এই ধুলির ধরায় মহান স্রষ্টা যতগুলো কিতাব নাযিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন ছাড়া সবগুলোতেই বিকৃতি সাধিত হয়েছে। আল কুরআনের সকল কিছুই আজো সুসংরক্ষিত। আপনরুপে অবিকৃত থাকবে কিয়ামত অবধি ইনশাআল্লাহ। কেননা আল কুরআনের হেফাজত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন সকল কিছুর কর্তা স্বয়ং আল্ল াহ তাআলা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয় আমিই এই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই তা সংরক্ষণ করব। ’ [হিজর:৯]
এই ওয়াদা আসমানী। সকল কিছুর মালিক আল্ল াহর ওয়াদা। আর এ ব্যাপারে কুরআনের অমোঘ ঘোষণা হলো ‘আল্ল াহ কখনও ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। ’ [আল ইমরান:৯; রোম:৬] আল্ল াহ তাআলা তার সেই ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং স্বীয় কিতাব আল কুরআন হেফাজত ও সংরক্ষণের এক বিষ্ময়কর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সেই বিষ্ময়কর ব্যবস্থার সার-সংক্ষেপ নিম্নে বিধৃত হলো।
১.কুরআনের শব্দাবলি সংরক্ষণ
কুরআনের সেই শব্দগুলো হুবহু সংরক্ষণ করেছেন যে গুলো ওহীর মাধ্যমে রাসূলুল্ল াহ সা. এর উপর নাযিল করেছেন। মহানবী সা.-এর উপর যখন কোনো আয়াত কিংবা সূরা নাযিল হত তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওহী লেখক কোনো সাহাবীর মাধ্যমে তা লিখিয়ে নিতেন। এরপর সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহর সা. পবিত্র যবানে তা শ্রবণ করতেন এবং মুখস্ত করে ফেলতেন। এভাবে কুরআন নাযিলের সময়ই সম্পূর্ণ কুরআন লিখে ফেলা হয় এবং অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম রা. তা মুখস্তও করে ফেলেন। নিম্নে কতিপয় হাফেজে কুরআন সাহাবীর নাম উল্লেখ করছি: চার খলীফা, হযরত তালহা রা., হযরত সাআদ রা., আব্দুল্ল াহ ইবনে মাসউদ রা., হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রা., হযরত আবু হুরায়রা রা., হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., হযরত আমর ইবনুল আস রা., আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা., হযরত মুআবিয়া রা. প্রমুখ। [মাআরিফুল কুরআন:১/২১] তদুপরি মহা মহিমাময় স্রষ্টা পরম কৃপায় মহানবীর সা. মাঝে এমন প্রখর ও তীক্ষè মেধা ও স্মৃতিশক্তি সৃষ্টি করে দেন যে, একবার ওহী নাযিল হওয়ার পর তা আর কখনও ভুলতেন না। ফলে ওহী নাযিল হওয়ার সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ সা. এর অন্তরে দৃঢ়বদ্ধ হয়ে যেত। এভাবেই মহানবীর সা.এর পবিত্র সীনা আল কুরআনের এমন সুরক্ষিত ভান্ডারে পরিণত হয় যে, তাতে সামান্যতম সংযোগ-বিয়োগ কিংবা ভূল-ত্রুটি হওয়ার কোনো আশংকাই ছিলনা। এরপর অধিকতর সতর্কতার জন্য প্রতি বছর রমজানে কুরআনের নাযিলকৃত অংশ হযরত জিবরাঈলকে আ. তিলাওয়াত করে শুনাতেন আর নিজেও জিবরাঈল আ. থেকে শুনে নিতেন। মৃত্যুর বছর এ কাজটি রাসূল সা. দুবার করেন। [আরিফুল:১/২০, বুখারি:৭৪৭Ñ৭৪৮]
নবী যুগের পর আবু বকর রা. এর খিলাফতকালে হযরত উমর ও অনান্য সাহাবাগণের পরামর্শক্রমে কুরআনে কারীম একত্রে সংকলন করা হয়। এরপর হযরত উসমান রা. এর আমলে নতুনভাবে সংকলন করে এক মাসহাফে বাঁধাই করে একাধিক কপি তৈরি করে কুফা, বসরা, সিরিয়া, মক্কা ইত্যাদি মুসলমানদের কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। [মাআরিফুল কুরআন:১/২৩-২৯; বুখারি-২/৭৪৫-৭৪৬; ফাতহুলবারী : ৯/১৫-১৭]
২. অর্থ ও মর্ম সংরক্ষণ
মহা মহিম পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের শব্দাবলি যেমন সংরক্ষণ করেছেন তেমনি এর মর্ম ও অর্থও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন বিষ্ময়কর পন্থায়। কেননা শুধুমাত্র শব্দবলি সংরক্ষিত থাকা কুরআন সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। অর্থ ও মর্ম সংরক্ষিত না হলে এর বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা অনেকটাই অনিবার্য। যেমনটা হয়েছে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহের ক্ষেত্রে। সেগুলোতে যেমন শব্দের বিকৃতি ও প্রক্ষেপ ঘটেছে তেমনি অর্থ ও মর্মগত বিকৃতি ও অপব্যাখ্যাও কম ঘটেনি। কারণ সেগুলোর জন্য শব্দের মতো অর্থ ও মর্ম সংরক্ষণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাদের নবীদের কথা, কাজ ও জীবনী সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি, ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আজ সেগুলোর আসল শব্দ ও মর্ম কোথাও খোঁজে পাওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আল্লামা রহমাতুল্লাহ কিরানভী রচিত “ইজহারুল হক” আল্লামা তাকি উসমানি রচিত, “খৃষ্ট ধর্মের স্বরূপ” কিতাব দুটো অধ্যয়ন করা যেতে পারে। পক্ষান্তরে কুরআন এর শব্দেরমতো মর্মকেও সুসংরক্ষিত করা হয়েছে সুন্নতে নববীর দ্বারা। প্রতিটি আয়াতের তফসীর স্বয়ং রাসূলূল্লাহ সা. করে গিয়েছেন যাকে বলা হয় “তফসীর বিল মাছুর”। আল্লামা ইবনে কাছীর, ইমাম সূয়ূতি রহ. সহ অসংখ্য উলামায়ে কেরাম প্রতিটি আয়াতের তাফসীর হাদীসে রাসূল দ্বারা করে দেখিয়েছেন। আর এটি মূলত আল্ল াহর পক্ষ হতেই ছিল। কেননা কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে “কুরআনের ব্যাখ্যা ও তাফসীর আমারই জিম্মায় নিয়েছি। ’ [কিয়ামাহ:১৯] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুহাম্মদ ! আমি আপনার উপর কুরআন এজন্য নাযিল করেছি যেন মানুষের নিকট এর ব্যাখ্যা আপনি করেন। ’ সূরা নজমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (মুহাম্মদ সা.) কোনো কথাই নিজ প্রবৃত্তি থেকে বলেন না ; বরং তিনি যা বলেন সকল কিছুই আল্ল াহর পক্ষ হতে ওহী। ’ [নজম:৩,৪] উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, তাফসীর বিল মাছুর মূলত: অসীম কুদরতের অধিকারী আল্ল াহর পক্ষ হতেই কৃত তাফসীর।
৩. কুরআনের ভাষার সংরক্ষণ কুরআনে শব্দ মর্মের পাশাপাশি তা যে ভাষায় নাযিল হয়েছে তথা আরবী ভাষা তাও সংরক্ষণের জন্য বিরল ব্যবস্থা করেছেন। আপনি যদি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ইতিহাস অধ্যয়ন করেন তাহলে দেখবেন পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্বরূপে তিন চারশ বছরের বেশি টিকে থাকেনি। এসময়ের মধ্যে হয়তো ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে মিশে গেছে। অথবা এতে এত পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে যে, পূর্বের নিয়ম কানুনে এর পাঠোদ্ধার করা সুকঠিন। কিন্তু আরবী ভাষা উম্মতে মুহাম্মদীর এমন যতœ ও সেবা লাভ করেছে যা বলে শেষ করার নয়। প্রথমত মহানবী সা. নিজে প্রিয় সাহাবাগনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে আরবী ভাষার বিশুদ্ধতার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। অনন্তর সাহাবাগণ রা. ও এর প্রতি যতœবান হয়েছেন। যেমন- আবুবকর ও উমর রা. এর জীবনী পাঠে জানা যায়। এমনকি হযরত আলী রা.তো আরবী ভাষার ব্যাকরণ তথা নাহু-ছরফ শা¯্ররে উদ্ভাবন করে একে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। এরপর উম্মতের এমন একটি শ্রেণীর আত্মপ্রকাশ ঘটে যারা তাদের গোটা জীবনকেই এ ভাষার সংরক্ষণ ও লালনের জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন। যাদের মধ্যে আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলী, সিবাওয়াই, খলীল, কিসায়ী, ফাররা, মুবাররাদ, আখফাশ, সালাব, ইবনে হাজার, ইবনে হিশাম, ইবনে আকীল ইবনে জিন্নী রহ. প্রমুখ স্ববিশেষ উল্লেখযোগ্য। আজো অব্যাহত রয়েছে এ ধারা। যার বদৌলতে আজও আরবী ভাষা সেই অবস্থায় টিকে আছে যে অবস্থায় ছিল কুরআন নাযিলের সময়। যতদিন কুরআন থাকবে উম্মতের একদল এ মহান কাজে মশগুল থাকবে ইনশাআল্ল াহ।
৪. প্রায়োগিক রুপের সংরক্ষণ
শব্দ, মর্ম ও ভাষার সংরক্ষণের সাথে সাথে কুরআনের প্রায়োগিক রূপ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মহানবী সা. সাহাবাগণকে কুরআনের মর্ম তালিম দেয়ার পাশাপাশি এর বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়েছেন। উদাহরণত কুরআনে কারীমে শুধু এতটুক বলা হয়েছে ‘তোমরা সালাত আদায় কর’ কিন্তু কুরআনের কোথাও বিস্তারিত ও ধারাবাহিক-ভাবে নামায আদায়ের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কিয়াম, কোথাও রুকু, কোথাও আবার সিজদার কথা উল্লেখ আছে। রাসূলূল্লাহ সা. এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সাহাবীগণকে বলেছেন এবং বাস্তবে আদায় করে দেখিয়েছেন আর বলেছেন- ‘তোমরা নামায আদায় কর সে পদ্ধতিতে যে পদ্ধতিতে আমাকে আদায় করতে দেখেছ। ’ সাহাবাগনও আমৃত্যু নামায আদায় করেছেন তাঁর দেখানো পদ্ধতিতে। তারপর পর্যায়ক্রমে তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী ও প্রতিযুগের মনীষী ও মুসলিম উম্মাহ সেভাবেই নামায আদায় করে আসছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্ল াহ। এভাবে কুরআনের বাস্তব প্রায়োগিক রুপটাও সংরক্ষিত হয়ে গেছে। এ জন্যই কেউ যখন কুরআনের তাফসীর ও ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু করার চেষ্টায় লিপ্ত হয় তখন উম্মাহর মাঝে তা গ্রহণযোগ্যতা পায় না। মোটকথা কুরআনের বাস্তব প্রায়োগিক রুপটাও আল্ল াহ তাআলা হেফাজত করেছেন ধারাবাহিক আমলের মাধ্যমে।
৫.কুরআন নাযিলের অবস্থা ও প্রেক্ষাপট সংরক্ষণ
পরম সূক্ষèদর্শী আল্ল াহ তাআলা তার কিতাবকে আপনরুপে হেফাযতের লক্ষ্যে কুরআন নাযিলের অবস্থা, পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটকে হেফাযত করেছেন সুচারুরুপে। হাদীসের সুরক্ষিত বিশাল ভা-ার সেই সম্পূর্ণ অবস্থা, পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটকে মূর্ত করে দিয়েছে আমাদের চোখের সামনে। হাদীসের কোনো ছাত্র যখন তা পাঠ করে তখন সেই দৃশ্য জীবন্ত হয়ে সামনে এসে যায়। হাদীসের পাঠকমাত্র জানে এক ধরনের হাদীস আছে যাকে পরিভাষায় “হাদীসে মুসালসাল” বলা হয়; যার অর্থ হলো বর্ণনাকারী সাহাবী মহানবী সা. থেকে যে অবস্থা কিংবা ভঙ্গিতে শুনেছেন বা দেখেছেন বর্ণনা করার সময় সেই অবস্থা ও ভঙ্গির অবতারণা করেছেন। এই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। একটা দৃষ্টান্ত দেই, একবার মহানবী সা. সর্বনিম্ন জান্নাতির বিবরণ দিতে গিয়ে বললেন, আল্ল াহ তাআলা যখন সর্বনিম্ন জান্নাতিকে বলবেন, দশ দুনিয়ার সম-পরিমান জান্নাত তোমাকে দেয়া হলো তখন সে অবাক হয়ে বলবে হে আল্ল াহ! আপনি রাব্বুল আলামীন হয়েও আমার সাথে ঠাট্টা করেছেন, একথা বলার পর রাসূল সা. হেসে দিলেন এবং উপস্থিত সাহাবাগণকে বললেন, তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনা আমি কেন হাসলাম? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, জী হুজুর! বলুন, আপনি কেন হাসলেন? মহানবী সা. বললেন, এই বান্দার কথা শুনে স্বয়ং আল্ল াহও হেসেছেন। তাই আমি হেসে দিয়েছি। [মুসলিম:১/১০৫] এরপর সাহাবায়ে কেরামও এই হাদীসটি বর্ণনার সময় হেসে দিতেন। এই হাদীসটিকে “হাদীসে মুসালসাল বিত-দিহ্ক” বলে। হাদীসের ছাত্র মাত্রই জানে, আজও পর্যন্ত কোনো মুহাদ্দিস যখন এই হাদীসখানা দরস দেন তখন এই ভাবে হেসে দিয়েই দরস দেন। ঠিক একই অবস্থা আসবাবে নুযূল বা শানে নুযূল বলা ও শুনার সময়ও হয়ে থাকে। আসবাবে নুযূল বলা হয় হাদীসে উল্লেখিত সেইসব ঘটনাবলিকে যা কোনো আয়াত, সূরা ইত্যাদি নাযিল হওয়ার সময় সংঘটিত হয়েছিল। এর দ্বারা কুরআনের ভাবার্থ বোঝার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়। কেননা আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ ও প্রেক্ষাপট জানা থাকলে আলোচিত আয়াতের আহকাম ও তৎপ্রাসঙ্গিক বিষয়াদী বুঝতে সহজ হবে। এর উপর উলামায়ে কেরাম স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচনা করেছেন।
৬.সীরাতে নববীর সংরক্ষণ
কুরআনে কারীম অবতীর্ণ হয়েছে মুহাম্মদ সা.এর উপর। আর তিনি কুরআনের উপর বাস্তব আমল করে দেখিয়েছেন যেন পরবর্তীতে কেউ এই কথা বলতে না পারে যে, কুরআন মুতাবিক কিভাবে আমল করব তা আমরা জানিনা। তাই সেই মুতাবিক আমল করা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। তাই তো রাসূলুল্লাহর সা. আমলের ব্যাপারে উম্মুল মুমিনীন আয়শা রা. কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা কি কুরআন পড়নি? সাহাবায়ে কিরাম বললেন হ্যাঁ, পড়েছি। আয়েশা রা. বললেন, রাসূল সা. ছিলেন কুরআনুল কারীমের জীবন্ত নমুনা। ’ তাই কুরআনুল কারীম রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজন ছিল রাসূলুল্লাহর সা. -এর সীরাতে তাইয়্যিবার যথাযথ সংরক্ষ। কুদরতের কারিশমায় তা সংরক্ষিত হয়েছে যথাযথভাবে। তাঁর সীরাতের উপর এত বিপুল পরিমানে কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে যে, দুনিয়ার কোনো ব্যক্তিত্বের উপর এত পরিমানে কাজ হয়নি।
৭.হায়াতে সাহাবা সংরক্ষিত
কুদরতের এটা একটা বিরাট কারিশমা যে, কুরআন অবতরণকালে তার প্রথম সম্বোধিত এবং প্রথম ধারক যারা ছিলেন তাদের জীবনচরিতও যথাযথভাবে সংরক্ষিত। কুরআনের প্রথম মুখাতাব ও ধারক ছিলেন সাহাবাদের রা. সুমহান জামাত। তাঁরা ছিলেন কুরআন ও সুন্নার বাস্তব আমলীরুপ। কুরআন ও সুন্নাহর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোও বাস্তবায়নে নিজের জীবনকে অবলীলায় বিলিয়ে দিতে কেউ কোনো কার্পণ্য করেননি। তাই কুরআন ও সুন্নাহর বাস্তব আমলীরুপ হেফাযতের জন্য প্রয়োজন ছিল এ দুটোর বাহকদের জীবনচরিত হেফাযত করা। যেন উম্মাহ জানতে পারে কুরআন ও সুন্নাহর আমলীরুপ কি? আরও জানতে পারে এ দুটোর সম্মিলিত রুপায়ন কিভাবে হবে? করুণাময় তার অপার করুণায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফলে উম্মত সে সময় থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তাদের পদাংক অনুসরণ করে উপকৃত হচ্ছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উপকৃত হতে থাকবে। তাদের জীবনী হেফাযত করা না হলে কুরআনের আলমীরুপ বিকৃত হওয়ার প্রবল সম্ভবনা ছিল। যেমনটি হয়েছে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর ক্ষেত্রে। শুধু তাই নয়, আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, তৎপরবর্তী কুরআন-হাদীসের লক্ষ লক্ষ বাহক তথা তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, আয়েম্মা, মুজতাহেদীনের জীবনচরিতও সুসংরক্ষিত। যেন কুরআন-সুন্নাহর বাস্তব আমলীরুপ সনদে মুতাওয়াতির তথা অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকে। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তাদের জীবনীর সংরক্ষণটাও হয়েছে বিরলভাবে। তাদের জীবনী অনুমান নির্ভর কোনো তথ্য সম্বলিত নয়; বরং পূর্ণ প্রমাণ্যের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে তিনি কে ছিলেন, তার বংশ পর¤পরা কি? তার ইলম ও প্রজ্ঞা কোনো পর্যায়ের ছিল, তার স্মৃতিশক্তি ও মেধা কেমন ছিল, তিনি কার কার নিকট থেকে ইলম হাসিল করেছেন এবং তার তাকওয়া-পরহেযগারী ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল ইত্যাকার সকল বিষয় তাতে স্থান পেয়েছে। একে পরিভাষায় “রিজাল শাস্ত্র” নামে অভিহিত করা হয়। আল কুরআন সংরক্ষণের লক্ষ্যে এইভাবে বিরল কায়দায় মহান স্রষ্টা লক্ষ লক্ষ মহা মানবের পূর্ণাঙ্গ বায়োডাটা হেফাযত করেছেন। এমনকি হাল যামানার কুরআন-হাদীসের বিজ্ঞজনদের জীবনবৃত্তান্ত যথাযথভাবে সংরক্ষিত রয়েছে এবং এই ধারা কুরআন যতদিন থাকবে ততদিন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্ল াহ। মূলত রিজাল শাস্ত্র এমন শাস্ত্র যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোনো জাতির মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না। সার কথা কুরআন রক্ষার আসমানী ওয়াদা আল্ল াহ পুরো করেছেন। কুরআন হেফাযতের জন্য যত উপায় হতে পারে সকল উপায়ে তা সংরক্ষণ করেছেন। এভাবে এই পবিত্র কিতাব সর্বদিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গরুপে সুসংরক্ষিত হয়ে গেছে। ফলে আজ দেড় হাজার বছর পরেও আল কুরআন স্বরুপে আপন বিভায় দেদীপ্যমান। বিন্দু পরিমান পরিবর্তনের পরিবর্ধনের আঁচড় লাগেনি লাখো চেষ্টা ও অপচেষ্টার পরও। কিয়ামত পর্যন্ত লাগবেও না ইনশাআল্ল াহ।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।