বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ৩
বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি কয়েক হাজার ভেড়া দুম্বা, উট জবেহ করে মদিনা এবং মদিনার পার্শ্ববর্তী দূর-দূরান্তের সব শ্রেণির লোককে দাওয়াত দিয়ে অন্নদান করলেন এবং প্রত্যেকের নিকট অনুরোধ করলেন যে, মদিনা এবং মদিনার পার্শ্ববর্তী কোন লোক যেন দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়। সপ্তাহ কালব্যাপী শত শত ভেড়া, দুম্বা জবেহ করে হাজার হাজার লোককে খাদ্য দান করতে থাকেন আর অনুরোধের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে এবং পরে এইভাবে প্রচার করা হল। যারা দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে আসতে পারেন না, তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত ঘোড়া ও গাধার পিঠে চড়িয়ে আনা হল। প্রায় পনের দিন পর্যন্ত অগনিত লোক শাহী দাওয়াতে শরীক হওয়ার পর তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে অবগত হলেন যে, আর কোন লোক দাওয়াতে আসতে বাকি নেই।
কিন্তু সব সময় অস্থির চঞ্চল, বিরামহীন চিন্তায় বিভোর, তাঁর বিচলিত আত্নার উপর দিয়ে ঝড়-তুফান যাচ্ছিল। আর তার মনের মনিকোঠায় মাত্র ঐ একই চিন্তা যে, যদি আর কোন লোক দাওয়াতে শরিক হতে বাকি না থাকে তাহলে সে তিনজন লোক গেল কোথায়? তাদের অনুসন্ধান কিভাবে করা যায়? আর কিভাবে তাদের পাকড়াও করা সম্ভব হবে?
অতঃপর তিনি নতুন করে ঘোষণা করলেন, মদিনার লোকদের দাওয়াত খাওয়া এখনও শেষ হয় নাই। বহুলোক আমার এ দাওয়াতে শরিক হতে বাকি আছে। অতএব, মদিনার মুসাল্লীগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে, তাঁরা যেন অনুসত্বর অনুসন্ধান করে ঐ সমস্ত লোকদের সংবাদ দিয়ে দাওয়াতে হাজির করেন। একথা শ্রবণে মদিনাবাসী সকলে এক বাক্যে বলে উঠলেন, মহারাজ! মদিনার আশে পাশে এমন কোন লোক বাকি নেই, যারা আপনার দাওয়াতে শরিক হয় নাই। তখন বাদশা নূরুদ্দীন বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন, আমি বলছি, আপনারা ভালভাবে অনুসন্ধান করুন।
এখনও কিছু লোক দাওয়াত খেতে বাকি রয়ে গেছে। তারা মার এ দাওয়াতে শরিক হল না? তারা কোথায় এবং তারা কে? আপনাদের খোঁজ করে আনতে হবে। বাদশা নূরুদ্দীনের ঘোষণায় মদিনার আকাশ-বাতাশকে যেন প্রকম্পিত করে দিয়েছিল।
একদিকে তাঁর পবিত্র চেহারায় অনুতাপের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আর একদিকে দয়া ধর্মের সুরও কন্ঠস্বরে বাজতেছিল। লক্ষাধিক জনতার ভরা মজলিসে হঠাত একজন লোক বলে উঠলেন, হুজুর! আমার মনে হয় তিন জন মাত্র লোক বাকি আছে, যারা জীবনে কারো কিছু হাদিয়া দান তোহফা গ্রহণ করেন না, এমনকি তারা কারোর দাওয়াতে শরিক হন না। আমার মনে হয়, সেই তিনজন লোক আপনার দাওয়াতে শরিক হতে বিরত আছে।
বাদশা নূরুদ্দীন অস্কুট হাসি ও আনন্দের চেহারা নিয়ে অত্যধিক আগ্রহ সহকারে কালবিলম্ব না করে কয়েকজন লোকসহকারে ঐ তিনজন লোককে দাওয়াতে দিতে তাদের আবাসস্থলে উপস্থিত হলেন। দরজা বন্ধ, অনেক্ষণ ডাকাডাকি করার পর প্রহরী দরজা খুলে দিলো এবং বললো যে, আপনারা দাঁড়ান। তারা সকলে নামাজ, দুয়া আর কুরআন তিলাওয়াতে রত আছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর প্রহরীর কোন সাড়া না পেয়ে বাদশা ক্রোধে জ্বলে উঠলেন।
আর কে যেন তাকে পিছন থেকে বলছে, তুমি তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ কর আর তাদের ভালভাবে অবলোকন কর। তারা কে? এরা কি সেই তিন জন? যাদেরকে তুমি স্বপ্নে দেখেছিলে? না-এরা অন্য কেউ? প্রহরী ও বাড়িওয়ালার অনুমতি না নিয়েই তিনি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং দেখলেন একজন নামাজে, একজন কোরআন তিলাওয়াতে। তিনি নামাজ ও দুয়া শেষ করতে আদেশ দিলেন। নামাজ শেষে তিনজনই বাদশা দূরুদ্দীনের সামনে এসে হাজির হল।