খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-১ম পর্ব
আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব ক্ষমতা। খলীফা হারুনুর রশীদের পুত্র বাল্যজীবনেই আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তিনি মনে মনে বদ্ধপরিকর ছিলেন যে, আল্লাহকে যে কোন মুল্যে সন্তুষ্ট করতে হবে। এর জন্য যে কাজটি করতে হবে তা হল সর্ব প্রথম মরণের প্রস্তুতি নিতে হবে। বয়স সবে মাত্র ষোল অথচ ইবাদতে মগ্ন থাকা ছিল তার নেশা। সুযোগ পেলেই আলেম-ওলামা ও বুজুর্গানে দ্বীনের খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাদের মূল্যবান নসিহত শুনতেন।
মাঝে মধ্যে কবরস্থানে গিয়ে কবরবাসীকে লক্ষ্য করে বলতেন, হে কবরবাসী! তোমরাও একদিন এ দুনিয়াতে ছিলে, ধন সম্পদের মালিক ছিলে। আজ সব কিছু থেকে বিছিন্ন হয়ে নির্জন কবরে একাকী শুয়ে আছ। আহ! আমি যদি জানতে পারতাম, কবরে তোমরা কি অবস্থায় আছ এবং কবরে তোমাদেরকে কি প্রশ্ন করা হয়েছে।
অত্যন্ত নূরানী চেহারার অধিকারী ছিলেন তিনি। চলাফেরা ছিল একেবারেই সাদাসিধে। রাজপুত্র হওয়া সত্ত্বেও রাজকীয় পোশাকের প্রতি কোন আগ্রহ ছিল না তাঁর। দুনিয়া বিমুখ জীবন যাপন করা ছিল তার স্বভাব। শাহী মহলে বাস করা সত্ত্বেও শাহী খাবার পছন্দ করতেন না। দস্তরখানার কিনারে বসে শুকনা রুটি খাওয়া ছিল তার নিত্যদিনের রুটিন।
একদিন মহলের লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, তোমার ঘরের রকমারি খাবার রেখে তুমি শুকনো রুটি খেয়ে জীবন ধারণের কারণ কি? উত্তরে বলল, শুধু পাখির মত খেলেই চলবে না, সব কিছুর হিসাব দিতে হবে। ঘুমের সময় হলে, মাঠে-ময়দানে বা রাস্তার পাশে শুয়ে যেতেন। পরিবারের সকল সদস্য তাঁকে নিয়ে ভীষণ চিন্তাযুক্ত। তাঁকে সকলেই বুঝাতে চেষ্টা করত। তারা বলত দেখ বেটা তুমি রাজপুত্র। রাজ দরবারে বহু উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকের আনাগোনা রয়েছে। তোমার অবস্থা দেখে তারা তোমাকে পাগল বলে আখ্যা দেবে।
যা তোমার বাবার জন্য লজ্জার কারণ হবে। তোমার উচিত সর্বদাই রাজপুত্রের বেশে চলা। রাজপুত্রের জবাব শুনলে অবাক হতে হয়। তিনি বলেন, আমার পোশাক দিয়ে কি হবে। আমি তো আমাকে আল্লাহর জন্য সাজাতে ব্যস্ত। যেন আমার মাওলা আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। সারা দুনিয়ার মানুষকে খুশি করতে পারলেও আমি সফল হতে পারব না বরং সফলতা নির্ভর করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির ওপর।
অতএব জীবন দিয়ে হলেও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হবে। জানিনা মৃত্যু কবে চলে আসবে। আমার ইচ্ছা হল আমি সর্বদাই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকি যেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে কষ্ট না হয়। তোমরাও দুনিয়ার বিলাসিতা ছেড়ে দাও। কারণ দুনিয়ার সবকিছু ক্ষণস্থায়ী। এখানে সবকিছু ছেড়ে যেতে হবে সাথে যাবে শুধুই আমল।
খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন