হাশরের ময়দানে উপস্থিতদের বিভিন্ন অবস্থা [২]

কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত ব্যক্তি হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্ল াহ সা. এর সামনে এক ব্যক্তি ঢেকুর তুলল। তিনি বললেন, ঢেকুর কম তোলো। কেননা, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত সে-ই হবে, যে দুনিয়াতে বেশির ভাগ সময় ভরা পেটে থাকত। [মেশকাত শরিফ] দুমুখী লোকের হাশর হযরত আম্মার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দুমুখী ছিল, যে এক পক্ষের সামনে তাদের প্রশংসা এবং অন্য পক্ষের বদনাম আর দ্বিতীয় পক্ষের সামনে তাদের প্রশংসা ও প্রথম পক্ষের বদনাম করে, কেয়ামতের দিন তার জিহ্বা হবে আগুনের।

মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনাকারী রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বানিয়ে (নিজের থেকে) স্বপ্ন বর্ণনা করে, তাকে কেয়ামতের দিন দুটি যবের মধ্যে গিরা লাগিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে, সে অনেক চেষ্টা করেও তা করতে পারবে না। অতএব তাকে আজাব দেয়া হতে থাকবে।

আড়ি পাতার শাস্তি
যে ব্যক্তি আড়ি পেতে কোনো দলের কথা শুনে, অথচ তারা চায় না সে তাদের কথা শুনুক, কেয়ামতের দিন সীসা (গলিয়ে) তার কানে ঢেলে দেয়া হবে। আর যে কোন (প্রাণীর) ছবি বানাবে তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং বাধ্য করা হবে সে ছবির মধ্যে রুহ দেয়ার জন্য, কিন্তু সে তা পারবে না। [মেশকাত শরিফ]

অপমানের পোশাক
হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির জন্য (অহংকারপূর্ণ) পোশাক পরিধান করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে অপমান এবং লাঞ্ছনার পোশাক পরিয়ে দেবেন। [মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ]
অন্যের ভূমি আত্মসাতকারীর শাস্তি
রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কারো সামান্য পরিমাণ জমিন আত্মসাৎ করে (অন্যায়ভাবে) দখল করে নেয়, তাকে কোয়ামতের দিন সপ্তম জমিন পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে।
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি জুলুম করে অন্যের এক বিঘত পরিমাণ জমিনও দখল কের নেয়, তাকে আল্লাহ তাআলা সাত স্তর জমিনের নিচ পর্যন্ত খনন করার জন্য বাধ্য করবেন। অতঃপর কেয়ামতের বিচার ফয়সালা শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্যায়ভাবে দখলকৃত জমিনকে সাত স্তর পর্যন্ত বেড়ি বানিয়ে তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। [মেশকাত শরিফ]
আগুনের লাগাম
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যার নিকট কোন এলেমের বিষয় জানতে চাওয়া হল, যা সে জানে, কিন্তু সে যদি তা (না জানিয়ে) গোপন করে, তাহলে কেয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরানো হবে। [মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী]
যেহেতু সে জিজ্ঞাসিত এলেম সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও না বলে মুখ বন্ধ করে রেখেছিল, সেহেতু তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে।

ক্রোধ দমনকারী
হযরত সাহল রা. তার পিতা মুয়াজ রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাগ (ক্রোধ) হজম করে, অথচ সে তার রাগ অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা রাখে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সব মাখলুকের সামনে ডেকে বলবেন, তোমার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন হুরকে পছন্দ করে নাও।
হারামাইন শরিফে ইন্তেকালকারী
রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মদিনায় অবস্থান এবং সেখানকার কষ্টে সবর করে, কেয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষ্য দেব এবং সুপারিশ করব। আর যে ব্যক্তি হারামে মক্কা অথবা হারামে মদিনায় ইন্তেকাল করেছে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে নিরাপত্তা লাভকারী লোকদের সাথে উঠাবেন। [বায়হাকি]

হজের সময় ইন্তেকালকারী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ বাহন থেকে পড়ে ঘাড় ভেঙ্গে সে মারা যায়। রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, বরই পাতার গরম পানি দিয়ে তাকে গোসল দাও এবং এহরামের কাপড় দ্বারাই কাফন দাও, কিন্তু তার মুখ ঢাকাবে না। কেননা, সে কেয়ামতের দিন তালবিয়া পড়তে পড়তে উঠবে। [বুখারি শরিফ]

দুঃখিত!