযরত ওমর (রাঃ) তার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তার বাড়িতে উপস্থিত হন এবং তার পিতার নিকট সকল ঘটনা জানতে পেরে তিনি সমবেদনা প্রকাশ করেন। হযরত ওমর (রাঃ) তার কয়েকজন সাথীকে নিয়ে যুবকের কবরের কাছে গমন করেন এবং তার জানাজা আদায় করেন। তারপর তিনি তাকে সম্বোধন করে বললেন- হে যুবক!
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করলো, তার জন্য (পুরষ্কার রয়েছে) দুটি জান্নাত। (সূরা আররাহমানঃ আয়াত ৪৬ পারা ২৭)
হযরত ওমর (রাঃ)-এর মুখে এই আয়াতটি শুনে যুবকটি কবরের মধ্য থেকে উত্তর দিলঃ আল্লাহ তায়ালা আমাকে দুটি জান্নাত দান করেছন। (হায়াতুস সাহাবাঃ তাফসীরে ইবনে কাছির, ৪৮৬-৪৮৭ পৃষ্টা।)
এ ঘটনা দ্বারা কি বুঝা গেল? এ ঘটনার অল্প কথায়, তথা এক কথায় বুঝা গেল যে, গায়েব সত্য, কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে যত মতবাদ আর যে, যা কিছু বলেছে তা সব ভ্রান্ত, সব মিথ্যা, সব কাল্পনিক, সব মানুষের মনগড়া, তার একটাও বিশ্বাস করা যাবে না। সকলকে কুরআন হাদিস অনুযায়ী জীবন গড়তে হবে, যার পুরষ্কার হলো জান্নাত বা বেহেশত। ঐ জান্নাত বা বেহেশত হলো এমন জীবন যৌবন আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস শান্তি সুখ সফলতার জায়গা যা কোনদিন চক্ষু দর্শন করেনি। যার বর্ণনা কোনদিন কোনো কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কখনো কোন দিন কোন অন্তর কল্পনা করেনি। পক্ষান্তরে যারা কুরআন হাদিস বিশ্বাস করবে না, বিন্দুমাত্র সন্দেহ করবে এবং কুরআন হাদিস অনুযায়ী জীবন গঠন করবে না, তাদের আর কোন উপায় নেই। জাহান্নাম তথা দোযখ হবে তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা, যা আগুন আর সাপ বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ আর হাজারও রকমের শাস্তি কষ্ট। যার কথা
কুরআন হাদিস খুলে খুলে বর্ণনা করেছে, তার প্রতিটি আযাব শাস্তি সেখানে রয়েছে। তার থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। ফলে সকলকে তাওবা এস্তেগফার করে বাঁচার রাস্তা ধরতে হবে তথা কুরআন হাদিসের রাস্তা ধরতে হবে।