হাদীসের গল্প:বাবার আদেশের সামনে নতশির সন্তান

ইবরাহীম আ. ৮০ বছর পর্যন্ত তার কোন সন্তানাদি ছিল না। তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের পিতাকে একজন পুত্র দান করলেন। তিনিও নবী ছিলেন, নাম হযরত ঈসমাঈল আ.। আল্লাহর এই নবীকে নিয়ে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। তার বেড়ে উঠার ঘটনাগুলো খুব চমৎকার ও শিক্ষনীয়। যাহোক এক সময় তিনি যৌবনে পর্দাপণ করলেন। জুরহাম গোত্র থেকে তিনি আরবী ভাষা রপ্ত করেছিলেন। ফলে যুবক ঈসমাঈল প্রিয় পাত্রে পরিণত হলেন জুরহাম গোত্রের কাছে। তারা তাদের এক কন্যাকে বিবাহ করিয়ে দেয় হযরত ঈসমাঈল আ. এর সাথে। তখন নবী মাতা হযরত হাজেরা আ. জীবিত ছিলেন না। বিবাহের পরবর্তী সময় হযরত ইবরাহীম আ. দেখতে আসেন পুত্রকে। তখন হযরত ঈসমাঈল আ. বাড়িতে ছিলেন না। তিনি পুত্রবধুর কাছে পুত্রের অবস্থান জানতে চাইলে সে বলল, ইসমাঈল আমাদের জন্য রিযিকের অনুসন্ধানে বের হয়েছে। হযরত ইবরাহীম আ. পুত্রবধুর কাছে তাদের হাল হাকিকত ও জীবন যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। পুত্রবধু তখন অভিযোগের সুরে বলল, আমরা খুব কষ্টে আছি। খাবার দাবারের ভাল কোন ব্যবস্থা নেই, অভাব অনটন যেন লেগেই থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি।  পুত্রবধুর উত্তর ও কথা বার্তা তার পছন্দ হলো না। তিনি পুত্রবধুকে এই কথা বলে চলে গেলেন, তোমার স্বামী বাড়ি আসলে তাকে আমার সালাম দিয়ে বলবা তার ঘরের চৌকাট বদলিয়ে ফেলতে। হযরত ঈসমাঈল আ. বাড়ি আসলে স্ত্রী তাকে আগন্তুক ব্যক্তি ও তার বক্তব্য জানালেন। হযরত ঈসমাঈল আ. বিবরণ শুনে বললেন, তিনি আমার পিতা, যিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাকে তালাক দিতে। সুতরাং তুমি তোমার পিতা মাতার কাছে চলে যাও। হযরত ঈসমাঈল আ. তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে জুরহাম গোত্রের আরেক মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিছু দিন পর হযরত ইবরাহীম আ. আবার পুত্রের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মক্কা আগমন করলেন। বাড়ি এসে অন্য একজন মেয়েকে দেখতে পেয়ে বুঝলেন, নিশ্চই আমার পুত্রবধু হবে। তখন ঐ দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে পুত্রের অবস্থান জানতে চাইলে সে বলল, তিনি আমাদের জন্য রিযিকের অনুসন্ধানে বের হয়েছেন। অতপর তার কাছে তাদের সংসারের হাল হাকিকত জানতে চাইলে শুকরিয়ার সুরে পুত্রবধু বলল, আল হামদুলিল্লাহ আমরা আল্লাহর অশেষ রহমতে খুব ভাল আছি। আমরা কোন কিছুতে অভাব বোধ করিনা। পুত্র বধুুর উত্তর ও কথাবার্তা তার পছন্দ হল। তিনি পুত্রবধুকে এই কথা বলে চলে গেলেন: তোমার স্বামী আসলে তাকে আমার সালাম দিয়ে বলবে তার ঘরের চৌকাট ঠিক রাখতে। হযরত ঈসমাঈল আ. বাড়ি আসলে স্ত্রী তাকে আগন্তুক ব্যক্তি ও তার বক্তব্য জানাল। হযরত ঈসমাঈল আ. বিবরণ শুনে বললেন উনি আমার পিতা, যিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাকে স্ত্রী হিসেবে বহাল রাখার জন্য। তুমিই আমার ঘরের চৌকাট।
শিক্ষ: প্রথমা স্ত্রীর নাশুকরির কারণে আল্লাহর নবী তাকে পরিত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর দ্বিতীয় স্ত্রী শোকরগোযার হওয়ার কারণে আল্লাহর নবী ভাল মনে করে তাকে রেখে দিতে বললেন আর সৌভাগ্যবান সন্তান বাবার আদেশ মেনে নিলেন।  অতএব প্রত্যেক ঈমানদারদের কর্তব্য হলো, সুখে দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং তার শোকরিয়া আদায় করা।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!