খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-৩য় পর্ব
খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যুবক বলল অধিক পয়সার আমার প্রয়োজন নেই। দৈনিক এক রুটির ব্যবস্থা হলেই চলবে। এ বলে নির্ধারিত মজুরী নিয়ে চলে গেল। পর দিন আমি আবার সে যুবকের তালাশে বের হলাম। কিন্তু জায়গামত গিয়ে তার কোন সন্ধান পেলাম না। এক ব্যক্তি আমাকে বলল, এ যুবক সপ্তাহে শুধুমাত্র একদিন (শুক্রবার) এখানে কাজ করতে আসে। আবু আমের বলেন, যেহেতু যুবকের কাজে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম তাই আমার মনের অজান্তেই যুবকের প্রতি আমার মায়া জন্মে গিয়েছিল। আমি তার অপেক্ষায় এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ রাখলাম। পরবর্তী সপ্তাহে তাকে ওখানে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখা গেল। আমি তাকে সালাম দিয়ে কাছে গিয়ে কাজের বিষয়ে বললাম, আজও সে আগের মত দুটি শর্ত আরোপ করে কাজে সম্মত হল।
যথাসময়ে কাজ শুরু হল, যেহেতু পূর্বেই তার কাজের অগ্রগতি দেখে অবাক হয়ে ছিলাম, এবার আমি কিছুটা কৌতুহলী হয়ে আড়াল থেকে তার কাজের প্রতি লক্ষ্য করতে লাগলাম। আমি সুস্পষ্ট দেখতে পেলাম, যুবক মাটির কাদা হাতে নিয়ে দেয়ালের ওপর রাখার সাথে সাথে ইটগুলো একের পর এক এসে, কাদার ওপর লেগে যাচ্ছে। দৃশ্য দেখে আমি আরও অবাক হতে লাগলাম। যুবক শান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে আর আল্লাহ তায়ালার কুদরতে অকল্পনীয় দ্রুত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, এ যুবক নিশ্চয়ই খাঁটি আল্লাহ ওয়ালা।
কাজ শেষে আমি তাকে তিনটি দিরহাম দিলাম। কিন্তু সে এক দিরহাম রেখে অবশিষ্ট ফেরত দিয়ে চলে গেল। যুবকের অপেক্ষায় আবারো এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ রাখলাম। কিন্তু বহু তালাশ করেও যুবকের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। কিছু দিন পর আমি এক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম, সে যুবক এক বিরান জঙ্গলে অসুস্থ অবস্থায় একাকী পড়ে আছে। এ মর্মান্তিক সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমি তার সন্ধানে বের হলাম এবং যথাস্থানে গিয়ে দেখতে পেলাম, যুবক একটি ইটের ওপর মাথা রেখে মাটিতে শুয়ে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে তাকে সালাম করলাম, কিন্তু মনে হল যেন, সে আমার সালাম শুনতে পায়নি। দ্বিতীয়বার সালাম দেয়ার পর চোখ খোলে প্রথম দর্শনেই সে আমাকে চিনতে পারল।
সালামের উত্তর দেয়ার পর আমি তার মাথা আমার কোলে তুলে নিলাম। কিছুক্ষণ পর সে তার মাথা সরিয়ে আমাকে বলল, জনাব দুনিয়ার ধোঁকায় পড়বেন না। দুনিয়ার জীবন দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। যখন আপনি কোন জানাজার সহযাত্রী হয়ে কবরস্থানে যান তখন যেন আপনার স্মরণ হয় যে, একদিন আমার জানাজা ও এভাবে ওঠানো হবে। একটু নিরব থেকে সে বলল, আবু আমের! আমার ইন্তিকালের পর এ পুরাতন কাপড়টি দ্বারা আমার কাফনের ব্যবস্থা করবেন। যে ব্যক্তি আমার কবর খনন করবে তাকে আমার লুঙ্গিটি দিয়ে দিবেন।
কিছুক্ষণ পর, সে একখানা কুরআন শরীফ এবং একটি আংটি আমার হাতে দিয়ে বলল, আবু আমের এ দুটি জিনিস আপনার কাছে রেখে গেলাম এ গুলো আপনি স্বয়ং খলীফা হারুন রশীদের হাতে তুলে দিয়ে বলবেন, একটি পরদেশী ছেলে ইন্তিকালের পূর্বে এ গুলো আমার কাছে আমানত রেখে গেছে, যেন আপনাকে পৌঁছে দেই আর আপনার সম্পর্কে সে একথা বলে গেছে যে, আপনি যেন দুনিয়ার ওপর মোহাগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ না করেন। এতটুকু বলার পর সে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেল। যুবকের আকস্মিক মৃত্যুতে আমি যেন হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। এরপর যুবকের অসিয়ত অনুযায়ী তার কাফন দাফন সম্পন্ন করার পর আমি তার দেয়া কুরআন শরীফ ও আংটি নিয়ে বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
বাগদাদে গিয়ে আমি খলিফার সাথে সাক্ষাৎ করে আংটি ও কুরআন শরীফ তার খিদমতে পেশ করে বললাম, বসরায় অবস্থানরত এক বিদেশী যুবক মৃত্যুর পূর্বে এ দুটি বস্তু আমার কাছে আমানত রেখে বলে গেছে যেন এগুলো আপনার কাছে পৌঁছে দেই। মহামান্য খলীফা আংটি ও কুরআন শরীফ দেখা মাত্রই চমকে গেলেন এবং শোকে যেন একেবারে বিহবল হয়ে পড়লেন। এরপর তিনি নিরবে কিছুক্ষণ অশ্রু ঝরানোর পর আমাকে কাছে ডেকে বললেন, তুমি কি আমার ছেলেকে চিনতে? আমি বললাম হ্যাঁ, আমি আপনার সন্তানকে চিনতাম।
খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন