হাশরের ময়দানে উপস্থিতদের বিভিন্ন আমলের হিসাব নেওয়া হবে

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর প্রত্যেক প্রাণীই তার কর্মফল পুরোপুরি পাবে। [সুরা জুমার : ৭০]
নিয়তের উপর বিচার
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন যেসব লোকের ব্যাপারে সর্বপ্রথম ফয়সালা করা হবে তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও থাকবে, যাকে (জেহাদে নিহত হওয়ার কারণে) শহীদ মনে করা হত, তাকে আনা হবে। তারপর আল্লাহ পাক তাকে নিজের দেয়া নেয়ামতসমূহ স্মরণ করাবেন, সে তা স্বীকার করবে। তার সেসব নেয়াতের কথা স্মরণ হবে যা আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়ায় দান করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রশ্ন করবেন। তুমি এসব নেয়ামত কি কাজে লাগিয়েছ? সে জওয়াব দিবে, আমি আপনার রাস্তায় এত লড়াই করেছি যে, লড়াই করতে করতে শহিদ হয়ে গেছি। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আমার জন্য লড়াই করেছ তোমার এ কথা ভুল; বরং তুমি তোমার বাহাদুরী প্রকাশের জন্য, লোকে তোমাকে বাহাদুর বলবে এজন্য লড়াই করেছ (তা পেয়ে গেছ)। দুনিয়ায় তোমার সুনাম হয়েছে। এরপর হুকুম হবে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। সুতরাং হুকুম পালন করা হবে।
যাদের ব্যাপারে সর্বপ্রথম ফয়সালা হবে তাদের একজন এমন হবেন, যিনি দ্বীনী এলেম শিখেছেন ও শিখিয়েছেন এবং কুরআন শরিফ পড়েছেন। কেয়ামতের দিন তাকে আনা হবে। এরপর আল্লাহ পাক তাকে নেয়ামতসমূহ স্মরণ করাবেন, আর সেও তা স্বীকার করবে। তাকে আল্লাহ পাক প্রশ্ন করবেন, তুমি এ নেয়ামতগুলো কি কাজে লাগিয়েছ? সে জওয়াব দিবে, আমি এলেম শিক্ষা করেছি এবং তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি। আপনার রেজামন্দির জন্য কুরআন শরিফ তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ (আমার জন্য তুমি এলেম শিখনি এবং কুরআনও তেলাওয়াত করনি); বরং তুমি এলেম এজন্য হাসিল করেছ, যাতে লোকজন তোমাকে আলেম বলে, আর বলে, এ লোক তো সব সময় কুরআন শরিফ পড়তে থাকে। এ খ্যাতি তুমি দুনিয়াতে পেয়ে গেছ। দুনিয়াতে তোমার ব্যাপারে তাই বলা হত যা তুমি ইচ্ছা করেছিলে। এরপর হুকুম হবে, একে উল্টা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। সুতরাং এ হুকুম পালন করা হবে।
সর্বপ্রথম যাদের বিচার হবে তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও থাকবে, যাকে আল্লাহ তাআলা অনেক কিছু দিয়েছেন এবং সম্পদরাজি দিয়ে সম্মানিত করেছেন। কেয়ামতের দিন তাকে আনা হবে এবং আল্লাহ পাক তাকে নেয়ামতসমূহ স্মরণ করাবেন আর সেও তা স্বীকার করবে। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি এ নেয়ামতসমূহ কি কাজে লাগিয়েছ? সে জওয়াব দিবে, এমন কোন জায়গা বাকী ছিল না যে জায়গায় দিলে আপনার প্রিয় হতে পারি, অর্থাৎ সব ভাল কাজেই আপনার রেজামন্দির জন্য আমার মাল খরচ করেছি। আল্লাহ পাক বলবেন, না, তুমি মিথ্যা বলেছ (আমার রেজামন্দির জন্য তুমি খরচ করনি); বরং তুমি এজন্য খরচ করেছ, লোকজন তোমাকে দাতা, দানশীল বলবে। আর তোমার ব্যাপারে এমন বলাও হয়েছে (তোমার উদ্দেশ্য দুনিয়াতে পূর্ণ হয়েছে)। এরপর তাকে উল্টা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার হুকুম হবে। সুতরাং হুকুম পালন করা হবে। [মেশকাত শরিফ]
তিরমিযি শরিফেও এ হাদিস রয়েছে। তাতে এও রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. যখন এ হাদিস বর্ণনা করার ইচ্ছা করেন তখন তিনি হাশরের ময়দানের কথা চিন্তা করে বেহুশ হয়ে যান। হুশ আসার পর পুনরায় বর্ণনা করতে শুরু করেই বেহুশ হয়ে যান। হুশ আসলে তিনি হাদিস বর্ণনা করেন। এ হাদিস যখন হযরত মুয়াবিয়া রা.-কে শুনানো হয়, তখন তিনি বললেন, যদি এ তিন ব্যক্তির ব্যাপারে এমন হয় তাহলে অন্য বদনিয়ত লোকদের সাথে এর চেয়ে উত্তম ব্যবহারের কথা কি চিন্তা করা যায়! এরপর হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রা. এমন কাঁদলেন যে, তাঁর কাঁদা দেখে লোকজন ভয় পেয়ে গেলেন, আর বুঝি তাঁর জানই বের হয়ে যাবে। [মেশকাত শরিফ]
হযরত আবু সাঈদ বিন ফাজালা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, যখন আল্লাহ পাক রোজ কেয়ামতে সব মানুষকে একত্রিত করবেন, যে দিনের আগমনে কোন সন্দেহ নেই, তখন ঘোষক উচ্চ আওয়াজে ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন আমল করেছে এবং তাতে অন্য কাউকে শরীক করে নিয়েছে, সে যেন আমলের সওয়াব (আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে শরিক করেছে) তার থেকে নিয়ে নেয়। [মেশকাত শরিফ]
অন্য হাদিসে আছে যা বায়হাকি শুআবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যে দিন আল্লাহ পাক বান্দাদের আমলের বদলা দিবেন, সেদিন রিয়াকারদের (লোক দেখানো এবাদাতকারীদের) বলা হবে, দুনিয়াতে যাদের দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের নিকট যাও। দেখ, তাদের নিকট কোন ফল পাও কিনা। [মেশকাত শরিফ]
নামাযের হিসাব এবং নফলের বিরাট উপকারিতা
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. থেকে শুনেছি, নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে প্রথমে তার নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি নামায ঠিক হয় তাহলে সে কামিয়াব। যদি নামাযে কমতি হয় তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরয নামাযে কমতি হয় তাহলে পরওয়ারদেগারে আলম বলবেন, “দেখ আমার বান্দার কোন নফল আছে কিনা? সুতরাং নফল থাকলে ফরযের যে ঘাটতি হবে তা নফল দ্বারা পূর্ণ করে দেয়া হবে। এভাবে নামাযের পর তার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে।
অন্য রেওয়ায়াতে আছে, নামাযের পর যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। এমনিভাবে অন্যান্য আমলের হিসাবও নেয়া হভে। [মেশকাত শরিফ]
বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী
আসমা বিনতে ইয়াযিদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন লোকেরা সবাই একই ময়দানে একত্রিত হবে। তখন একজন ঘোষক উঁচু আওয়াজে ঘোষণা দিবে, সে লোকেরা কোথায়, যারা পিঠ বিছানা থেকে পৃথক রাখত, রাতভর নামায পড়তে। এটা শুনে এ গুণের অধিকারী লোকেরা মজমা থেকে বের হয়ে এসে দাঁড়াবে (যাদের সংখ্য খুবই কম)। এ সব লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা যাওয়ার পর অন্যদের হিসাব শুরু করার হুকুম দেয়া হবে। [বায়হাকি-শুআবুল ঈমান]
হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, আমার রব আমার সাথে ওয়াদা করেছেন, আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাব-কিতাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। যাদের উপর কোন আযাব হবে না, প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজার যাবে। শাফায়াতের হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, আমি আরশের নিচে আমার রবের উদ্দেশে সেজদায় পড়ব। তারপর আল্লাহ তাআলা আমাকে তাঁর সে হামদ এবং উত্তম প্রশংসা বলে দিবেন যা ইতিপূর্বে কারো জন্য করা হয়নি। এরপর আল্লাহ পাক বলবেন, হে মোহাম্মদ, মাথা উঠাও, আরজি পেশ কর, তোমার আরজি পূর্ণ করা হবে। সুপারিশ কর, কবুল করা হবে।
তখন আমি মাথা উঠাব এবং ইয়া রব উম্মতী ইয়া রব উম্মতী, ইয়া রব উম্মতী বলতে থাকব। আমাকে বলা হবে, হে মোহাম্মদ! তোমার উম্মতের তাদের নিয়ে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, যাদের কোন হিসাব হবে না।
হুযুর সা. বলেন, কসম সে সত্তার যাঁর হাতে আমার জান, জান্নাতের দরজা এত প্রশস্ত যেমন মক্কা এবং হিজরের মাঝের দূরত্ব। [মেশকাত শরিফ]

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!