সতরই জুলাই শেষ অংশ]

রাতে ভালো ঘুম এল না। ঘুমটা বারবার ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছিল। একবার ঘুমের মধ্যেই যেন … কী একটা গাছ দেখতে পেলাম, গাছটা বেশবড় । গাছ থেকে অনেক পাখি উড়ে গেল…সবুজ রঙের পাখি মনে হল…টিয়াপাখি মনে হল … দৃশ্যটা কেমন পরিচিত মনে হল …মনে হল বহুদিন আগে দেখেছি …
সতরই জুলাই ভোরবেলা ওয়াহেদ- এর ফোন পেলাম।
ওয়াহেদ বলল, আজ ফ্রি আছিস?
আছি। আমার কন্ঠস্বর কেমন ফ্যাঁসফ্যাঁসে শোনালো।
তাহলে চলে আয়।বলে গ্রিন রোডের এক বাড়ির ঠিকানা দিল ওয়াহেদ। আটাত্তর বাই বি । দুপুরের দিকে যেতে বলল ।
ঠিক আছে। কিন্তু শোন, তুই আমার টেলিফোন নাম্বার কই পেলি?
উত্তর না দিয়ে ফোনটা কেটে গেল ওয়াহেদ।
কেমন হতভম্ভ হয়ে গেলাম। প্রবল অস্বস্তি আমাকে ঘিরে ধরল। একবার মনে হল জাফর মিথ্যে বলেছে।আবার মনে হল তা কী করে হয়। জাফর- এর ভিজিটিং কার্ডটা বের করলাম। একবার মনে হল ওকে ফোন করি, সব খুলে বলি। পরক্ষণেই চিন্তাটা বাতিল করে দিলাম। আমি চাইনা জাফর আমায় পাগল ঠাওরাক।
কেমন ঘোরের মধ্যে সকালটা কাটল …
দুপুরের দিকে কোনওমতে নাকেমুখে কিছু গুঁজে ঘর থেকে বেরুলাম। গ্রিন রোডের ঠিকানাটা আমার পরিচিত না। তবে খুঁজে নিতে সমস্যা হবে না।ছুটির দিন। মেঘশূন্য ফিরোজা রঙের আকাশ ।
ঝরঝরে রোদ উঠেছে। ভীষণ নার্ভাস লাগছিল।অস্বস্তি এড়াতে সিএনজিতে একটা সিগারেট ধরালাম। তামাকের স্বাদ বিস্বাদ ঠেকল ।
সরু গলির ভিতরে অনেকটা হেঁটে শেষ পর্যন্ত বাড়িটা খুঁজে পেলাম। আটাত্তর বাই বি লেখা কালো রঙের লোহার গেট। দারোয়ান গোছের কাউকে দেখতে পেলাম না। কলিং বেলও নেই। ঠেলা দিতেই খুলে গেল। জানতাম খুলে যাবে। ওয়াহেদের ফোন পাওয়ার পর থেকেই কেমন রহস্যময় ঘটনা ঘটছে।জাফর- এর সঙ্গে এত বছর পর দেখা হয়ে যাওয়াটাও কি নিছক কাকতালীয়? এর মধ্যে কি অন্য ব্যাপার নেই? কিংবা নিউইয়র্কে জাফর-এর সঙ্গে ওয়াহেদ- এর দেখা হয়ে যাওয়াটা …
গেটটা অল্প ঠেলে ভিতরে পা দিলাম।অগোছালো মলিন বাগান অযত্নে পড়ে আছে।ওপাশে একটি দোতলা বাড়ি। এককালে হয়তো সাদা রং ছিল -এখন রং-টং উঠে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে । বেশ পুরনো বাড়ি। এ ধরনের বাড়ি তো ঢাকায় আজকাল ভেঙে ফেলে। কোন দৈববলে এটি দাঁড়িয়ে আছে কে জানে।
দোতলা বারান্দার গ্রিলে সবুজ রংকরা । একতলার গ্রিলের রঙও সবুজ। বাড়ির পিছনে বিশাল একটি কামরাঙাগাছে চোখ পড়তেই এক ঝাঁক টিয়া ফিরোজা রঙের আকাশে সবুজ চাদর বিছিয়ে উড়ে গেল …
একতলায় গ্রিল-বারান্দার একপাশে ছোট্ট একটি লোহার দরজা । বন্ধ। জানতাম ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে।ভিতরে ঢুকে শুকনো বকুল ফুলের গন্ধ পেলাম। বেশ বড় বারান্দা। কেমন ছায়া ছায়া। মেঝেতে সাদাকালো ক্ষয়ে যাওয়া মোজাইক । দেওয়াল ঘেঁষে কয়েকটি বেতের চেয়ার ।আর একটি টেবিল। টেবিলের ওপর একটি খবরের কাগজ ভাঁজ করে রাখা । তার পাশে একটি চায়ের কাপ।ধোঁয়া উড়ছিল। অ্যাশট্রে ভর্তি আধ- পোড়া সিগারেট। কেউ এখানে বসেছিল? ওয়াহেদ? না, অন্য কেউ?চারপাশ কেমন নির্জন হয়ে আছে। একটা কাক ডাকছিল। আমি এখানেই অপেক্ষা করব, না ভিতরে যাব ঠিক বুঝতে পারছি না। ওয়াহেদ কি সত্যিই আছে এ বাড়িতে? কিন্তু তা কি করে সম্ভব? জাফর তো …
হঠাৎই চোখে পড়ল জিনিসটা। টেবিলের ওপর একটা টিয়া পাখি। সবুজ রঙের, মাটির তৈরি। এত বছর পরও চিনতে পারলাম। ওয়াহেদ-এর জন্মদিনে এই মাটির টিয়াপাখিটাই ওকে উপহার দিয়েছিলাম।এত বছর পর এটা এখানে এল কিভাবে? ভাবতেই আমার শরীরে হিম ছড়িয়ে গেল। কপালের দু’পাশের শিরা দপদপ করতে লাগল। চোখের সামনে ঘন কুয়াশার সমুদ্র জেগে উঠছে …
কে যেন আমার কাঁধ স্পর্শ করে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে দিল।
ওয়াহেদ?
কেমন ভূতগ্রস্থের মতন আমি বাগানে নেমে এলাম।
একটু পর গলিতে বেরিয়ে এসে ভাবলাম … অশরীরী ওয়াহেদ কে দেখতে পাইনি ঠিকই … তবে ও আমার খুব কাছাকাছি এসেছিল…..

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!