হযরত আদম (আঃ) – এর সৃষ্টির কাহিনী-৩য় পর্ব

হযরত আদম (আঃ) এর কাহিনী-এর পূর্বের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এরপরে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল (আঃ) কে পৃথিবী থেকে এক মুষ্টি মাটি আনার জন্য হুকুম দিলেন । জিব্রাইল (আঃ) পৃথিবীতে এসে যখন মাটি তুললেন তখন মাটি চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে জিব্রাইল (আঃ)! তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? জিব্রাইল (আঃ) বললেন, তোমাকে আল্লাহ তায়ালার আদেশে বেহেস্তে নিয়ে যাচ্ছি । সেখানে তোমার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা এক নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন । তখন মাটি বলল, তুমি আমাকে নিও না, আমাকে রেখে দাও । কারণ যে জাতি আল্লাহ সৃষ্টি করবেন তারা আবার নাফারমানি করে আল্লাহ তায়ালার শাস্তি ভোগ করবে । আমি তাদের শরীরে থাকলে সে আজাব ভোগ করতে পারব না । অতএব তুমি এ বিষয় আল্লাহ তায়ালার নিকট আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা কর ।

জিব্রাইল (আঃ) মাটির কথা শুনে খালি হাতে আল্লার দরবারে ফিরে গেলেন এবং আল্লাহ্র নিকট মাটির আবেদনের কথা  বললেন । তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত মিকাইল (আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন । তিনিও মাটির কাকুতি মিনতির কারণে খালি হাতে আল্লাহ্র দরবারে ফিরে গেলেন । এভাবে ইসরাফিল ও ফিরত গেলেন । সর্বশেষে হযরত আজরাইল (আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় । আজরাইল (আঃ) মাটির কথা শুনে বললেন , আমি তোমার কোথায় ফেরত যাব না আল্লাহ্র আদেশ অবশ্যই পালন করব । তিনি মাটি নিয়ে আল্লাওহর দরবারে হাজির হলেন । তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন , হ্যাঁ ! তোমার জন্য এতটুকু শক্ত প্রাণ বাঞ্ছনীয় । না হলে তুমি পৃথিবীর সকল প্রাণীর জান কবজ করতে সক্ষম হতে না । যাও আজ থেকে বনি আদম (আঃ)-এর জান কবজের ক্ষমতা তোমাকে অর্পণ করলাম ।

এরপর মাটিটুকু মক্কার নিকটবর্তী এক পাহাড়ের উপর রেখে দিলেন । সেখানে মাটি বৃষ্টিতে ভিজল এবং রোদে শুকাল, এভাবে কয়েক বছর অতিবাহিত হবার পর মাটি হযরত আদম (আঃ)-এর চেহারার রুপ নিল । তখন আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ)- শরীরটাকে বেহেস্তে নিয়ে গেলেন । সেখানে দীর্ঘদিন রুহবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে । এর মধ্যে ফেরেস্তারা এসে মূর্তিরুপী আদম (আঃ) কে দেখে যেত । একদিন শয়তান এসে আদম (আঃ)- এর শরীরটা ভালো করে দেখল এবং বিদ্রূপের হাসি হাসল । পরে তার নাক দিয়ে পেটের মধ্যে দিয়ে সব নারী নক্ষত্র তদারক করে আসল । পরক্ষণে ঘৃণা ভরে থু থু নিক্ষেপ করল ।

আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত সখ করে এ প্রাণী সৃষ্টি করেছেন এবং এর মর্যাদা সকলের উপরে দান করার করার কথা ঘোষনা করেছেন । তাতে শয়তান খুব ঈর্ষান্বিত এবং মনে মনে আদম (আঃ)- এর প্রতি যথেষ্ট হিংসা পোষণ করতে থাকে । এমনকি ফেরেস্তাদের নিকট কথা প্রসঙ্গে বলেছে যে , আল্লাহ তায়ালা তার সময়ে সৃষ্টি বনি আদম (আঃ)- কে পৃথিবীতে প্রেরণ করার পরে উপযুক্ত প্রতিদান পাবেন । এদের অধিকাংশ মানুষ তাঁর সঙ্গে বেঈমানি করবে এবং তাঁর প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করবে । তখন আল্লাহ তায়ালা বুঝবেন তিনি কি ভুল করেছেন । ফেরেস্তা আজাজিলের মন্তব্য বিশেষ করে আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাঁর অশ্রদ্ধার কথা শুনে বলে উঠল,  আস্তাগ ফেরুল্লাহ” ।

এক সময় আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাগণের মধ্যে সর্বশেষ মর্যাদাবান ফেরেস্তা হযরত জিব্রাইল (আঃ) , হযরত মিকাইল (আঃ), হযরত ইসরাফিল (আঃ) , ও হযরত আজরাইল (আঃ) কে হুকুম দিলেন তোমরা আরশে আজীম থেকে আদম (আঃ) এর রুহ এনে তাঁর দেহের মধ্যে পুরে দাও । ফেরেশতাগণ আলাআহ তায়ালার আদেশক্রমে নুরে মোহাম্মাদী পরিপূর্ণ আদম (আঃ) এর রুহ মূল্যবান হীরা জহরতের পাত্রে করে দেহের নিকটে নিয়ে আসেন । আসমান জমিনের সব ফেরস্তা এসে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেল । আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব এ অনুষ্ঠানে সকল ফেরেস্তা অংশ গ্রহণ করল । কিন্তু আজাজিল সেখানে অনুপস্থিত ছিল । এ অনুপস্থিতি দ্বারা তাঁর মনোভাবের অনেকটা প্রকাশ ঘটে । ফেরেস্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিল । আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বললেন , তাকে তাঁর ভাগ্য নিজ হাতে গড়ে নিতে দাও । আর তোমারা তোমাদের কর্তব্য সম্পাদন করে যাও ।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

 হযরত আদম (আঃ) এর কাহিনী-এর শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।