হযরত আবু বকর (রাঃ) মদীনায় হিজরত-পর্ব ২
কুরাইশরা তাদের ব্যর্থতার জন্য ক্ষেপে উঠল। তারা ঘোষণা করল, মুহাম্মাদকে যে ব্যক্তি গ্রেফতার করে নিয়ে আসবে তাকে একশত উট পুরষ্কার দেয়া হবে। ফলে
অনেক সাহসী ব্যক্তি তাদের ধর্মীয় অনুপ্রেরণা এবং পুরষ্কার প্রাপ্তির আশায় তাঁর অনুসন্ধানে বের হলো। মক্কার চারদিকের জনবসতি, নির্জন স্থান, জঙ্গল, পাহাড়, ময়দান ইত্যাদি সকল স্থানে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – কে খোঁজ করছে। একটি অনুসন্ধানী দল সাওর গুহার নিকটেও পৌঁছে গেল। এ
সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন এবং নিতান্ত চাঞ্চল্যের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – কে বলেন, “তারা যদি নিচের দিকে তাকায় তাহলেই তো আমাদের দেখে ফেলবে।”
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “চিন্তিত হয়ো না, আমরা মাত্র দু’জন নই, আরও একজন (অর্থাৎ আল্লাহ্) আমাদের সাথে আছেন।” এ সান্ত্বনা বাণীতে হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর অস্থিরতা দূর হয়ে গেল এবং আদৃশ শক্তির সাহায্যের প্রতি অকুণ্ঠ নির্ভরশীলতায় তাঁর অন্তরের সকল কালিমা দূর হলো। ওদিকে অনুসন্ধানকারিরা ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনি যে, তাদের বাঞ্ছিত ব্যক্তি নিকটের গুহাতেই লুকিয়ে রয়েছেন।
চতুর্থ দিন এ কাফেলা ওখান থেকে রওয়ানা হয়ে গেল। তবে ঐ দলে আরও দু’জন সামিল হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা চারজনে উন্নীত হলো। ভ্রমণকালে প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর গোলাম আমের বিন ফাহীরা (রাঃ) – কে নিজের পেছনে বসালেন। আর আরদ বিন আরিক্কাত আগে আগে পথ দেখিয়ে চললেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) আল্লাহর রাসূলের নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল করে কখনও এগিয়ে যাচ্ছিলেন, আবার কখনও পিছনে পিছনে চলছিলেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। পথিমধ্যে তাঁর অনেক পরিচিত লোকের সাথে দেখা হয়। তারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে চিনত না। এসব লোক যখন তাঁর সঙ্গীর পরিচয় জিজ্ঞেস করত তখন তিনি বলতেন “ইনি আমাদের পথ প্রদর্শক।”
প্রথম মনজিল সফর করার পর হযরত আবু বকর (রাঃ) একটি ছায়াশীতল শিলার উপরিভাগ পরিষ্কার করে তাঁর প্রিয় নেতার বিশ্রামের ব্যবস্থা করলেন। আর নিজে চলে গেলেন খাবারের অনুসন্ধানে। ঘটনাচক্রে একজন রাখাল সেদিকেই আসছিল। তাঁর কাছে প্রশ্ন করে জানতে পারলেন যে, ঐ রাখালের বকরীগুলোর মধ্যে কয়েকটি দুগ্ধবতী বকরী আছে। হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর অনুরোধে রাখাল দুধ দোহন করে দিতে রাজি হলো। তিনি তাকে নিজের হাত ও ছাগলের স্তন পরিষ্কার করে নিতে বললেন। রাখাল তাই করল এবং দুধ দোহনের জন্য তাঁর হাতে পাত্রটি তুলে দিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) দুধের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে দুধটুকু হুজুর (সাঃ) – কে পান করতে দিলেন। দুধ পান করে তাঁরা পরবর্তী মনজিলের দিকে রওনা হলেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ) মদীনায় হিজরত-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন